সংবাদদাতা, জঙ্গিপুর: একই দিনে মর্মান্তিক মৃত্যু হল একরত্তি এক শিশুকন্যার ও তার বাবার। এই ঘটনা সামশেরগঞ্জের দেবীদাসপুরের। মেয়ের জন্মের পর থেকেই নইম আক্তার ও সুলেখা খাতুনের মধ্যে দাম্পত্য কলহের সূচনা। মনোমালিন্য চরমে পৌঁছলে স্ত্রীর কাছে ডিভোর্স চান নইম। কিন্তু বিচ্ছেদের পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছিল একরত্তি সুলাইমা খাতুন। গত রবিবার ঘুমন্ত সুলাইমাকে তুলে আছাড় মারে নইম। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে জঙ্গিপুর হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানেই তার মৃত্যু হয়। এদিকে রবিবার ঘটনার পর থেকেই নিখোঁজ ছিল নইম। গভীর রাতে তাঁর মৃতদেহ মেলে জয়কৃষ্ণপুর রেল লাইনের ধার থেকে।
মেয়ে জন্মের পর থেকেই দম্পতির মধ্যে অশান্তি শুরু হয়। শেষকালে স্ত্রীকে ডিভোর্সের কথা জানান যুবক। কিন্তু, একরত্তি মেয়ের কী হবে? স্বামী-স্ত্রীর বিচ্ছেদে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল বছর দেড়েকের সুলাইমা খাতুন। তাই সামশেরগঞ্জের দেবীদাসপুরে ঘরের মধ্যে ঘুমন্ত মেয়েকে আছাড় মারে বাবা। আশঙ্কাজনক অবস্থায় একরত্তিকে নিয়ে যাওয়া যাওয়া হয় জঙ্গিপুর হাসপাতালে। গত রবিবার দুপুরে ঘটনা এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়ায়। এই ঘটনার পর থেকে উধাও হয় বাবাও। গভীর রাতে বাবা নইম আক্তারের দেহ মেলে জয়কৃষ্ণপুরে রেল লাইনের ধারে। মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য জঙ্গিপুরে মহকুমা হাসপাতালের মর্গে পাঠায় পুলিশ। শিশুকন্যা ও স্বামীকে হারিয়ে শোকে বিহ্বল সুলেখা। সামশেরগঞ্জ থানার পুলিশ জানিয়েছে, দম্পতির মধ্যে পারিবারিক অশান্তি চলছিল। মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে মর্গে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
জানা গিয়েছে, আড়াই বছর আগে ঝাড়খণ্ড লাগোয়া ইসলামপুরের মেয়ে সুলেখা খাতুনের সঙ্গে দেবিদাসপুরের নইম আক্তারের বিয়ে হয়েছিল। মেয়ের জন্মের পর থেকেই তাঁদের মধ্যে অশান্তির শুরু। নইম ডিভোর্স চাইলেও কন্যা সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভেবে সুলেখা ডিভোর্স দিতে চাননি। মেয়েই যখন ডিভোর্সে বাধা, তখন মেয়েকেই সরিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত নেয় নইম। সুলেখা খাতুন বলেন, স্বামী আমার উপর অত্যাচার করত। আমাকে ঘর থেকে তাড়িয়ে দিত। মেয়েটার কী হবে বললে, সে ঘুমন্ত মেয়েকে তুলে পরপর দু’ বার মেঝেতে আছাড় দেয়।
পরিবারের কেউ এগিয়ে আসেনি। মেয়েকে উদ্ধার করে স্থানীয় লোকজনই মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে রেফার করা হয় বহরমপুরে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়ার পথেই মারা যায় মেয়েটি। মেয়ের মৃত্যু হয়েছে জানতে পেরে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে বাবা। রাতে জয়কৃষ্ণপুরে রেল লাইন থেকে তার ক্ষত বিক্ষত দেহ উদ্ধার হয়। সোমবার ময়নাতদন্তের পরের মেয়ের দেহ সুলেখা খাতুন নিয়ে যান ইসলামপুরে তাঁর বাপের বাড়িতে।