নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: উত্তরপ্রদেশ থেকে পেশাদার অপরাধী ভাড়া করে তমলুক থানার মিলননগরে সোনার দোকানে প্রায় ৫০লক্ষ টাকা ডাকাতির ঘটনা ঘটেছিল। ২২সেপ্টেম্বর সকাল ১০টা নাগাদ ডাকাতির ঘটনা ঘটেছিল। ৩০সেপ্টেম্বর মহাষ্টমীর দিন তমলুক থানার পুলিশ ওই ঘটনায় মূল ষড়যন্ত্রী দু’জনকে গ্রেপ্তার করেছে। ধৃতরা হল, পাঁশকুড়া থানার কৃষ্ণনগর গ্রামের বাপ্পাদিত্য বাগ ও তার প্রতিবেশী দিলীপ মাইতি। সেইসঙ্গে চোরাই সোনা কেনার অভিযোগে দাসপুরের বাসিন্দা শ্রীকান্ত মাজিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। সোনার দোকানে অপারেশনের পর তিন দুষ্কৃতী শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের খারুই হয়ে রূপনারায়ণ নদের বাঁধ বরাবর কোলাঘাট পেরিয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুরে ঢুকে গিয়েছিল। পথ দেখিয়ে নিয়ে গিয়েছিল ধৃত বাপ্পাদিত্য ও দিলীপ। পালানোর পথে প্রায় ৮০কিলোমিটার রাস্তায় ১৭২ সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পরীক্ষা নিরীক্ষা করে পুলিশ তিনজনকে পাকড়াও করেছে। আপাতত ধৃত তিনজন ছ’দিনের পুলিশ হেফাজতে তমলুক থানায় রয়েছে। পুলিশ তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
বাপ্পাদিত্য ও দিলীপ দু’জনে সোনার কাজে উত্তরপ্রদেশে থাকে। মাঝেমধ্যে তারা বাড়ি আসে। বাপ্পাদিত্যের সঙ্গে তমলুক থানার মিলননগরের স্বর্ণ ব্যবসায়ী পূর্ণ অধিকারীর পরিচয় রয়েছে। সেই সুবাদে বাপ্পাদিত্য ওই স্বর্ণ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে বেশকিছু টাকা ধার চেয়েছিল। কিন্তু, পূর্ণবাবু ধার বাবদ কোনও টাকা দেননি। এরপরই তাঁর উপর প্রতিশোধ নেওয়ার পরিকল্পনা করে বাপ্পাদিত্য। এজন্য উত্তরপ্রদেশ থেকে পেশাদার দুষ্কৃতীকে কাজে লাগায়। অপারেশনের কয়েকদিন আগে তাদের এলাকায় এনে মিলননগরে রেইকি করা হয়েছিল। তদন্তকারী অফিসারদের বক্তব্য, পূর্ণবাবুর সোনার দোকান দেখিয়ে দিয়েছিল বাপ্পাদিত্য নিজেই।
গত ২২সেপ্টেম্বর দোকানের কর্মচারী সুরজিৎ কর্মকার দোকান খুলে ধূপ জ্বালানোর মুহূর্তে তিনজন হুড়মুড়িয়ে ভিতরে ঢুকে পিছমোড়া করে বেঁধে আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে প্রায় ৫০লক্ষ টাকার গয়না নিয়ে চম্পট দেয়। পুলিস জেনেছে, অপারেশনের পর ওই তিন দুষ্কৃতী একটি স্কুটিতে চড়ে মিলননগর ছাড়ে। তাদের সামনে একটি বাইকে ছিল বাপ্পাদিত্য ও দিলীপ। রূপনারায়ণ নদের বাঁধ বরাবর কিছুটা এগনোর পর দুষ্কৃতীরা জামা বদল করে। পরস্পরের মধ্যে বাইক ও অদলবদল করে। তারপর পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুরে গিয়ে তারা সোনা ভাগাভাগি করে। বেশকিছু সোনার গয়না শ্রীকান্তকে বিক্রি করা হয়।
সিসি ক্যামেরার ফুটেজ চেকিং করে তমলুক থানার পুলিশ ওই ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন করতে সক্ষম হয়। ডাকাতির পর দুষ্কৃতীরা পালানোর সময় তাদের পথ দেখিয়ে সাহায্য করেছিল বাপ্পদিত্য ও দিলীপ জুটি। চোরাই সোনা ভাগের টোপ দিয়ে দিলীপকে ওই কাজে রাজি করেছিল বাপ্পাদিত্য। দোকানে ঢুকে অপারেশন চালানো তিন দুষ্কৃতী এখনও অধরা। তবে, পুলিশ মূল ষড়যন্ত্রকারীকে পাকড়াও করেছে। সেইসঙ্গে বেশকিছু চোরাই সোনাও উদ্ধার হয়েছে।
দুর্গাপুজোয় ব্যস্ততার মাঝেও তমলুক থানার পুলিশের একটি টিম মিলননগরের ওই ঘটনার রহস্য ভেদ করতে চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজে নেমেছিল। দুষ্কৃতীদের পালানোর প্রায় ৮০কিলোমিটার পথে ১৭২টি সিসি ক্যামেরার ফুটেজ চেক করা হয়েছে। তাতে ভিন রাজ্যের তিন দুষ্কৃতীকে পালানোর ক্ষেত্রে কীভাবে বাপ্পাদিত্য ও দিলীপ জুটি সাহায্য করেছে, তা উঠে আসে। ডাকাতির পরও ঘটনাস্থলের কাছাকাছি ছিল দু’জনে। তমলুক থানার আইসি সুভাষচন্দ্র ঘোষ বলেন, বাপ্পাদিত্য মূল ষড়যন্ত্রকারী। তাকে সহ মোট তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ভিন রাজ্যের তিন দুষ্কৃতীর খোঁজে তল্লাশি চলছে।-নিজস্ব চিত্র