• আজ কৃষ্ণনগরে কার্নিভাল
    বর্তমান | ০৪ অক্টোবর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: এবারের দুর্গাপুজো কার্নিভালে অংশ নিচ্ছে মোট ২১টি পুজো কমিটি। এর মধ্যে কৃষ্ণনগর শহরেরই রয়েছে ১৫টি কমিটি, আর বাকি ছ’টি এসেছে কোতোয়ালি, ভীমপুর, চাপড়া, ধুবুলিয়া ও নবদ্বীপ থেকে। আজ শনিবার কৃষ্ণনগর শহরে এই কার্নিভালের আয়োজন করা হয়েছে। প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, জেলার দূরবর্তী অঞ্চল থেকে প্রতিমা নিয়ে আসা প্রায়ই জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ। তাই এবছর শহরকেন্দ্রিক পুজোগুলির অংশগ্রহণকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

    কার্নিভালের শোভাযাত্রার রুটও বড় পরিবর্তন করা হয়েছে। গতবছর নেদেরপাড়া মোড় থেকে শুরু হয়ে শোভাযাত্রা এভি স্কুল মোড়, কোতোয়ালি থানার সামনে দিয়ে কদমতলা ঘাটে গিয়েছিল। কিন্তু, এবছর শোভাযাত্রা শুরু হবে সদরের মোড় থেকে। সেখান থেকে প্রতিমাগুলি যাবে ফোয়ারা মোড়, পোস্ট মোড় পেরিয়ে সরাসরি কদমতলা ঘাটে। প্রশাসনের মতে, এই পরিবর্তনের ফলে যানজট নিয়ন্ত্রণ সহজ হবে এবং দর্শনার্থীদের ভিড় সামলানো অনেকটা সুবিধাজনক হবে। পাশাপাশি কার্নিভালের গতিও বাড়বে। কারণ গত বছর রুট দীর্ঘ হওয়ায় অনেক সময় লেগেছিল কার্নিভাল শেষ হতে।

    কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাকওয়ানা মিতকুমার সঞ্জয়কুমার বলেন, কার্নিভাল নিয়ে সমস্তরকম আয়োজন করা হয়েছে। রুটের পরিবর্তন করা হয়েছে। 

    এই বিশাল আয়োজন ঘিরে শুক্রবার কৃষ্ণনগর প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে বসেন সমস্ত পুজো কমিটির প্রতিনিধি। নিরাপত্তা, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, শোভাযাত্রার সময়সূচি সব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এক প্রশাসনিক কর্তা জানান, এবার প্রচুর মানুষের সমাগম হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সেই কারণে শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে মোতায়েন থাকবে অতিরিক্ত পুলিশ ও ট্রাফিক ফোর্স। নিরাপত্তা এবং শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সমস্ত প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আজ, শনিবার, কৃষ্ণনগর শহর যেন রঙিন উৎসবের আবহে ভেসতে চলেছে। পুজো কমিটিগুলোর প্রতিমার শোভাযাত্রা, ঢাক-কাঁসরের বাদ্যি, আলো ঝলমলে সাজসজ্জা আর হাজারো মানুষের উল্লাস দেখা যাবে কার্নিভালে। একদিকে বিদায়ের বেদনা, অন্যদিকে আনন্দ আর উচ্ছ্বাস-এই দুইয়ের মেলবন্ধনেই তৈরি হয়েছে এক অনন্য আবহ। 

    শহরের প্রবীণ বাসিন্দা সঞ্জয় হালদার বলেন, মাদুর্গার বিদায় মানেই মনখারাপ। কিন্তু, এই কার্নিভাল আমাদের সেই মন খারাপের মধ্যেও আনন্দ এনে দেয়। প্রতিমার শোভাযাত্রা যেন আমাদের আবেগকে একত্র করে। তবে শুধু উৎসব নয়, এই কার্নিভাল কৃষ্ণনগরের ঐতিহ্যের সঙ্গেও গভীরভাবে যুক্ত। নবাব কৃষ্ণচন্দ্রের আমল থেকেই এই শহর শিল্প-সংস্কৃতির আঁতুড়ঘর। দুর্গাপুজোর কার্নিভাল সেই ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিক উৎসবের সেতুবন্ধন ঘটায়। কার্নিভাল তাই কেবল প্রতিমা নিরঞ্জনের শোভাযাত্রা নয়, কৃষ্ণনগরের গৌরব ও সংস্কৃতির বহিঃপ্রকাশও বটে। প্রতিমার মহামিছিল, মানুষের উচ্ছ্বাস এবং প্রশাসনের নিখুঁত আয়োজন একসঙ্গে মিলেমিশে শহরকে পরিণত করেছে উৎসবের প্রাণ কেন্দ্রে।
  • Link to this news (বর্তমান)