সংবাদদাতা, তেহট্ট: এক বালকের মৃত্যুর ঘটনায় তোলপাড় তেহট্ট। শুক্রবার তার জেরে ভাঙচুর, মৃতদেহ ছিনিয়ে নেওয়া, পুলিশের লাঠিচার্জ এমন একাধিক ঘটনার সাক্ষী রইল মহকুমা হাসপাতাল। বলতে গেলে গোটা তেহট্ট দাপিয়ে বেড়াল পুলিশ। ঘটনায় পাঁচজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। পরে হাসপাতাল সুপার বাপ্পাদিত্য ঢালির অভিযোগ ক্রমে ওই পাঁচজন সহ মোট সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ধৃত সাতজনের মধ্যে তিনজন পুরুষ ও চারজন মহিলা। তদন্ত শুরু হয়েছে।
স্থানীয় সুত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাতে তেহট্ট থানার গরিবপুরের এগারো বছরের অভিরূপ ঘোষ পাশের গ্রাম গোপালপুরে মামার বাড়ি গিয়েছিল। বৃহস্পতিবার রাত থেকে সে অসুস্থ বোধ করে। বাড়ির কেউ বুঝতে না পারায় তাঁকে হাসপাতালে আনতে দেরি হয়ে যায়। শুক্রবার ভোরবেলা তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন পরিবারের লোকজন। সেখানে কিছুক্ষণ পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এরপর সেই মৃতদেহ ময়নাতদন্তে পাঠানোর আগে হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়। বেলার দিকে হাসপাতাল মর্গ থেকে বালকটির মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য বের করা হলে পরিবারের লোকজন দাবি করে, ছেলেটি বেঁচে আছে। আবার তাঁরা অভিরূপের দেহ হাসপাতালের চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। সেখানে সবরকম পরীক্ষা করে চিকিৎসকরা বলেন, বালকটি অনেক আগেই মারা গিয়েছে। এটা শোনার পর অভিরূপের পরিবারের লোকজন সহ অন্যান্যরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তাঁরা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভাঙচুর চালান। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গ্রামীণ উত্তম ঘোষ, মহকুমা পুলিশ আধিকারিক শুভতোষ সরকার সহ বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। তাঁরা উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু পরিস্থিতি ক্রমশ হাতের বাইরে চলে যেতে থাকলে পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করে বলে অভিযোগ। এতে উত্তেজিত জনতা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে। হাসপাতাল এলাকা শান্ত হয়। রাজ্য সড়ক অবরোধ করতে পারে বলে পুলিশ রাজ্য সড়কেও সতর্ক থাকে। এরমধ্যে দেহটি যখন ময়নাতদন্তে পাঠানোর জন্য হাসপাতাল ও পুলিশ তৈরি হচ্ছিল, অভিযোগ সেই সময়ে বালকের দেহ নিয়ে অন্যত্র চলে যায় পরিবারের লোকজন। তার দেহ উদ্ধার করার জন্য বিশাল পুলিশ বাহিনী তল্লাশি শুরু করে। অবশেষে বালকের দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠানোর ব্যবস্থা করে পুলিশ। পরিবারের অভিযোগ, সঠিক চিকিৎসা না হওয়ায় তাঁদের ছেলের মৃত্যু হয়েছে। তাঁরা অভিযোগ করে বলেন, মর্গ থেকে যখন দেহ বের করা হয় তখন সে ইউরিন করেছে। তাই যখন মৃত ঘোষণা করা হয় তখনও সে বেঁচে ছিল। যদিও হাসপাতাল সুত্রে জানা গিয়েছে, এই ধরনের কোনও ঘটনা ঘটেনি। বালকটি অনেক আগেই মারা গিয়েছিল।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) উত্তম ঘোষ বলেন, আমরা সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছি। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।