জয়পুরের বৈতলে কাদাখেলায় মেতে উঠলেন হাজার হাজার মানুষ
বর্তমান | ০৪ অক্টোবর ২০২৫
সংবাদদাতা, বিষ্ণুপুর: জয়পুরের বৈতলে মল্লরাজাদের আমলে বলির রক্তের খেলা এখন কাদাখেলায় রূপান্তরিত হয়েছে। এবারও বিজয়া দশমীতে ঝগড়ভঞ্জনী মন্দির প্রাঙ্গণে হাজার হাজার পুরুষ ও মহিলা কাদাখেলায় মেতে উঠেছিলেন। প্রতিবছরের মতো যন্ত্রের সাহায্যে পুকুর থেকে জল তোলা হয়। মাটির বাঁধ দিয়ে মন্দির প্রাঙ্গণে জল ভর্তি করা হয়। সেখানেই কাদাখেলা হয়। পুণ্য অর্জন ও রোগব্যধি থেকে মুক্ত হওয়ার আশায় বৈতল সহ আশপাশের বিভিন্ন গ্রামের মানুষ কাদাখেলায় অংশ নেন।
ঝগড়ভঞ্জন মাতার মন্দিরের সেবাইত মানস সন্তকী বলেন, মল্লরাজার প্রতিষ্ঠিত এই মন্দিরে একসময় প্রচুর পাঁঠাবলি হতো। বলির রক্তে মন্দির প্রাঙ্গন কার্যত ভেসে যেত। ভক্তদের মধ্যে উন্মাদনা দেখা দিত। এখন বলি তেমন হয় না। তার বদলে কাদাখেলা প্রচলিত হয়েছে। সেই রীতি এখনও মেনে চলা হয়। এবারও প্রচুর মানুষ কাদাখেলায় অংশ নেন।
কথিত আছে, বিষ্ণুপুরের রাজা প্রথম রঘুনাথ মল্ল একবার বৈতল হয়ে যুদ্ধে যাচ্ছিলেন। গভীর রাতে যাওয়ার সময় বটগাছের তলায় এক বালিকার রূপে দেবী তাঁকে দেখা দেন। রাজা যুদ্ধে জয়ী হলে ফিরে এসে সেখানে মন্দির প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করেন। দেবীকে তুষ্ট করতে পুজোর সময় বলির রক্তে খেলা হবে বলেও মনস্থির করেন। সেইমতো ঝগড়ভঞ্জনী মাতার মন্দির প্রতিষ্ঠা হয়। পরবর্তীকালে মন্দিরে বলির সংখ্যা কমে যায়। তার বদলে কাদাখেলা শুরু হয়। বলির রক্ত জলে মিশিয়ে দেওয়া হয়। সেই জলেই কাদাখেলা আরম্ভ হয়।
প্রতিবছর মন্দির প্রাঙ্গণে বাঁধ দিয়ে স্থানীয় পুকুর থেকে জল এনে হাঁটুসমান ভর্তি করা হয়। সেখানেই কাদাখেলা হয়। ভক্তদের বেশিরভাগই একটি করে থালা নিয়ে আসেন। থালায় করে জল উপরের দিকে ছিটিয়ে দেন। সেই জল বৃষ্টির মতো মাথায় পড়ে। একে অপরের দিকেও জল ছিটানো হয়।
স্থানীয় শিক্ষক কার্তিক দাস বলেন, প্রায় ৪০০বছর আগে মল্লরাজাদের আমলে ঝগড়ভঞ্জনী মাতার মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই দেবী খুবই জাগ্রত। তিনি ঝগড়া প্রশমিত করে সবাইকে সৌভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করেন। আমরা ছোটবেলা থেকেই মন্দির প্রাঙ্গণে কাদাখেলা দেখে আসছি। নিজেরাও তাতে অংশ নিই। শিশু, মহিলা, পুরুষ সবাই কাদাখেলায় অংশ নেয়। • নিজস্ব চিত্র