লক্ষ্মীপুজোয় নতুন জামা পরবে অর্জুন, পুজোয় কাঁসর বাজিয়ে আয় ১৮০ টাকা আর চিপসের প্যাকেট
বর্তমান | ০৪ অক্টোবর ২০২৫
সুকান্ত বসু, কলকাতা; প্রতিমা জলে পড়তেই মামা ছোট্টু দাস ভাগ্নে অর্জুনকে বললেন, ‘তাড়াতাড়ি চল দমদমে। ট্রেন ধরতে হবে।’ দশমীর রাতে উত্তর কলকাতার চন্দ্রকুমার রায় লেনে রতনবাবু ঘাটে ছোট্টু এসেছিলেন চিৎপুরের এক বাড়ির বির্সজনে ঢাক বাজাতে। তাঁর ভাগ্নে ১৩ বছরের। সে কাঁসর বাজায়। ছোট্টু পুলিশকে জিজ্ঞেস করলেন দমদম যাবেন কোন রাস্তা ধরে। তারপর বললেন, ‘সেই তৃতীয়ায় বাড়ি থেকে বেরিয়েছি। এখন বাড়ি ফিরব। সবার জন্য নতুন জামা কিনব। লক্ষ্মীপুজোয় পরবে বাড়ির বাচ্চারা। কালীপুজোয় বাজাতে আবার আসব কলকাতায়।’ বলতে বলতে ঝোলায় হাত। মুড়ি-বাতাসা বের করে দিলেন ভাগ্নেকে। নিজেও খেলেন। এরপর কাশীপুর রোডের দিকে যাওয়ার সময় তাঁদের আটকালেন কয়েকজন যুবক। তাঁদের ক্লাবের প্রতিমা নিরঞ্জন হবে। ঢাকি লাগবে। ছোট্টুদের দেখে হাতে চাঁদ পেলেন যেন। কোনও আপত্তিতে পাত্তা না দিয়ে কার্যত পাঁজাকোলা করে তুলে নিয়ে চলে গেলেন প্যান্ডেলে। বললেন, ‘স্টেশনে আমরাই পৌঁছে দেব। চিন্তা নেই।’ কাঁসর হাতে মামার পিছন পিছন চলল অর্জুন। তার পা তখন আর চলছে না। খিদে পেয়েছে। পাঁচদিন প্রায় না ঘুমিয়ে চোখ জড়িয়ে আসছে। ছোট্টু বললেন, ‘দমদম স্টেশনে রাত কাটাতে হবে আজ। ভোরের ট্রেনে বাড়ি ফিরব। লক্ষ্মী নিজে এলে তাঁকে ফেরাতে নেই।’
প্রতিমা বিসর্জনের সময় ওই ঘুম চোখেই এমন কাঁসর বাজাল ১৩ বছরের অর্জুন যে, ঘাটে তাকে দেখতে হুড়োহুড়ি। প্রচুর বখশিশ ঢুকল হাফ শার্টের পকেটে। গঙ্গার ঘাটে থাকা কর্তব্যরত এক পুলিশকর্মী তাকে চা-বিস্কুট খাওয়ালেন। আর একজন দিলেন চিপসের বড় একটা প্যাকেট। এসব পেয়ে অর্জুন খুব খুশি। ক্লান্তি গেল ভুলে। একটা গোটা প্যাকেট চিপস খাওয়ার স্বপ্ন বহুদিন ধরে রয়েছে তার। সেটা এতদিনে পূরণ হল বলে, কোনও কষ্টই আর কষ্ট বলে মনে হচ্ছে না।
অর্জুনের বাবা খেতমজুর। অন্যের জমিতে দৈনিক মজুরিতে কাজ করেন। তাতে সংসার চলে না। পুজোতে কোনওবারই নতুন জামা জুটত না। তাই উত্তর ২৪ পরগনার হাসনাবাদের একটি প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে মামার সঙ্গে কলকাতায় আসতে হয় অর্জুন দাসকে। মামা ঢাক বাজান। অর্জুন ঢাকের সঙ্গে কাঁসর সঙ্গত করে। ছ’বছর বয়স থেকে ঢাক বাজাচ্ছে। গ্রামের মন্দিরে বাজানো দিয়ে শেখা শুরু। এখন হাত পেকেছে। গ্রামের বিভিন্ন পুজো থেকে ডাক পায়। ভালো করে শিখলে ঢাক শিখিয়ে দেবে মামা।
ক্লাবের বিসর্জন শেষ। গভীর রাতে স্টেশনে বসে দু’জনে। পকেট থেকে বের করে গুনে দেখল অর্জুন। মোট ১৮০ টাকা বখশিশ। এক প্যাকেট চাউমিন কিনেছে মামা। দু’জনে মিলে ভাগ করে খাচ্ছে। তাতে ভাজা ডিম ডুমো ডুমো করে ছড়ানো। তৃপ্তিতে চোখ মুদে আসছে ১৩ বছরের অর্জুনের।