বাংলার বিসর্জন বরদাস্ত করব না, ডিভিসি’র বিরুদ্ধে তোপ মমতার, মানুষকে ভোগাচ্ছে বিজেপি: অভিষেক
বর্তমান | ০৪ অক্টোবর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জেরে এখনও জলবন্দি দশা থেকে পুরোপুরি মুক্ত হয়নি দক্ষিণবঙ্গ। তারই মাঝে শুক্রবার রাত পর্যন্ত প্রায় দেড় লক্ষ কিউসেক জল ছাড়ল দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন (ডিভিসি)। যার জেরে দক্ষিণবঙ্গের একটি বড় অংশে (হাওড়া, হুগলি, পূর্ব বর্ধমান ও বাঁকুড়ার একটি অংশে) নতুন করে প্লাবনের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এই পর্বে রাজ্যকে না জানিয়ে জল ছাড়ার অভিযোগ তুলে ডিভিসি’র বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সাফ কথা, আগাম কোনও সতর্কতা না দিয়েই একতরফা সিদ্ধান্ত নিয়ে জল ছাড়া হয়েছে। উৎসবের মরশুমে বাংলার মানুষকে ইচ্ছাকৃত ভাবে বিপাকে ফেলা হচ্ছে। এটা প্রাকৃতিক বিপর্যয় নয়। ডিভিসি’র তৈরি বিপর্যয়। ক্ষুব্ধ মমতার হুঙ্কার, কাউকে বাংলায় বিসর্জনের পরিস্থিতি তৈরি করতে দেব না। সর্বশক্তি দিয়ে এই চক্রান্তের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াব। সত্যের জয় এবং দুস্টের দমন হবেই।
এই নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও সুর সপ্তমে তুলেছেন। তাঁর কথায়, প্রতিবছরই ডিভিসির কারণেই এই ম্যান-মেড দুর্যোগ ঘটে। যেহেতু সামনে নির্বাচন, তাই ওরা বারবার এমন ঘটনা ঘটাচ্ছে, এমনকি দুর্গাপুজোর সময়ও রেহাই দেয়নি। ওরা মানুষের জীবনকে মারাত্মক বিপদের মুখেফেলছে। এটাই বিজেপির স্বভাব। বিসর্জন অবশ্যই হবে, তবে সেটা বাংলা বা বাংলার মানুষের নয়। বিসর্জন হবে বিজেপির। ২০২৪ সালে ঠিক যেমনটা ঘটেছিল, ২০২৬ সালে বাকি হিসেবও চুকিয়ে দেওয়া হবে। এই আবর্তেই তৃণমূল সূত্রের খবর, পুজোর-উৎসব পর্ব শেষ হওয়ার পর ডিভিসি বিরোধী বড়সড় আন্দোলন শুরু করা হবে।
ডিভিসির দুই জলাধার পাঞ্চেত ও মাইথন থেকে বিপুল পরিমাণ জল ছাড়া হচ্ছে। শুক্রবার সকালে মোট ৬৫ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হচ্ছে বলে জানানো হয় ডিভিসি‘র তরফে। জল ছাড়ার কারণ হিসেবে ফের শিখণ্ডী খাড়া করা হয়েছে ঝাড়খন্ডের ভারি বৃষ্টিপাতকে। যদিও দীর্ঘদিন ড্রেজিং না হওয়ায় নাব্যতা কমেছে জলাধারগুলির। ডিভিসির ছাড়া এই বিপুল জলরাশি যে দক্ষিণবঙ্গকে ফের বানভাসি করবে, সেটা আঁচ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী নিজেও। তাঁর কালীঘাটের বাড়িতে বিজয়ার শুভেচ্ছা জানাতে আসা হাওড়া, হুগলি, মেদিনীপুর সহ দক্ষিণবঙ্গের বেশ কয়েকটি জেলার বিধায়ক-সাংসদদের তখনই নিজ নিজ এলাকায় ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। আরামবাগ, খানাকুল, আমতা, উদয়নারায়নপুরের মতো বন্যাপ্রবণ এলাকাগুলিতে বিশেষ নজর দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মমতা। তাঁর নির্দেশ মেনে সেচ, কৃষি ও বিপর্যয় মোকাবিলা সচিবকে সঙ্গে নিয়ে জেলাশাসকদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করে ত্রাণ সামগ্রী সহ সমস্ত প্রস্তুতি তৈরি রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন মখ্যসচিব মনোজ পন্থ। বিসর্জন নিয়েও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে রাজ্যকে না জানিয়ে কোনও মতেই যাতে জল না ছাড়া হয়, এই বিষয়টিও ডিভিসি’র সঙ্গে কথা বলে সুনিশ্চিত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সেচ সচিব মনীশ জৈনকে। যোগাযোগ করা হলে ডিভিসি রেগুলেশন কমিটির মেম্বার সেক্রেটারি সঞ্জীবকুমার বলেন, মাইথন ও পাঞ্চেত থেকে মোট ৭০ হাজার কিউসেক হারে জল এখন ছাড়া হচ্ছে। তবে আবহাওয়া দফতরের তরফে ঝাড়খণ্ডে ফের ভারী বর্ষণের সতর্কতা জারি করায়, শঙ্কা আরও বাড়ছে বাংলায়। -ফাইল চিত্র