• নিরঞ্জনের ভিড়ে ক্যামেরা হাতে বিদেশিরা, একাদশীতেও মণ্ডপমুখী জনতা
    বর্তমান | ০৪ অক্টোবর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: একাদশীর দুপুর থেকে বাবুঘাট, জাজেস ঘাট, বাগবাজার ঘাটে প্রতিমা নিরঞ্জন শুরু। মোটা দড়ি দিয়ে টেনে দুর্গা প্রতিমা নিয়ে যাওয়া হচ্ছে গঙ্গায়। সঙ্গে সঙ্গে ক্রেনের মাধ্যমে তা উঠিয়েও নেওয়া চলছে। গোটা বিষয়টি কতকটা বিস্ময়ের সঙ্গে কতকটা মুগ্ধ চোখে দেখছেন সত্তর বছরের বৃদ্ধ-বৃদ্ধা। ওঁরা দশমীর দিন স্কটল্যান্ড থেকে এসে নেমেছেন কলকাতায়। দুই বিদেশি জানতেন না যে, এই শহরে এমন উত্সবে চলে শরৎকালে। জেটল্যাগ কাটতে কাটতে শুক্রবার। তারপর দুপুরেই লোকের মুখে পুজোর কথা শুনে চলে এসেছেন বাবুঘাট। তাঁদের নাম, অ্যালিস্টান ও আলাস্টার। বললেন, ‘ইটস অ্যামেজিং!’

    একদিকে যখন প্রতিমা ভাসানপর্ব চলছে তখন কলকাতার উত্তর থেকে দক্ষিণ ঠাকুর দেখা চলেছে দেদার। টালা প্রত্যয় কিংবা দক্ষিণের ত্রিধারা, সর্বত্র এদিনও ঠাকুর দেখার ভিড়। দশমীতে ইতালি থেকে মুদিয়ালিতে চলে এসেছিলেন দুই তরুণী, এলেওনোরা ও বেয়াত্রিচ। একেবারে বাঙালি ঢঙে ঢাকের তালে দুলে তাঁরা মেতে উঠেছিলেন সিঁদুর খেলায়। লাল সিঁদুরে রেঙে উঠে তাঁরা আপন করে নিলেন কলকাতাকে। আর বলে গেলেন, উত্সবের শহরে আবারও ফিরে আসবেন। স্কটল্যান্ডের অ্যালিস্টান ও আলাস্টার আবার নিরঞ্জন প্রক্রিয়া দেখে অবাক। তাঁরা বলেন, ‘আমদের বয়স হয়ে গিয়েছে। অত ভিড় হয়তো নিতেও পারতাম না। তাই এই সময়টাই ভালো।’ সমস্ত প্রক্রিয়া দেখে তাঁদের প্রশ্নের শেষ নেই। গালে কেন লাল সিঁদুর? প্রতিমা কি ভেসে চলে যাচ্ছে? এইসব জানতে জানতেই প্রবল গরমে তাঁরা আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছেন না। ভাসান হয়ে যাওয়া ঠাকুরের কাঠামো যখন ক্রেন দিয়ে উপরে তোলা হচ্ছে, আলাস্টার স্মার্টফোন নিয়ে এগিয়ে চলেছেন ছবি তুলতে। আর অ্যালিস্টান বলছেন, ‘ইটস লাইক আ হরর ফিল্ম।’ মানুষের মতো কাঠামো এভাবে তোলা হচ্ছে তাও আবার পরিবেশরক্ষার কারণে, এসব জেনেই তাঁরা আপ্লুত। 

    এরপর বিকেল হতেই স্পেন থেকে একদল পর্যটক এসে হাজির। তাঁরা দোভাষী নিয়ে এসেছিলেন। পুরো বিষয়টি বুঝে নিচ্ছিলেন তাঁর থেকে। আর অনেক বাঙালি অনেক ভেবে বুঝেছিলেন, একাদশী হতে পারে ঠাকুর দেখার উপযুক্ত সময়। তাই মেঘলা আবহাওয়ায় টালা থেকে ত্রিধারা, এদিনও ঠাকুর দেখতে নেমে পড়েছিলেন বহু মানুষ। মণ্ডপে প্রবেশ করার আগে স্বেচ্ছাসেবকদের কাছে প্রশ্ন, ‘মণ্ডপ খোলা আছে তো?’ উত্তর ‘হ্যাঁ’ আসতেই এগিয়ে গেলেন। ৬৬ পল্লি, বাদামতলা, চেতলা, সুরুচি সর্বত্র এদিন দর্শনার্থীদের আনাগোনা ছিল চোখে পড়ার মতো।  

    সবমিলিয়ে ছোটগল্পের মতো ‘শেষ হয়েও, হইল না শেষ’। দশমী হয়ে গেলেও উত্সবের রেশ এখনও কাটল না কলকাতার। তাই প্রতিমা যতক্ষণ মণ্ডপে রয়েছে ততক্ষণই আনন্দ খুঁটে নিতে প্রস্তুত বাঙালি। এখনও মণ্ডপ ঘিরে জ্বলছে আলো, ভেসে আসছে গানের সুর, খোলা রয়েছে দোকানগুলোও। ভিড় কমেছে। তবে উত্সবকে জিইয়ে রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সকলেই।
  • Link to this news (বর্তমান)