টানা ১৮ দিন ধরে একের পর এক ট্রেন বাতিল, ভোগান্তিতে যাত্রীরা
দৈনিক স্টেটসম্যান | ০৪ অক্টোবর ২০২৫
দুর্গাপুজো শেষে ফের রেলের বড়সড় কাজ শুরু হচ্ছে। বর্ধমান-দুর্গাপুর শাখায় ইন্টারলকিং-এর কাজ চলবে টানা আঠারো দিন। রেলের পক্ষ থেকে শুক্রবারই এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, আগামী ৬ অক্টোবর থেকে ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত একাধিক দূরপাল্লার ট্রেন বাতিল রাখা হবে। এছাড়া, কিছু ট্রেন ঘুরিয়ে দেওয়া হবে অন্য রুটে। ফলে যাত্রীদের ব্যাপক সমস্যায় পড়তে হবে।
ইতিমধ্যেই ঘোষিত তালিকা অনুযায়ী, ১৭ অক্টোবর থেকে ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত বিভিন্ন দিনে বাতিল হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ বহু দূরপাল্লার ট্রেন। এর মধ্যে রয়েছে ধানবাদ-হাওড়া কোলফিল্ড এক্সপ্রেস, হাওড়া-গোয়ালিয়র চম্বল এক্সপ্রেস, কলকাতা-অমৃতসর দুর্গিয়ানা এক্সপ্রেস, কলকাতা-নাঙাল ড্যাম গুরুমুখী সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস, কলকাতা-দারভাঙ্গা মৈথিলী এক্সপ্রেস, শিয়ালদহ-আনন্দবিহার সম্পর্ক ক্রান্তি এক্সপ্রেস, ভোপাল-হাওড়া এক্সপ্রেস-সহ আরও একাধিক দূরপাল্লার গাড়ি।
শুধু দূরপাল্লার ট্রেনই নয়, একাধিক মেমু এবং আন্তঃশহর ট্রেনও বিভিন্ন দিনে বাতিল থাকবে। সেই তালিকায় রয়েছে বর্ধমান-আসানসোল, আসানসোল-দুর্গাপুর, বর্ধমান-অণ্ডাল শাখার বেশ কয়েকটি লোকাল ট্রেনও নির্দিষ্ট দিনে বন্ধ থাকবে। সিউড়ি, লালকোঁয়া-হাওড়া রুটের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ট্রেনও বাতিল করা হচ্ছে। কিছু ট্রেনের ক্ষেত্রে একটানা চার দিন পরিষেবা বন্ধ থাকবে।
রেল দপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই ইন্টারলকিং কাজ সম্পূর্ণ হলে ভবিষ্যতে ট্রেন চলাচল আরও মসৃণ হবে এবং দুর্ঘটনার সম্ভাবনা অনেকাংশে কমবে। কিন্তু যাত্রীদের প্রশ্ন, ‘উৎসবের মরশুমে কেন এত দিনের জন্য কাজ নির্ধারণ করা হল?’
টানা ১৮ দিন ধরে পরপর একাধিক ট্রেন বাতিল হওয়ায় যাত্রীদের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। প্রতিদিন অফিসযাত্রী থেকে শুরু করে দীর্ঘ দূরত্বের যাত্রীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। রেলের পক্ষ থেকে পরিষ্কারভাবে বাতিলের কারণ জানানো না হলেও কর্মরত আধিকারিকদের দাবি, লাইনের মেরামতি কাজ ও প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
ট্রেন বাতিল হওয়ায় সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন দৈনিক যাত্রীরা। সকালবেলায় কর্মস্থলে পৌঁছনো তো বটেই, রাতের ফেরার সময়ও ট্রেনের অনিশ্চয়তার কারণে দীর্ঘক্ষণ প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। যাত্রীদের একাংশের অভিযোগ, ‘প্রতিদিনই ট্রেন বাতিল হচ্ছে, অথচ তার আগাম কোনও হদিশ দেওয়া হচ্ছে না। অনেক সময় ঘোষণা করতেই দেরি হচ্ছে, ফলে বিকল্প ব্যবস্থা করাও কঠিন হয়ে যাচ্ছে।’
শুধু কর্মস্থলেই নয়, পরীক্ষার্থী, রোগী কিংবা দূরপাল্লার যাত্রীরা পড়ছেন অস্বস্তিতে। বহু যাত্রী বাধ্য হয়ে বাস কিংবা গাড়ির উপর নির্ভর করছেন। এতে যেমন যাত্রা দীর্ঘ হচ্ছে, তেমনই খরচও বেড়ে যাচ্ছে বহুগুণ। বিশেষ করে দূরপাল্লার যাত্রীদের বক্তব্য, ‘আগেভাগে টিকিট কেটে রাখা সত্ত্বেও হঠাৎ ট্রেন বাতিল হয়ে যাওয়ায় অন্য উপায়ে যাত্রা করা ছাড়া আর কোনও উপায় থাকে না।’
রেলের একাংশের দাবি, চলতি সময়ে লাইনের বড়সড় সংস্কারের কাজ চলছে, যার ফলে বেশ কয়েকটি রুটে ট্রেন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। তবে যাত্রীরা প্রশ্ন তুলেছেন, ‘যদি রক্ষণাবেক্ষণই হয়, তা হলে কেন সময়সূচি অনুযায়ী আগাম জানানোর ব্যবস্থা নেই?’
টানা দেড় সপ্তাহের বেশি সময় ধরে এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ যাত্রীদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। বহু যাত্রীই রেলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেছেন, ‘এভাবে চলতে থাকলে প্রতিদিনের যাত্রা করা কার্যত দুঃস্বপ্ন হয়ে দাঁড়াবে।’
যাত্রীদের আশঙ্কা, সামনে উৎসবের মরশুমে যদি এই সমস্যা চলতেই থাকে, তা হলে দুর্ভোগ আরও মারাত্মক আকার নেবে। নিত্যযাত্রী থেকে শুরু করে দূরপাল্লার যাত্রীরা স্পষ্ট জানাচ্ছেন, এই টানা বাতিলের কারণে তাঁদের চরম ভোগান্তি হবে। বিকল্প যানবাহনের ভাড়া যেমন বাড়বে, তেমনি সময়ও নষ্ট হবে বহুগুণ। যাত্রী সংগঠনের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই দাবি উঠেছে, বাতিল হওয়া ট্রেনগুলির বিষয়ে পর্যাপ্ত প্রচার ও আগাম বিজ্ঞপ্তি নিশ্চিত করতে হবে রেলের তরফে, নইলে যাত্রী দুর্ভোগ আরও বেড়ে যাবে।