দিল্লি-কলকাতা দ্বন্দ্বে জলছাড়ার আতঙ্ক! দুর্গাপূজার মাঝেই পশ্চিমবঙ্গে বানভাসি পরিস্থিতি সৃষ্টি করার অভিযোগ তুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়...
আজকাল | ০৪ অক্টোবর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: দুর্গাপূজার আনন্দমুখর পরিবেশে হঠাৎই আতঙ্কের ছায়া। দমোদর ভ্যালি কর্পোরেশন (ডিভিসি)- এর একতরফা ও ইচ্ছাকৃত জলছাড়ার সিদ্ধান্তে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় হু হু করে বাড়ছে বন্যার আশঙ্কা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, "ডিভিসি আজ সন্ধ্যার মধ্যে মাইথন ও পঞ্চেত বাঁধসহ বিভিন্ন উৎস থেকে ১ লক্ষ ৫০ হাজার কিউসেকের বেশি জল ছেড়েছে। এর ফলে উৎসবের সময়ে আমাদের রাজ্যকে বানভাসি করে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। এটা পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র, যার উদ্দেশ্য লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনে দুর্যোগ নামিয়ে আনা।"
প্রতিবছর বর্ষাকালে বাঁধ থেকে জল ছাড়া হলে হাওড়া, হুগলি, পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, বাঁকুড়া, পুরুলিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু এই বছর শারদোৎসবের মধ্যেই হঠাৎ এত বিপুল জল ছাড়া মানুষের মধ্যে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। বহু জেলায় পুজোর মণ্ডপ ও আশপাশের এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সাধারণ মানুষ বলছেন, "দুর্গাপুজোয় গ্রামের পর গ্রামে আলো ঝলমলে মণ্ডপ তৈরি হয়েছে। এখন যদি জল ঢুকে পড়ে, তাহলে সব ভেসে যাবে।"
মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রকে কটাক্ষ করে বলেন, "এটা একেবারেই লজ্জাজনক, অগ্রহণযোগ্য। আমরা দৃঢ়ভাবে প্রতিবাদ জানাই। দুর্গাপূজার সময় লক্ষ লক্ষ মানুষের মনে যন্ত্রণা ঢুকিয়ে দেওয়ার এ এক চক্রান্ত।" তৃণমূলের অভিযোগ, কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণাধীন ডিভিসি ইচ্ছে করেই রাজ্যে বিপর্যয় তৈরি করছে।
অন্যদিকে, প্রশাসনিক মহল জানিয়েছে, জলছাড়ার কারণে দামোদর অববাহিকার একাধিক এলাকা ইতিমধ্যেই প্লাবনের মুখে। রাজ্য সরকার জরুরি বৈঠক ডেকে পরিস্থিতি মোকাবিলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। নবান্ন সূত্রে খবর, সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনগুলোকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং প্রয়োজনে ত্রাণশিবির খোলার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে।
পূর্ব বর্ধমানের গলসী ও কালনার বিস্তীর্ণ এলাকায় নদীর জল বাড়তে শুরু করেছে। বাঁকুড়ার সোনামুখী, বিষ্ণুপুরে দামোদর ও শাখানদীগুলির জলস্তর দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। কৃষকরা আতঙ্কিত। কারণ এর জেরে সদ্য রোপণ করা ধান, সবজি ফসল ভেসে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
দুর্গাপূজার আনন্দঘন দিনে এই আকস্মিক জল ছাড়া বাঙালির উৎসবকে বড়সড়ভাবে ব্যাহত করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, ডিভিসির জল ছাড়ার সময় ও পরিমাণ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই কেন্দ্র-রাজ্য দ্বন্দ্ব চলছে। কিন্তু পুজোর সময় এহেন বিপুল পরিমান জল ছাড়া সত্যিই উদ্বেগজনক।
দুর্গাপূজার ঠিক মাঝখানে ডিভিসির এই জল ছাড়ায় পশ্চিমবঙ্গে বন্যার আশঙ্কা তীব্র। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একে ‘ষড়যন্ত্র’ আখ্যা দিয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। ইতিমধ্যেই একাধিক জেলায় সতর্কতা জারি হয়েছে।
প্রসঙ্গত, আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, আজ একাদশীতে দক্ষিণবঙ্গের প্রায় সব জেলাতেই কম বেশি বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টি চলবে। দুই মেদিনীপুর, দুই বর্ধমান, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়ার মতো জেলাগুলিতে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। কয়েকটি জেলায় অতি ভারী বৃষ্টির সতর্কতাও রয়েছে।
আগামীকাল অর্থাৎ দ্বাদশীতেও (৪ অক্টোবর, ২০২৫) দক্ষিণবঙ্গের বেশ কয়েকটি জেলায় ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। শনিবার বীরভূম এবং মুর্শিদাবাদের দু-একটি জায়গায় ভারী বৃষ্টি হবে। সেখানে হলুদ সতর্কতা জারি করা হয়েছে।