ফের মুর্শিদাবাদে বোমা বিস্ফোরণ, মৃত ১, নিখোঁজ একাধিক
আজকাল | ০৪ অক্টোবর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: ডোমকলের ঘোড়ামাড়া এলাকায় বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় এক মহিলার মৃত্যুর ২৪ ঘন্টা কাটতে না কাটতেই ফের একবার বোমা বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল মুর্শিদাবাদের রেজিনগর থানা এলাকা।
শুক্রবার গভীর রাতে মুর্শিদাবাদের রেজিনগর থানার ছেতিয়ানি–ঘোষপাড়া এলাকার একটি জঙ্গল ঘেরা মাঠ সংলগ্ন নির্মীয়মান বাড়ির মধ্যে বসে বোমা বাঁধার কাজ করছিল বেশ কয়েকজন দুষ্কৃতী। সেই সময়ে অসাবধানতাবশত বেশ কয়েকটি বোমা ফেটে যায় বলে স্থানীয় গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন। এই ঘটনায় তকিপুর এলাকার বাসিন্দা ওসমান শেখ নামে বছর চল্লিশের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়। তবে শনিবার দুপুর পর্যন্ত ওই ব্যক্তির মৃতদেহ পুলিশ খুঁজে পায়নি। পুলিশের অনুমান বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় মৃত ওই ব্যক্তির দেহ রেজিনগরেরই কোনও এলাকায় পুঁতে দিয়েছে তার সহযোগীরা। মৃতদেহের সন্ধানে পুলিশ বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশি চালাচ্ছে। এসডিপিও (বেলডাঙা) উত্তম কুমার গড়াই বলেন, ‘স্থানীয় সূত্রে আমরা জানতে পেরেছি বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু তার দেহ এখনও আমরা খুঁজে পাইনি। এই ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে।’
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার গভীর রাতে ছেতিয়ানি–ঘোষপাড়া এলাকায় একটি মাঠের পাশে নির্মীয়মান বাড়ির মধ্যে বসে বোমা বাঁধছিল মির্জাপুর এবং তকিপুর এলাকার বেশ কিছু দাগি দুষ্কৃতী। সেই সময় কোনওভাবে ওই বাড়ির মধ্যে একটি দেশি বোমা ফেটে যায়। সেই বোমার অভিঘাতে ঘরের মধ্যে মজুত করে রাখা আরও একাধিক বোমা ফাটে বলে স্থানীয় গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন। বোমা বিস্ফোরণে ওই বাড়ির একাংশ ভেঙে পড়েছে বলে জানা গিয়েছে। শনিবার সকালে ওই এলাকায় পৌঁছে স্থানীয় বাসিন্দারা দেখতে পান বিস্ফোরণ স্থলে ওই বাড়ির মধ্যে প্রচুর রক্ত পড়ে রয়েছে।
এর পাশাপাশি ওই বাড়ির আশপাশ থেকে মাটির মধ্যে পুঁতে রাখা কয়েকটি প্লাস্টিকের জেরিক্যান থেকে প্রায় শতাধিক সুতলি বোমা উদ্ধার হয়েছে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা দাবি করেছেন। ইতিমধ্যেই পুলিশের তরফ থেকে বম্ব ডিসপোজাল স্কোয়াডকে খবর দেওয়া হয়েছে, বোমাগুলি উদ্ধার করে সেগুলো নিষ্ক্রিয় করার জন্য।
নুর আলম শেখ নামে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় মৃত ওই ব্যক্তির এক আত্মীয় দাবি করেন, ‘উসমানকে কয়েকজন লোক মির্জাপুর থেকে ডেকে এনেছিল। কিন্তু কী কারণে তাঁকে ছেতিয়ানি–ঘোষপাড়া এলাকায় ডাকা হয়েছিল আমরা জানতাম না। আমরা শুনেছি ইতিমধ্যে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। আমরা সকলকে তাঁর দেহটি ফিরিয়ে দেওয়ার আবেদন করছি।’ স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, উসমান ছাড়াও ওই নির্মীয়মান বাড়ির মধ্যে গতকাল রাতে কমপক্ষে ৬–৭ জন ব্যক্তি উপস্থিত ছিল। তাঁরা সকলেই এলাকায় পরিচিত বোমা তৈরির কারিগর হিসেবে।
জেলা পুলিশের এক শীর্ষ আধিকারিক বলেন, যে এলাকায় বোমা তৈরির কাজ চলছিল তার ঠিক কাছেই একটি বেসরকারি কোম্পানির কয়েক একর পরিত্যক্ত জমি রয়েছে। বেশ কিছুদিন ধরে সেই জমি বেআইনিভাবে কিছু মানুষ দখল করে নিচ্ছেন। জমির দখলকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি ওই এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনার পর পুলিশের তরফ থেকে সমস্ত পক্ষকে ওই জমিতে প্রবেশ করতে নিষেধ করা হয়েছিল। পুলিশের অনুমান বেআইনিভাবে ওই জমি দখল করার জন্যই বোমা মজুত করা হচ্ছিল।
রেজিনগরের তৃণমূল বিধায়ক রবিউল আলম চৌধুরী বলেন, ‘স্থানীয় মানুষদের থেকে আমি শুনেছি বোমা তৈরির সময় একজন ব্যক্তি মারা গিয়েছেন এবং আরও কয়েকজন আহত হয়েছেন। তবে নিহত বা আহত কাররই সন্ধান এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি বলেই আমি জানতে পেরেছি। পুলিশকে অনুরোধ করা হয়েছে এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।’
অন্যদিকে জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ডোমকলে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহত ছিদ্দতন খাতুনের স্বামী গফুর মণ্ডলকে বাড়িতে বোমা মজুত করে রাখার অভিযোগে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। শুক্রবার গফুরের বাড়ির একটি ঘরে মজুত করে রাখা বোমা ফেটে মৃত্যু হয় তার দ্বিতীয় স্ত্রী ছিদ্দতন খাতুনের। তারপর থেকে সন্ধান মিলছে না গফুরের প্রথম এবং দ্বিতীয় পক্ষের ছেলেদের।