শেখর চন্দ্র, আসানসোল: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হুঁশিয়ারির পরেও জল ছাড়ার বিরাম নেই। শনিবার সকালেও ৭০ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে বলেই খবর। এদিকে, পুজোর ছুটিতে যে পর্যটকরা মাইথনে এসেছেন, তাঁদের কাছে টইটুম্বর মাইথন ড্যাম এবং ড্যামের জল ছাড়ার দৃশ্য যেন বাড়তি পাওনা। তবে এই ছবি যে উদ্বেগেরও সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কারণ, ‘বিনা নোটিসে’ ডিভিসি জল ছাড়ার ফলে ফের দক্ষিণবঙ্গে নানা জেলায় প্লাবনের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
পুজোর মধ্যে দফায় দফায় বৃষ্টি হয়েছে। রয়েছে নিম্নচাপের ভ্রুকুটিও। তার মধ্যেই ডিভিসি যেভাবে বাঁধ থেকে জল ছাড়ছে, তাতে বন্যার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। শুক্রবার মাইথন থেকে ৪২ হাজার ৫০০ কিউসেক ও পাঞ্চেত থেকে ২৭ হাজার ৫০০ কিউসেক হারে জল ছাড়া শুরু হয়। শনিবার সকালেও সেই পরিমাণে কোনও পরিবর্তন হয়নি। এদিন সকাল থেকে মাইথন ড্যাম জল ছাড়া শুরু হয় ৩২ হাজার ৫০০ কিউসেক হারে। পাঞ্চেত জল ছাড়া শুরু করে ৩৭ হাজার ৫০০ কিউসেক হারে। সবমিলিয়ে এখনও পর্যন্ত মোট ৭০ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। শুক্রবার X হ্যান্ডেলে জোড়া পোস্টে ডিভিসিকে একহাত নেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, “এটি কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, এটি ডিভিসির তৈরি করা বিপর্যয়। আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমি কাউকে বাংলার বিসর্জন করতে দেব না। আমাদের জনগণের বিরুদ্ধে প্রতিটি ষড়যন্ত্র পূর্ণ শক্তি দিয়ে প্রতিহত করব।”
তৃণমূল সূত্রে খবর, যেভাবে রাজ্যের মনোভাবকে উপেক্ষা করে ডিভিসি জল ছেড়েই চলেছে, তা নিয়ে এবার হেস্তনেস্ত চাইছে শাসকদল। লক্ষ্মীপুজো মিটলে এ ব্যাপারে আন্দোলনে নামার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। ঘেরাও করা হতে পারে কলকাতার ডিভিসি টাওয়ারও। এ নিয়ে সরব হন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ও সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তাঁর বক্তব্য, “ডিভিসি প্রতি বছরই ম্যান-মেড ফ্লাড করে থাকে। এবার যেহেতু নির্বাচন ঘনিয়ে এসেছে, তাই তারা ফের একই কাজ করছে এবং দুর্গাপুজোকেও ছাড় দেয়নি। মানুষের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে।” যদিও ডিভিসি কর্তৃপক্ষের দাবি, তারা নিজেদের ইচ্ছেমতো জল ছাড়ে না। সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশন বা CWC যেভাবে নির্দেশ দেয় সেই পরিমাণেই জল ছাড়া হয়। ঝাড়খণ্ডে বৃষ্টি হওয়ায় মাইথন এবং পাঞ্চেতের জলস্তর বিপদসীমার কাছাকাছি কিনা দেখা হয়। সেই অনুযায়ী সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশন যেমন নির্দেশ দেয়, সেই অনুযায়ী জল ছাড়া হয়।