ঠিক যেন ইতিহাসের নিদর্শন, ঠাকুরপুকুর এসবি পার্ক সর্বজনীনের প্রতিমা সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত রাজ্যের
প্রতিদিন | ০৪ অক্টোবর ২০২৫
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মর্ত্য ছেড়ে কৈলাসের পথে পাড়ি দিয়েছেন উমা। তবে ব্যতিক্রম ঠাকুরপুকুর এসবি পার্ক সর্বজনীনে। কারণ, এবারও প্রতিমা নিরঞ্জন নয়। গত বছরের তা সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত রাজ্য সরকারের। এবার রবীন্দ্র সরোবরের ‘মা’ সংগ্রহশালায় প্রতিমা সংরক্ষণ করা হবে। এর আগে গত বছর বেহালার চাঁদের হাটে প্রতিমা সংরক্ষণ করা হয়। রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তে উচ্ছ্বসিত পুজো কমিটির সদস্যরা।
৫৫ তম বর্ষে ঠাকুরপুকুর এসবি পার্ক সর্বজনীনের এবারের থিমে উঠে আসে মোগলমারি। ‘প্রত্নকথা’ থিমে তৈরি মণ্ডপের শিল্পী রাজু সরকার। মোগলমারি অঞ্চলের মাটির তলায় কথা বলে ইতিহাস। খননে উঠে এসেছে একের পর এক বৌদ্ধমূর্তি। কোনওটা ধ্যানমুদ্রা, কোনওটা অভয়মুদ্রা। কেন মোগলমারিকেই থিম হিসাবে ভাবেন পুজো উদ্যোক্তারা। এ প্রসঙ্গে এস বি পার্ক দুর্গাপুজোর কর্মকর্তা সঞ্জয় মজুমদার জানিয়েছেন, যাঁরা বলেন বাংলার ইতিহাস নেই, সেই অভিযোগের দৃপ্ত প্রতিবাদ, ইতিহাস-মিথ-জনশ্রুতি বুকে নিয়ে হাজার হাজার বছর পথ পেরিয়ে আসা এই মোগলমারি। যেখানে এখনও মাটির তলায় লুকিয়ে গুপ্তোত্তর যুগের মুদ্রা, নকশা, ইট, দেবদেবীর মূর্তি।
মনে করা হয় ১৫৭৫ সালে মেদিনীপুর আর জলেশ্বরের (ওড়িশা) মাঝামাঝি তুকারুই নামে এক স্থানে মোগল ও পাঠানের যুদ্ধ হয়। সেই যুদ্ধে মুঘলদের বহু ক্ষয়ক্ষতি হয়। প্রাণ যায় অসংখ্য মুঘলের। সেই থেকেই হয়তো মোগলমারি নামের উৎপত্তি। থিমের সঙ্গে মানানসই দেবী প্রতিমা। তাতে বৌদ্ধধর্মের ছাপ স্পষ্ট। কারণ, বৌদ্ধধর্মের তারামূর্তির আদলে তৈরি প্রতিমা। গত মাসের শুরুর দিকে থিম প্রকাশ অনুষ্ঠানে পুরাণবিদ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি এই প্রসঙ্গে জানান, বৌদ্ধধর্মে তারা হলেন একজন ত্রাণকর্তা দেবী, মহাযান ও বজ্রযান সম্প্রদায়ে পূজিত হন তিনি। তিনি অবলোকিতেশ্বরের অশ্রু থেকে জাত এবং তাঁকে মা হিসাবে বর্ণনা করা হয়। ইতিহাসের নিদর্শন হিসাবেই রাজ্য সরকার এবার ওই দেবীপ্রতিমাকে সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এর আগে গত বছর এসবি পার্কের মণ্ডপে দর্শনার্থীরা ফিরে পেয়েছিলেন নিজের শৈশবকে। কারণ,সেবার তাদের থিম ছিল ‘শৈশবের দুগ্গা’। প্যাস্টেল রঙে সাজানো মণ্ডপ জুড়ে ছিল কচিকাঁচার হাতে আঁকা ঘর, বাড়ি, হাঁস, গাছ, লতাপতা, নদী। প্রবেশদ্বারে স্কুলে যাতায়াতের স্কুল ভ্যান। প্রতিমাও ছিল মানানসই। ওই প্রতিমা বর্তমানে বেহালার চাঁদের হাটে সংরক্ষিত রয়েছে।