বুথ লেভেল অফিসার (বিএলও) নিয়োগে বিধিভঙ্গ হয়েছে কি না, জেলাশাসক তথা জেলা নির্বাচনী আধিকারিকদের থেকে সেই রিপোর্ট চেয়ে পাঠাল জাতীয় নির্বাচন কমিশন। সম্প্রতি যে বার্তা মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের (সিইও) দফতরের মাধ্যমে তাঁরা পেয়েছেন, তাতে বিএলও নিয়োগ নিয়ে কমিশনে জমা পড়ছে গুচ্ছ গুচ্ছ অভিযোগ। অভিযোগ— এই পদে স্থায়ী সরকারি কর্মীদের নিয়োগ করার কথা থাকলেও, বেশ কয়েক হাজার বিএলও নিয়োগের ক্ষেত্রে তা মান্যতা পায়নি। এমনকি, স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের ওই পদে নিয়োগের অভিযোগ তুলেছে বিজেপিও। এই অবস্থায় সব জেলাশাসককে প্রতিটি বুথ এলাকায় নবনিযুক্ত বিএলও-দের নিয়োগ-বিধি পুনরায় যাচাইয়ের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই প্রায় সাড়ে চার হাজার বিএলও-র নিয়োগ নিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রশ্ন উঠেছে। কমিশনের বিধি সেই সব নিয়োগে যে মান্যতা পায়নি, সেই অভিযোগ করেছে বিরোধী দল বিজেপিও। এক ধাপ এগিয়ে বিডিও-দের একাংশের বিরুদ্ধে অবৈধ হস্তক্ষেপের অভিযোগও তুলছে তারা। রাজ্যে ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) কাজ শুরু হওয়ার আগে বিষয়টির উপর বাড়তি জোর পড়েছে। সেই কারণে রাজনৈতিক এবং অন্য সূত্র থেকে পাওয়া অভিযোগগুলির সারবত্তা খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে জেলা প্রশাসনগুলিকে। বুথভিত্তিক ভাবে সেই রিপোর্টও তাঁদের পাঠাতে হবে সিইও কার্যালয়ে। তাঁদের এ-ও জানানো হয়েছে, স্থির থাকা বিধি মেনে কাজ না হলে কমিশন বিষয়টিকে ভাল ভাবে গ্রহণ করবে না। তাই জেলাশাসকেরা ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসারদের (ইআরও) মাধ্যমে প্রশ্নের মুখে পড়া নিয়োগগুলি পুনরায় যাতে খতিয়ে দেখেন, তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, দেশের সব সিইও-কে গত ৫ জুন লিখিত বার্তায় দিল্লির নির্বাচন সদন জানিয়েছিল, গ্রুপ-সি এবং তার উপরের পদমর্যাদার স্থায়ী সরকারি কর্মচারীদের মধ্য থেকেই বিএলও নিয়োগ করবেন ইআরও-রা। কোনও এলাকায় যদি পর্যাপ্ত সংখ্যায় সরকারি কর্মী না পাওয়া যায়, সে ক্ষেত্রে তা ইআরও এবং জেলাশাসকের সই সম্বলিত শংসাপত্র দিয়ে জানাতে হবে কমিশনকে। তাদের অনুমতি নিয়ে তবে প্রয়োজন মতো কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মী, চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের মধ্যে থেকে বিএলও নিয়োগ করা যাবে। অন্যান্য যে কোনও ক্ষেত্রে কমিশনের আগাম অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক। ২০ জুনের মধ্যে প্রত্যেক জেলাশাসক তথা জেলা নির্বাচনী আধিকারিককে এই বার্তা পাঠিয়ে দিয়েছিল সিইও কার্যালয়।
অভিজ্ঞ কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, অতীতে বিএলও নিয়োগ নিয়ে বিস্তর অভিযোগ ছিল। বরাবরই স্থায়ী সরকারি কর্মীদের বিএলও হিসেবে নিয়োগের বিধি থাকলেও, তা কার্যক্ষেত্রে প্রতিফলিত হত না।এ রাজ্যেও অধিকাংশ বিএলও ছিলেন আংশিক সময়ের বা চুক্তিভিত্তিককর্মী। ফলে ভোটার তালিকা সংশোধনের মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়ায় কোনও রাজনৈতিক প্রভাবে ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত গাফিলতি থাকলে সংশ্লিষ্টদের চেপে ধরার উপায় থাকত না। সেই কারণে সরাসরি স্থায়ী সরকারি কর্মীদেরই এ বার বাধ্যতামূলক ভাবে নিয়োগ করতে হচ্ছে এসআইআর শুরুর আগে। এখন কর্তব্যে গাফিলতি ধরা পড়লে সহজেই অভিযুক্ত বিএলও-র বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ভাবে পদক্ষেপ করতে পারবে কমিশন।
এক কর্তার কথায়, “ভোটার তালিকা তৈরির প্রশ্নে বিএলও-দের ভূমিকা অতি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এলাকাভিত্তিক ভাবে সশরীরে খতিয়ে দেখে তৈরি হওয়া তাঁদের রিপোর্টের উপরেই অনেকাংশে নির্ভর করে ভোটার তালিকায় নাম ওঠা বা বাদ যাওয়ার বিষয়টি। স্বাভাবিক ভাবেই রিপোর্ট ভুল হলে যোগ্য ব্যক্তি যেমন ভোটার তালিকা থেকে বাদ যেতে পারেন, তেমনই অযোগ্য কেউ ঢুকে পড়তে পারেন সেই তালিকায়। এমনিতেই এখনকার ভোটার তালিকায় বহু ভুয়ো-অযোগ্য নামের উপস্থিতি ধরা পড়ছে। তাই এসআইআরের আগে এত কড়াকড়ি।”