উত্তর শহরতলির ঘিঞ্জি পথঘাটে যানজটে আটকে থাকা নিত্যদিনের ঘটনা বলে অভিযোগ বহু দিনের। নতুন তৈরি হওয়া কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়েতে উঠতে পারলে হাঁফ ছেড়ে চাকায় গতি আসে অনায়াসেই। কিন্তু পুজোর মরসুমেই ‘বিপজ্জনক’ সেই এক্সপ্রেসওয়েতে গতির বলি হয়েছেন আট জন। জখমের সংখ্যা শতাধিক বলে সূত্রের খবর। মোট ৪৭৫০ জনের বিরুদ্ধে ট্র্যাফিক আইন ভাঙার অভিযোগেমামলা রুজু হয়েছে।
ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের তরফে নাকা তল্লাশি, স্পিড ক্যামেরা বসিয়ে জরিমানা করা, আটক, গ্রেফতারির মতো পদক্ষেপ করা হলেও কোনও কিছুতেই বাইক ও গাড়িচালকদের একাংশের বেপরোয়া ভাব কাটেনি বলে অভিযোগ। উল্টে, পুলিশকর্মীদের সঙ্গে তাঁদের বচসা বেঁধেছে দাঁড় করিয়ে না রেখে জরিমানার টাকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়ার জন্য। অভিযোগ, কথা কাটাকাটিতে নষ্ট হওয়া সময় পুষিয়ে নিতে তাঁরাই গতি বাড়িয়েছেন ফের। বাধ্য হয়েই দুর্ঘটনায় রাশ টানতে জরিমানার পথ ছেড়ে সচেতনতার পাঠ দিতে সক্রিয় হয়েছে ব্যারাকপুর কমিশনারেটের ট্র্যাফিক বিভাগ। পুলিশের দাবি, তাতে ফল মিলছে হাতেনাতে। পুজোর শুরুতে লাফিয়ে বাড়তে থাকা দুর্ঘটনার সংখ্যাটা এক ধাক্কায় কমে গিয়েছে অনেকটাই।
ব্যারাকপুর-কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের এক দিক নিমতায় বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে মিশেছে। অন্য দিকে, কল্যাণী রেল সেতুর আগে কাঁচরাপাড়ায় ব্যারাকপুর কমিশনারেটের সীমানা শেষ হয়েছে। এই দুই জায়গা ছাড়াও কাঁকিনাড়া কেউটিয়া, ব্যারাকপুর চৌমাথা, মুড়াগাছা খেপলির বিলের কাছে নাকা তল্লাশির পোস্টের বদলে বসেছে পুলিশের সড়ক সচেতনতার চেকপোস্ট। মাইকে বাজছে গত কয়েক দিনে ঘটা দুর্ঘটনার খতিয়ান ও তা এড়াতে গতি নিয়ন্ত্রণের কথা। টাঙানো হয়েছে ব্যানার। পুলিশ আধিকারিকেরা তিন জন সওয়ারির মোটরবাইক দেখলেই ফিরিয়ে দিচ্ছেন। বিনা হেলমেটে মোটরবাইক নিয়ে কাউকে দেখলে হেলমেট পরতে বা বাড়ি থেকে নিয়ে আসতেও বাধ্য করছেন। নেশা করে বাইক বা গাড়ি চালালে অবশ্য করা হচ্ছে জরিমানা। সচেতনতার পাঠ নিয়েও যাঁরা ফের গতি বাড়াচ্ছেন ফাঁকা রাস্তায়, তাঁদেরও জরিমানা করা হচ্ছে।
ব্যারাকপুরের ডেপুটি কমিশনার (ট্র্যাফিক) অম্লানকুসুম ঘোষ বলেন, ‘‘সচেতনতার বিষয়টি অনেক বেশি গতি নিয়ন্ত্রণ করেছে। সংবাদমাধ্যমে দুর্ঘটনার খবর বার বার সামনে আসায় আমরা সেই বিষয়টি বাইক ও গাড়িচালকদের সামনে তুলে ধরেছি সমস্ত তথ্যপ্রমাণ দিয়ে। কিছুটা সময় নষ্ট হয়েছে তাঁদের, কিন্তু বুঝতে পেরেছেন অনেকেই।’’ তাঁর কথায়, ‘‘এর পরেও যাঁরা বেপরোয়া, তাঁদের জন্য আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হয়েছে।’’
দশমীতে সস্ত্রীক প্রতিমা দর্শনে বেরিয়ে ব্যারাকপুরের এক চিকিৎসক গতিসীমার বেশি জোরে গাড়ি চালানোয় তাঁকে আটকানো হয়েছিল কেউটিয়ার চেকপোস্টে। ওই চিকিৎসক বলেন, ‘‘কী বীভৎস ভাবে এখানেই চার দিন আগে দুর্ঘটনা ঘটেছিল, সেই ছবি পুলিশ আধিকারিকেরা দেখানোর পরে আর মনে হয়নি, জোরে গাড়ি চালাই। জরিমানা করার চেয়ে এ ভাবে বোঝানোয় অনেক বেশি মানুষ নিজে থেকেই গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণ করবেন বলে মনে হয়।’’