কাগজে লেখা নাম দেখে গ্রামের সন্ধান, বাড়ি গেলেন মূক-বধির যুবক
আনন্দবাজার | ০৪ অক্টোবর ২০২৫
ইশারায় দোকান থেকে কিছু একটা চাইছিলেন যুবক। কিন্তু হুগলির ডানকুনির ওই দোকানে বসে আড্ডা দেওয়া ব্যক্তি তা বুঝতে পারছিলেন না। তবে, তিনি এটা বুঝতে পারেন যে, ওই যুবক মূক ও বধির। অনেক ক্ষণ চেষ্টা করার পরে ওই ব্যক্তিবুঝতে পারেন, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ওই যুবক ইশারায় কাগজ এবং কলম চাইছেন। কাগজ-কলম দেওয়ার পরে কিছু একটা লেখেন ওই যুবক। ওই ব্যক্তি সেই লেখা এবং ওই যুবকের ছবি পাঠিয়ে দেন হ্যাম রেডিয়োর ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিয়ো ক্লাবের সদস্যদের কাছে। হ্যাম রেডিয়োর সহায়তায় সম্প্রতি চূড়ামন রায় নামে বছর আটত্রিশের ওই যুবক বিহারের বাঁকা জেলার ওলহানি গ্রামে তাঁর বাড়িতে ফিরে গিয়েছেন। তার আগে তাঁকে কয়েক মাস রাখা হয়েছিল একটি হোমে।
চূড়ামনের বোন মঞ্জু দেবী জানান, তাঁর দাদার কথা বলা এবং শোনায় সমস্যা রয়েছে। গত এপ্রিল মাস থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। ভাগলপুর থেকে কলকাতায়গাড়ির খালাসির কাজ করতেন তিনি। সেই কাজে বেরিয়েই নিখোঁজ হয়ে যান চূড়ামন। সেই গাড়ির চালককে গ্রেফতার করা হয়েছে। চূড়ামনকে ফিরে পেয়ে উচ্ছ্বসিত মঞ্জুবলেন, ‘‘দাদা ফিরে আসায় খুব খুশি হয়েছি। এই খুশি ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।’’ হ্যাম রেডিয়ো সূত্রের খবর, মূক ও বধির চূড়ামনের স্ত্রী-ওরয়েছেন।
হ্যাম রেডিয়োর ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিয়ো ক্লাবের সম্পাদক অম্বরীশ নাগ বিশ্বাস বলেন, ‘‘চূড়ামনের ছবি এবং তাঁর লেখা যে ব্যক্তি আমাদের কাছে পাঠিয়েছিলেন, তাঁর ভাইও বধির ছিলেন। সেই ভাই ২০১৯ সালে নিখোঁজ হয়ে যান। সেই কারণেই চূড়ামনের ইশারার বিষয়টি ওই ব্যক্তি বুঝতে পেরেছিলেন। তবে, কাগজের লেখা দেখে নাম ছাড়া অন্য কিছু বোঝা যাচ্ছিল না।’’
পুলিশ চূড়ামনকে ডানকুনির চণ্ডীতলার একটি হোমে নিয়ে গিয়ে রাখে। এর মধ্যে হ্যাম রেডিয়োর সদস্যেরা খুঁজে বার করেন যে, চূড়ামন বিহারের বাঁকার ওলহানি গ্রামের বাসিন্দা। ভিডিয়ো কলের মাধ্যমে ওই যুবকের সঙ্গে তাঁর বাড়ির লোকের যোগাযোগ করায় হ্যাম রেডিয়ো। গত মাসের শেষের দিকে চূড়ামনের বাড়ির লোক এসে ওই হোম থেকে তাঁকে বাড়িতে নিয়ে যান। হোমের মালিক আবির দাস বলেন, ‘‘১৮ এপ্রিল চূড়ামনকে হোমে আনা হয়েছিল। ২৩ সেপ্টেম্বর চূড়ামনের দিদি এবং ভাগ্নে এসে তাঁকে নিয়ে যান।’’
অম্বরীশ বলছেন, ‘‘এত দিন পরে বাড়ির লোকেদের পেয়ে চূড়ামন কাঁদছিলেন। মূক ও বধির ওই যুবককে আপনজনের কাছে ফিরিয়ে দিতে পেরে আমরাও খুব খুশি।’’