• ট্যারান্টুলার বিষ কতটা ভয়ানক? কামড়ালে চিকিৎসাই বা কী? পথ দেখাতে নতুন গবেষণা বাংলায়
    আনন্দবাজার | ০৪ অক্টোবর ২০২৫
  • ট্যারান্টুলা নামটির মধ্যেই যেন রয়েছে ভয়ের ছোঁয়া। ফি বছর বর্ষার গোড়া থেকেই বিভিন্ন জেলা থেকে কালো, বড়ো, লোমশ মাকড়সাটির কামড়ের খবর আসতে থাকে। অনেক ক্ষেত্রেই হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয় ‘শিকার’কে। অঙ্গহানি হয় কিছু ক্ষেত্রে। বাংলায় হাতে গোনা কয়েকটি মৃত্যুর রিপোর্টও আছে।

    অথচ এ হেন কুখ্যাত (এবং পরিচিত) মাকড়সার বাসস্থান কী, তাদের কেমন জায়গা পছন্দ, কোন কোন পরিবেশগত বৈশিষ্ট তাদের উপযোগী বিচরণক্ষেত্র হিসেবে গণ্য হয়, সে সব বিষয়ে কোনও বিশদে গবেষণা হয়নি দীর্ঘদিন। বছর কয়েক আগে সেই কাজে এগিয়ে এসেছিলেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন গবেষক (বর্তমানে কলেজ শিক্ষক) তথা মাকড়সা বিশারদ অয়ন মণ্ডল এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ কয়েক জন গবেষক ও চিকিৎসক। সম্প্রতি ‘ফ্রন্টিয়ারস ইন অ্যারাকনিড সায়েন্স’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে তাঁদের সেই গবেষণাপত্র।

    অয়ন জানিয়েছেন, ট্যারান্টুলার বিভিন্ন প্রজাতিকে পাওয়া যায় পুরো এশিয়া মহাদেশ জুড়ে। তাদের বিষাক্ত দংশনের খবর সংবাদমাধ্যমে আসে প্রায়শই। অথচ এদের বিষ বা বিষের প্রকৃতি নিয়ে আর তার পরের ধাপ, অর্থাৎ কামড়ের চিকিৎসা নিয়ে গবেষণা হয়েছে নামমাত্র। তিনি বলেন, ‘‘সেই জায়গা থেকেই আমাদের এই কাজের শুরু। চিকিৎসক শৌভিক দাস ট্যারান্টুলার কামড়ের শিকার অনেককেই সুস্থ করে তুলেছেন। অসমের চিকিৎসক সুরজিৎ গিরিও এ সংক্রান্ত কাজের বিষয়ে বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন। হয় তো আরও অনেক চিকিৎসক নীরবে চেষ্টা করে চলেছেন এই ধরনের রোগীদের সঠিক চিকিৎসা দেওয়ার।’’ কিন্তু দক্ষিণবঙ্গে পাওয়া ট্যারান্টুলার বিষের প্রকৃতি এবং তার চিকিৎসার জন্য একটি খসড়া বানানো জরুরি ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘সেই দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিলাম আমি ও আরামবাগ মেডিক্যাল কলেজের শারীরবিদ্যা (ফিজিওলজি) বিভাগের চিকিৎসক শৌভিক দাস।’’

    তিনি জানান, পরে গবেষক শুভশঙ্কর মুখোপাধ্যায় এই কাজে অনেক সাহায্য করেছেন। বিষ সম্পর্কিত বিজ্ঞানের (টক্সিকোলজি) গবেষক শুভজিৎ সাহাও অনেক সাহায্য করেছেন। প্রাথমিক ভাবে বিভিন্ন এলাকায় ট্যারান্টুলার কামড় সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করা হয়। পরবর্তী পর্যায়ে দ্রুত উপসর্গগুলি চিহ্নিত করে প্রাথমিক চিকিৎসার বিষয়টি নিয়ে সচেতনতা তৈরির ক্ষেত্রে ধীমান ভট্টাচার্য, দেবব্রত বিশ্বাস, আকাশ চট্টোপাধ্যাদের সহযোগিতা পেয়েছেন অয়নরা। তিনি বলেন, ‘‘কামড়ের চিকিৎসার যাতে আরেকটু উন্নতি হয়, মানুষের মধ্যে এই বিষয়ে প্রাথমিক জ্ঞান এবং সচেতনতা তৈরি হয়, সেটাই ছিল আমাদের মূল লক্ষ্য।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)