উৎসবের শহরে পথ সামলেও নিরাপত্তার অভাব নিয়ে প্রশ্নে পুলিশ
আনন্দবাজার | ০৪ অক্টোবর ২০২৫
কোথাও মাঝরাস্তায় মারামারি। মারের হাত থেকে রক্ষা পাননি মহিলারাও। কোথাও আবার মহিলার পোশাক ছিঁড়ে হেনস্থার অভিযোগ। মধ্যরাতে বাড়ি পর্যন্ত পিছু নিয়ে মত্ত যুবকের যৌন হেনস্থার চেষ্টারও অভিযোগ এসেছে। এমনকি, শুধু বাংলায় কথা বলার জন্য আক্রান্ত হওয়ার অভিযোগও উঠেছে। পুজোর দিনগুলিতে এমন নানা ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে, যান-শাসন করে প্রশংসা কুড়োনো কলকাতা পুলিশ কি যথাযথ নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করতে পারল? না কি, পথঘাট সচল রাখার পরীক্ষায় পাশ করলেও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সেই ‘লাল কালি’ই পড়ল?
কলকাতার নগরপাল মনোজ বর্মা যদিও এ ব্যাপারে শুক্রবার বলেন, ‘‘সব রকম ভাবে চেষ্টা করা হয়েছে। বিচ্ছিন্ন যে ক’টি ঘটনা ঘটেছে, সেগুলিও গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে।’’ অন্য পুলিশকর্তাদের দাবি, এ বছর বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছিল নিরাপত্তার দিকে। সমাজমাধ্যমেও আলাদা করে নজরদারি চালানো হয়েছিল। কোনও উস্কানিমূলক পোস্ট দেখলেই তা দ্রুত মোছানোর ব্যবস্থা করা হয়। এতেই বড় ধরনের ঘটনা তেমন ঘটেনি।
যদিও এরই মধ্যে ম্যাডক্স স্কোয়ারের মণ্ডপে পুরোহিতের উদ্দেশ্যে উস্কানিমূলক মন্তব্যের অভিযোগ উঠেছে। হিন্দিভাষী কয়েক জনের সঙ্গে বাংলায় কথা বলা এক দল যুবকের গোলমালের ভিডিয়োও ছড়িয়েছে। বাংলায় কথা বলার জন্য ওই যুবকদের বাংলাদেশি বলে সম্বোধন করতে শোনা গিয়েছে। ম্যাডক্স স্কোয়ার বালিগঞ্জ থানার অন্তর্গত। পুলিশের অবশ্য দাবি, তারা কোনও অভিযোগ পায়নি। কিন্তু প্রশ্ন, যে ঘটনার ভিডিয়ো ছড়িয়েছে, সেটির ক্ষেত্রে পদক্ষেপ করতে পুলিশ কেন অভিযোগ পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবে?
জানা যাচ্ছে, চতুর্থী থেকে দশমী পর্যন্ত কলকাতা পুলিশ এলাকায় হেনস্থা এবং নিগ্রহের অভিযোগ দায়ের হয়েছে প্রায় ১২০০টি। গত বছর এমন অভিযোগ ছিল সাড়ে আটশোর কাছাকাছি। জমা পড়া অভিযোগের মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ মহিলাদের বিরুদ্ধে হওয়া অপরাধের। এ নিয়ে কলকাতা পুলিশের এক কর্তার মন্তব্য, ‘‘মহিলাদের বিরুদ্ধে হওয়া অপরাধ নিয়ে কঠোরতম অবস্থান নেওয়া হয়েছিল। অন্তত হাজারের উপরে গ্রেফতারি হয়েছে সে কারণেই।’’ কিন্তু ভুক্তভোগীদের দাবি, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ঘটনাস্থলে পুলিশের দেখা মেলেনি। অভিযোগ জমা পড়ার পরে কিছু ক্ষেত্রে পদক্ষেপ করা হয়েছে।
বাগবাজারের পুজো দেখে বেরোনো এমনই এক অভিযোগকারীর দাবি, ‘‘থানায় গিয়েও কাউকে পাওয়া যায়নি। বলা হয়েছে, সকলে পুজোর ডিউটিতে ব্যস্ত।’’ গড়িয়াহাট চত্বরে হেনস্থার অভিযোগকারী এক মহিলা থানায় বসেই কাউকে না পেয়ে কলকাতার নগরপালকে ইমেল করেছেন। তাঁর অভিযোগ, মণ্ডপে তাঁকে যৌন নিগ্রহ করা হয়েছে। অভিযোগ জানাতে থানায় গেলে বলা হয়, ‘‘পুজোর পরে আসুন।’’ যদিও পুলিশের দাবি, প্রয়োজনীয় অফিসারদের থানায় রেখেই বাকি কাজ সামলানো হয়েছে।
লালবাজারের দাবি, চতুর্থীতে এ বছর শহরের রাস্তায় নেমেছিলেন ১০ হাজার পুলিশকর্মী। সপ্তমী থেকে সেই সংখ্যা বাড়ানো হয়। সব মিলিয়েপ্রায় ১৫ হাজার পুলিশকর্মী পুজোর ক’দিন শহর সামলেছেন। ট্র্যাফিক আইন ভাঙার জন্য চতুর্থী থেকে অষ্টমীর মধ্যে ৬২৮৪ জনের বিরুদ্ধে পুলিশ আইনি ব্যবস্থা নিয়েছে। হেলমেট না পরার কারণেই ধরা পড়েছেন ৩২৩১ জন। বাইকে দু’জনের বেশি সওয়ারি থাকায় ধরা হয়েছে ১২৪০ জনকে। বেপরোয়া গতিতে বাইক বা স্কুটার চালানোর জন্য ধরা হয়েছে ৫৬৮ জনকে। মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালানোর কারণে গ্রেফতার হয়েছেন ৫০৪ জন। চতুর্থী থেকে নবমী, ‘উচ্ছৃঙ্খল আচরণ’-এর অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় ৪৭৫ জনকে। কিন্তু এত পদক্ষেপের পরেও পুজোয় সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হল কোথায়? প্রশ্নটা থেকেই গিয়েছে।