রবারের গুঁড়ো সরিয়ে রানওয়ের ঘর্ষণ ঠিক রাখতে বিশেষ যন্ত্র কলকাতাকে
আনন্দবাজার | ০৪ অক্টোবর ২০২৫
প্রতি বার বিমান ওঠা-নামার সময়ে তার চাকার সঙ্গে রানওয়ের ঘর্ষণে রবারের সূক্ষ্ম অবশেষ জমতে থাকে বিমান ওঠা-নামা করার পথে। দীর্ঘ মেয়াদে রানওয়ের স্বাস্থ্য রক্ষা ছাড়াও যাত্রী-নিরাপত্তার স্বার্থে ওই অবশেষ নিয়মিত পরিষ্কার করা জরুরি। রানওয়ে থেকে বিমানের চাকার রবারের সূক্ষ্ম কণা দূর করতে সম্প্রতি এয়ারপোর্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়া কলকাতা বিমানবন্দরকে ৩ কোটি ২০ লক্ষ টাকা মূল্যের বিশেষ যন্ত্র দিয়েছে। কলকাতা ছাড়াও চেন্নাই এবং আগরতলা বিমানবন্দর একটি করে এমন যন্ত্র পেয়েছে। এ ছাড়া, এয়ারপোর্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় সদর দফতর কলকাতায় অবস্থিত হওয়ার সুবাদে আপৎকালীন প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য আরও একটি যন্ত্র এখানে এনে রাখা হয়েছে।
বিমানবন্দর সূত্রের খবর, বিমান ওড়া এবং নামার সময়ে তার গতি খুব বেশি থাকে। বিশেষত, বিমান নামার সময়ে রানওয়ের সঙ্গে চাকার ঘর্ষণে উচ্চ তাপমাত্রার সৃষ্টি হয়। বিমান রানওয়ের মাটি ছোঁয়া মাত্র কার্যত স্থির হয়ে থাকা চাকা আচমকা সচল হয়ে বিমানের গতির সঙ্গে তাল রেখে ঘুরতে শুরু করে। সেই সময়ে বিমানের গতি কমানোর জন্য চালক ব্রেকও কষেন।
এই পর্বে রানওয়ের সঙ্গে ঘর্ষণে বিমানের চাকা অত্যধিক গরম হয়। প্রতি বার বিমান মাটি ছোঁয়ার সময়ে প্রতিটি চাকা থেকে গড়ে এক থেকে দেড় পাউন্ড রবারের কণা রানওয়ের সঙ্গে লেগে যায়। এই প্রক্রিয়ায় একটি বিমানের সব চাকা থেকে এক থেকে দেড় কেজি রবার রানওয়েতে এসে পড়ে। কলকাতা বিমানবন্দরে অন্তর্দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক উড়ান মিলিয়ে দৈনিক ৪১০টি থেকে ৪১৫টি বিমান ওঠানামা করে। এই সংখ্যক বিমানের জন্য প্রায় চারশো থেকে পাঁচশো কেজি রবারের গুঁড়ো বা সূক্ষ্ম কণা রানওয়েতে জমে।
বিমান ওঠানামার পথে রবার জমলে রানওয়ের ঘর্ষণ কমে গিয়ে তা মসৃণ হয়ে যায়। এর ফলে বিমান নামার সময়ে সেটি রানওয়ের নির্দিষ্ট পরিসরের মধ্যে না থেমে পিছলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। বিশেষত বৃষ্টির সময়ে এই সমস্যা আরও জটিল আকার ধারণ করে।
এ ছাড়া, বিমানবন্দরে রানওয়ের দু’পাশে যে সব আলো থাকে,জমা হওয়া রবারের গুঁড়ো উড়েগিয়ে সেই সব আলোর ঔজ্জ্বল্যও অনেক ক্ষেত্রে কমিয়ে দেয়। এর ফলে রাতে বিমান ওঠানামা করার সময়ে রানওয়ে দেখা এবং তার সীমানা বোঝার ক্ষেত্রে বিমানচালকের অসুবিধা হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তবে, মূলত রানওয়ে সম্পূর্ণ মসৃণ হয়ে যাওয়া ঠেকাতেই ওই রবারের অবশেষ পরিষ্কার করা জরুরি।
পৃথিবীর বিভিন্ন বিমানবন্দরে বিশেষ যন্ত্র ব্যবহার করে রানওয়েতে জমা হওয়া রবারের পরিমাণ খতিয়ে দেখা হয় এবং ঘর্ষণ পরিমাপ করা হয়। জমা হওয়া রবারের পরিমাণ বেশি হলে দ্রুত রানওয়ে পরিষ্কার করতে হয়। এই নিয়মে অতি ব্যস্ত বিমানবন্দরের রানওয়ে সপ্তাহে চার-পাঁচ বার পরিষ্কার করার প্রয়োজন হয়।
শক্তিশালী জেট-যুক্ত জলের প্রবাহ, রাসায়নিক, শুকনো বরফ-সহ বিভিন্ন উপকরণ এবং যন্ত্র ব্যবহার করে রানওয়ের রবার অপসারণ করা যায়। তার মধ্যে পরিবেশ দূষণ এড়িয়ে জল ব্যবহার করাই বেশি প্রচলিত। কলকাতা বিমানবন্দরে আনা নতুন যন্ত্র উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন জেট গান ব্যবহার করে রানওয়ে ধোওয়ার পাশাপাশি তা একই সঙ্গে শুকিয়ে ফেলবে। রানওয়ে থেকে তুলে ফেলা রবার যন্ত্র নিজেই তুলে রাখবে। ফলে, সম্পূর্ণ দূষণ-মুক্ত ব্যবস্থায় রানওয়ে পরিষ্কার রাখা সম্ভব হবে বলে বিমানবন্দর সূত্রের খবর।
‘রানওয়ে রবার রিমুভাল মেশিন’ হিসাবে পরিচিত এই যন্ত্র দেশেই তৈরি হয়েছে ভারতের আবহাওয়ায় কাজ করার উপযোগী হিসাবে। রাসায়নিক ব্যবহার বা মেকানিক্যাল সুইপার ব্যবহার করার তুলনায় নতুন প্রযুক্তি দূষণ ছড়ায় না বলে বিমানবন্দর সূত্রের খবর। যন্ত্রটি রানওয়ে থেকে রবার ছাড়াও বিমানের জ্বালানির দাগ তুলতে সক্ষম। এর ফলে রানওয়ের বিভিন্ন দিক নির্দেশক রেখা (মার্কার), আলো পরিষ্কার রাখা সম্ভব হবে। যন্ত্রে বসানো একাধিক ক্যামেরা এবং ডিসপ্লে মনিটর থেকে কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে নজরদারি চালানো যায়। ফলে, রাতের দিকে তিন-চার ঘণ্টা সময়ের মধ্যেই ওই যন্ত্র ব্যবহার করে রানওয়ে পরিষ্কার করা যাবে।