• বিহারে বাদ পড়ল ২২ লক্ষ মহিলা ভোটারের নাম! 
    আজকাল | ০৫ অক্টোবর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিহারে ভোটের আগে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এসেছে। রাজ্যে প্রায় ২২.৭ লক্ষ মহিলা ভোটারের নাম ভোটার তালিকা থেকে মুছে ফেলা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এই ব্যাপক নাম বাদ দেওয়ার ঘটনা আগামী বিধানসভা নির্বাচনে বড় প্রভাব ফেলতে পারে বলে রাজনৈতিক মহলে আলোচনা শুরু হয়েছে।

    নির্বাচন কমিশনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিহারে বর্তমানে মোট প্রায় ৩.৫ কোটি মহিলা ভোটার আছেন। এদের মধ্যে ২২.৭ লক্ষ মহিলার নাম ভোটার তালিকা থেকে মুছে দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, পুরুষ ভোটারদের সংখ্যা ৩.৯২ কোটি হলেও, তাদের মধ্যে মাত্র ১৫.৫ লক্ষ নাম বাদ পড়েছে। ফলে, পুরুষ ভোটারের তুলনায় মহিলা ভোটারের নাম বাদ পড়ার হার অনেক বেশি। এই পার্থক্যকে অনেকেই রাজনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন।

    বিহারের রাজনীতিতে মহিলাদের ভূমিকা বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ। মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার নিজেও দীর্ঘদিন ধরে মহিলাদের উন্নয়নমূলক প্রকল্পকে তার রাজনৈতিক এজেন্ডার কেন্দ্রে রেখেছেন। এরই মধ্যে গত ৩ অক্টোবর মুখ্যমন্ত্রী ২৫ লক্ষ মহিলা উপভোক্তাকে ‘মুখ্যমন্ত্রী মহিলা রোজগার যোজনা’র আওতায় ১০,০০০ টাকা করে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছেন। এই প্রকল্পটি ২৯ আগস্ট ঘোষণা করা হয় এবং ২৬ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হাত ধরে এর আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়। বর্তমানে এই যোজনার মোট উপভোক্তার সংখ্যা এক কোটিতে পৌঁছেছে।

    তবে এরই মধ্যে মহিলা ভোটারদের নাম বিপুল পরিমাণে বাদ পড়ায় সরকারের উদ্দেশ্য ও প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বিশেষ করে, যেখানে সরকার নারীকল্যাণকে প্রধান নির্বাচনী ইস্যু হিসেবে তুলে ধরছে, সেখানে এমন পরিসংখ্যান রাজনৈতিকভাবে বিব্রতকর অবস্থার সৃষ্টি করেছে।

    সবচেয়ে বেশি মহিলা ভোটারদের নাম বাদ পড়েছে গোপালগঞ্জ জেলায়, যেখানে প্রায় ১.৫ লক্ষ মহিলার নাম মুছে ফেলা হয়েছে— যা প্রায় ১৫.১ শতাংশ হ্রাস। এর পরেই রয়েছে মধুবনি জেলায় ১.৩ লক্ষ এবং পূর্ব চম্পারণে ১.১ লক্ষ মহিলার নাম বাদ পড়েছে, যা প্রায় ৬.৭ শতাংশ। সারন ও ভাগলপুর জেলাতেও প্রায় এক লক্ষ করে মহিলা ভোটারের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। পাটনাতেও একই প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে।

    এই ছয়টি জেলা—গোপালগঞ্জ, মধুবনি, পূর্ব চম্পারণ, সারন, ভাগলপুর ও পাটনা—মোট ৫৯টি বিধানসভা আসন নিয়ে গঠিত। ২০২০ সালের বিহার বিধানসভা নির্বাচনে এই আসনগুলির মধ্যে মহাগঠবন্ধন জিতেছিল ২৫টি, আর এনডিএ জিতেছিল ৩৪টি আসন। ফলে, এবারের ভোটার তালিকার এই পরিবর্তন রাজনৈতিক ভারসাম্যে প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

    এদিকে, নির্বাচন কমিশনের একটি দল ৪ ও ৫ অক্টোবর পাটনা সফরে যাচ্ছে, যেখানে তারা নির্বাচনের প্রস্তুতি পর্যালোচনা করবে। অনুমান করা হচ্ছে, এই সফরের পরেই আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হতে পারে।

    রাজনৈতিক মহলের মতে, মহিলা ভোটারদের নাম ব্যাপক হারে মুছে যাওয়া শুধু প্রশাসনিক ত্রুটি নয়, বরং এটি হতে পারে ভোটকৌশলের অংশও। কারণ, বিহারে বিগত কয়েকটি নির্বাচনে মহিলা ভোটাররাই নীতীশ কুমারের অন্যতম শক্তিশালী সমর্থক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তাই এই ভোটারগোষ্ঠীর ক্ষয় রাজ্যের নির্বাচনী সমীকরণে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনতে পারে।
  • Link to this news (আজকাল)