• দোকানের মধ্যেই হাত-পা বেঁধে খুন করা হল স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে, সিসিটিভি ফুটেজে হাড়হিম দৃশ্য ...
    আজকাল | ০৫ অক্টোবর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: বরানগরে ভর দুপুরে স্বর্ণ ব্যবসায়ী খুন। দোকানেই পড়েছিল তাঁর হাত-পা বাঁধা দেহ। মাথায় আঘাতের চিহ্ন ছিল মৃতের। ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের বরানগরের শম্ভুনাথ দাস লেনে সোনার দোকানের মধ্যেই ব্যবসায়ী খুনের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়। পুজো মিটতেই এহেন ঘটনায় আতঙ্কে রয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। 

    জানা গিয়েছে, দোকানের সিসি ক্যামেরা বন্ধ দেখতে পেয়ে দিল্লি থেকে ফোন করেন ব্যবসায়ীর ছেলে। তারপরেই বন্ধ সোনার দোকান থেকে ব্যবসায়ীর দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। কীভাবে, কাদের হাতে খুন হলেন স্বর্ণ ব্যবসায়ী শঙ্কর জানা তা এখনও অজানাই রয়েছে। 

    ইতিমধ্যেই একটি সিসিটিভি ফুটেজ সামনে এসেছে‌। যেখানে দেখা গিয়েছে সোনার দোকানের ভিতরেই ওই ব্যবসায়ী ছাড়াও আরও তিনজন আছেন। তাঁদের মধ্যে দু'জনের সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েছেন প্রৌঢ় ওই ব্যবসায়ী। এই খুনের পেছনে লুঠপাট করা মূল উদ্দেশ্য নাকি ব্যক্তিগত শত্রুতার জেরে খুন, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। দুষ্কৃতীদের মধ্যে কাউকে চিনতে পেরে গিয়েছিল কিনা স্বর্ণ ব্যবসায়ী সেটাও জানার চেষ্টা করছে পুলিশ। 

    পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মৃত ব্যবসায়ীর নাম শঙ্কর জানা। বয়স প্রায় ৬০ এর মতো। তাঁর বাড়ি মেদিনীপুরে বলেই জানা গিয়েছে। দোকানের মধ্যেই তাঁকে খুন করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে অনুমান পুলিশের। সূত্রের খবর, দুপুর তিনটে থেকে সাড়ে তিনটের মধ্যে ঘটনাটি ঘটে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ঘটনার সময় সরস্বতী চেন ও অর্নামেন্ট সোনার দোকানের মধ্যে একাই ছিলেন শঙ্কর জানা। কিছুক্ষণ পর থেকেই দোকানের সিসি ক্যামেরা বন্ধ হয়ে যায়। 

    দিল্লিতে থাকা মৃতের ছেলে ফোনে বিষয়টি টের পেয়ে যোগাযোগ করেন স্থানীয়দের সঙ্গে। খবর পেয়ে দোকান খুলতেই দেখা যায়, মেঝেতে পড়ে রয়েছে শঙ্কর জানার নিথর দেহ। হাত-পা বাঁধা, মাথায় আঘাতের চিহ্ন। প্রাথমিক তদন্তে অনুমান ক্রেতা সেজে দোকানে ঢুকেছিল পাঁচ দুষ্কৃতী। তাদের মধ্যে তিনজন ভিতরে ঢোকে, বাকিরা বাইরে পাহারা দিচ্ছিল। কত পরিমাণ সোনা লুঠ হয়েছে, তা এখনও জানা যায়নি। দোকানের ভিতরের সিসি ক্যামেরা বন্ধ থাকলেও পাশের বাড়ির ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছে পুলিশ। 

    বরানগর থানার মাত্র এক কিলোমিটার দূরেই এই খুনের ঘটনায় নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। তবে একাধিক সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে পুলিশ সূত্রে। 

    স্থানীয় স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এমন ঘটনার পর তাঁরা আতঙ্কিত। এলাকায় আরও অনেক সোনার দোকান রয়েছে, ফলে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানোর দাবি তুলেছেন তাঁরা। পুলিশ সূত্রে খবর, খুনের আগে পর্যন্ত দোকানের ক্যামেরা চালু ছিল। এরপরই সেটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। কীভাবে, কারা এই খুন করল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বরানগর পুরসভার উপ পুরপ্রধান দিলীপ নারায়ণ বসু জানান, কেন্দ্রীয় সরকারের নীতির কারণে স্বর্ণ-শিল্পী ব্যবসায়ীদের অবস্থা করুণ। প্রতিটি স্বর্ণ ব্যবসায়ীর দোকানের নিজস্ব নিরাপত্তা রক্ষী রাখা প্রয়োজন। বরানগরের ব্যস্ত এলাকায় এমন নৃশংস খুনে তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়েছে স্থানীয়দের মধ্যে। গোটা ঘটনা তদন্ত করছে পুলিশ। 

    বরানগরের ঘটনা নিয়ে ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের নগরপাল মুরলীধর এদিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে জানান, 'প্রথমে গ্রাহক সেজে তারা দোকানের ভিতরে ঢোকে। বাইরে সেই সময় পাহারা দিচ্ছিল আরও দু’জন। পরে সেই দু'জন দোকানের ভেতরে ঢোকে। এবং তাদের সঙ্গে আরও একজন ছিল যে বাইরে পাহারা দিচ্ছিল। দোকানের মালিক শঙ্কর জানাকে কাপড় দিয়ে মুখ বাঁধে। তারপর দোকানে যে সোনার গয়নাগুলি ছিল, সেগুলি লুঠপাট করে এখান থেকে পালিয়ে যায়। এমনটাই আমরা সিসিটিভি মারফত জানতে পেরেছি। মোট পাঁচজন ঘটনার সঙ্গে যুক্ত প্রাথমিকভাবে আমরা এটা জানতে পেরেছি। ইতিমধ্যেই ঘটনাস্থলে ফরেন্সিক টিম পৌঁছে গিয়েছে। তদন্ত চলছে। খুব তাড়াতাড়ি অভিযুক্তদের আমরা গ্রেপ্তার করব।'

    প্রসঙ্গত, গত ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে কোলাঘাটে দুষ্কৃতীদের গুলিতে প্রাণ হারান এক স্বর্ণ ব্যবসায়ী। মৃত স্বর্ণ ব্যবসায়ীর নাম সমীর পড়িয়া (‌৩৭)‌। পাঁশকুড়া থানার উত্তর জিঞাদা এলাকার বাসিন্দা ছিলেন তিনি। বাড়ি থেকে প্রায় আড়াই কিলোমিটার দূরে ৬ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে স্থানীয় জিঞাদা বাজার এলাকায় তাঁর সোনার দোকান রয়েছে। 

    সোমবার রাত সাড়ে আটটা নাগাদ দোকান বন্ধ করে বাইক চালিয়ে জাতীয় সড়ক ধরে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। জাতীয় সড়কের ওপর কোলাঘাট থানার দেউলবাড়ে নির্জন এলাকায় তাঁর ওপর আক্রমণ চালায় বাইকে আসা দুষ্কৃতী দল। অভিযোগ, দুটি বাইকে কয়েকজন দুষ্কৃতী এসে ওই স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে ঘিরে ধরে গুলি চালায়। রক্তাক্ত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন স্বর্ণ ব্যবসায়ী সমীর। 

    দুষ্কৃতীরা ওই ব্যবসায়ীর থেকে সোনা ও টাকা লুঠ করে চম্পট দেয়। গুলির আওয়াজে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন স্থানীয়রা। ঘটনার প্রতিবাদে জাতীয় সড়ক অবরোধ শুরু করেন স্থানীয়রা। তীব্র যানজট হয়। ঘটনাস্থলে পুলিশ এলে তাদেরও বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠায় পুলিশ। কী কারণে এই খুন তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। 
  • Link to this news (আজকাল)