• নতুন করে শিশুদের আক্রান্তের ঘটনায় আতঙ্কে রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবা...
    আজকাল | ০৫ অক্টোবর ২০২৫
  • গোপাল সাহা

    বাংলায় শারদোৎসবের আনন্দের রেশ কাটতে না কাটতেই এক ভয়াবহ আতঙ্ক ঘিরে ধরেছে রাজ্যজুড়ে, বিশেষত কলকাতায়। এক ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে ছোট ছোট শিশুরা। যার নাম আরএসভি ভাইরাস (রেসপিরেটরি সিনসাইটিয়াল ভাইরাস)। বিশেষত দু’বছর পর্যন্ত শিশুরা এই ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে। তবে আক্রান্তের উপসর্গ পাঁচ বছর পর্যন্ত শিশুদের মধ্যে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আর তার কারণে শিশুদের মধ্যে লক্ষণ দেখা যাচ্ছে হাঁচি, কাশি, জ্বর ও শ্বাসকষ্ট জনিত বিভিন্ন রকম উপসর্গ। মধ্যপ্রদেশে ও রাজস্থানে ১১টি শিশু মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে একদিকে যেমন কাশির সিরাপ নিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি, এই ভাইরাসের প্রকোপ অভিভাবকদের উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

    বিশেষজ্ঞদের মতে এই ভাইরাসের প্রকোপের কারণ

    অতিবর্ষা, অকালবর্ষণ এবং মৌসুমী জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে আমাদের রাজ্যে প্রতি পাঁচটির মধ্যে আইসিইউতে ভর্তি রোগীর একজন অন্তত যে ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছেন সেটি আর কিছুই নয়, আমাদের পরিচিত 'রেসপিরেটরি সিনসিটিয়াল ভাইরাস'। করোনার মতো এই আরএসভি ভাইরাসও কিন্ত SARI বা সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইনফেকশন করতে পারে। ছয় মাস থেকে ছয় বছর বয়সের শিশুদের এই ভাইরাস আক্রমণ করতে বেশি পছন্দ করে। ছয় মাসের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে যদিও ইনফ্লুয়েন্জা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বেশি, কিন্তু সেটি আরএসভি-র মতো আক্রমণাত্মক বা ছোঁয়াচে নয়। আরএসভি-র কারণে পিকু, নিকু ও অক্সিজেন বেডের চাহিদা বেড়ে যায়।

    এই রোগে কোন কোন উপসর্গ বেশি ভয়ের?

    জ্বরের চেয়েও বেশি ভয়ানক হয়ে ওঠে কাশি ও শ্বাসকষ্ট। যে সব শিশুদের শারীরিক প্রতিরোধ ক্ষমতা কম বা যারা জন্মগত কোন ত্রুটি নিয়ে জন্মেছে তাদের মধ্যে এই ভাইরাসের সংক্রমণ বেশি ঘটে।

    গতবছরের তুলনায় এই বছরে এই সংক্রমণ অনেক বেশি এবং দু’বছরের বেশি বয়সের শিশু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।

    RSV ভাইরাসের উপসর্গ

    RSV ভাইরাস মূলত ছড়ায় হাঁচি, কাশি বা কথা বলার সময় নিঃসৃত ফোঁটার মাধ্যমে অর্থাৎ বাতাসের মাধ্যমে বা সরাসরি সংস্পর্শে এলে। এর লক্ষণগুলি আর পাঁচটা ভাইরাল ফিভারের মতোই হাঁচি, কাশি, জ্বর, হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, ক্ষুধামান্দ্য ইত্যাদি।

    এ বিষয়ে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সংযুক্ত দে বলেন, “রেসপিরেটরি সিনসাইটিয়াল ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত রোগকে বলা হয় ব্রঙ্কিওলাইটিস। এই ভাইরাসে আক্রান্তের এটাই সময় অর্থাৎ শরৎকাল আসার বা যাওয়ার সময় শিশুদের বেশি করে আক্রান্ত করে। মূলত হাঁচি, কাশি এবং জোরে জোরে শ্বাস নেওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। এ ধরনের ভাইরাসে আক্রান্ত হলে বা এ ধরনের উপসর্গ করলে সেই শিশুর সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কোন অ্যান্টিবায়োটিক এই ক্ষেত্রে কাজ করে না। বেশি মাত্রায় বাড়াবাড়ি হলে অবশ্যই হাসপাতালে চিকিৎসা করানো জরুরি। না হলে কোন রকম ভুলভ্রান্তি হলে শিশুর প্রাণ সংশয় হতে পারে।”

    তিনি আরও বলেন, “এই ধরনের ভাইরাস মূলত দু’বছরের মধ্যে শিশুদের কাবু করে দেয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে পাঁচ বছরের শিশুদের মধ্যেও আক্রান্তের প্রবণতা দেখা যায়। তবে এই ভাইরাসের কারণে ভয়ের কারণ বেশি থাকে প্রি-ম্যাচিওর বেবি বা যাদের লাং বা হার্টের সমস্যা রয়েছে সেই সমস্ত শিশুদের ক্ষেত্রে। তাই এ ধরনের শিশুদের দিকে বেশি করে নজর রাখা উচিত এই বয়সসীমা পর্যন্ত। সিনিয়রদের ক্ষেত্রেও এ ধরনের ভাইরাসে আক্রান্ত হতেই পারে কিন্তু সেক্ষেত্রে ভয়ের কোনও কারণ নেই হাঁচি, জ্বর বা কাশি এবং মাথাব্যথার মধ্যে দিয়েই অতিক্রম করে যায়। কিন্তু শিশুদের ক্ষেত্রে বেশি করে নজর রাখা উচিত এবং অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া বাঞ্ছনীয়।”
  • Link to this news (আজকাল)