ফোর্ট উইলিয়ামে মিষ্টি পাঠানোর টোপে প্রতারণা, এক লক্ষ খোয়ালেন ব্যবসায়ী
বর্তমান | ০৫ অক্টোবর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: বিজয়া দশমীতে ফোর্ট উইলিয়ামে মিষ্টিমুখ করানো হবে সবাইকে। তাই ভালো মিষ্টি দরকার। নিজেকে সেনা অফিসার সঞ্জয় সিং পরিচয় দিয়ে বিবেকানন্দ রোডে একটি দোকানে বেশ কিছু মিষ্টির নমুনা পরীক্ষা করে এক ব্যক্তি। দাম মিটিয়ে চলে যাবার সময় জানিয়ে যায়, খুব শীঘ্রই ফোনে অর্ডার করে দেওয়া হবে। কথামতো সেই কলও আসে মিষ্টির দোকানে। আসলে এটা যে সাইবার জালিয়াতদের পাতা ফাঁদ, বোঝেননি দোকানের মালিক। প্রতারকদের পাল্লায় পড়ে এক লক্ষ টাকা খোয়ালেন বিবেকানন্দ রোডের অভিজাত মিষ্টির দোকানের মালিক। বিষয়টি জানিয়ে বড়তলা থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন তিনি। শুরু হয়েছে তদন্ত।
পুলিশ সূত্রে খবর, বিবেকানন্দ রোডে ওই মিষ্টির দোকানে গত ২৭ সেপ্টম্বর এক খরিদ্দার আসে। নিজেকে সেনা অফিসার হিসেবে পরিচয় দিয়ে ১৭০০ টাকার মিষ্টি অর্ডার করে। অনলাইনে পুরো টাকা পেমেন্ট করে। কথা প্রসঙ্গে জানায় আর্মিতে প্রচুর মিষ্টি লাগে। পুজোয় সকলকে মিষ্টিমুখ করাতে অষ্টমী ও দশমীর দিনে ভালো পরিমাণ মিষ্টি লাগবে। জানিয়ে যায়, ফোন করে সে অর্ডার নিয়ে দেবে।
অভিযোগপত্রে মিষ্টির দোকানের মালিক জানিয়েছেন, ২৯ সেপ্টম্বর রাত আটটা নাগাদ সেনা অফিসার পরিচয় দিয়ে দিয়ে সঞ্জয় সিং নামে এক ব্যক্তি বলে, ৩০ সেপ্টম্বর অর্থাৎ অষ্টমীর দিন ২০ কেজি বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি লাগবে। সেগুলি ডেলিভারি করতে হবে ফোর্ট উইলিয়ামে। এগুলি রিসিভ করবে তার বস তেজবিন্দার সিং। দোকানের মালিকের কাছে তেজবিন্দারের পরিচয় পত্র ও ফোন নম্বর পাঠায় অভিযুক্ত। এরপর মিষ্টির দোকানের মালিক তেজবিন্দারকে ফোন করলে সে জানায় এখন ব্যস্ত রয়েছি, পরে কথা হবে। ৩০ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে নটা নাগাদ মিষ্টি দোকানের মালিক অভিযুক্ত সঞ্জয় সিংকে ফোন করেন অর্ডার কনফার্ম করার জন্য। সঞ্জয় জানায়, ৩০ তারিখের পরিবর্তে মিষ্টি পাঠাতে হবে ১ অক্টোবর। দোকানের মালিক টাকা অগ্রিম চাইলে, তাঁকে বলা হয়, ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য পাঠাতে হবে। মিষ্টি দোকানের মালিক অ্যাকাউন্টের তথ্য পাঠিয়ে দেন তাদের কাছে।
তদন্তে নেমে পুলিশ জেনেছে, ১ অক্টোবর ওই ব্যবসায়ীর অ্যাকাউন্টে কয়েক ধাপে একলক্ষ টাকা ঢোকার মেসেজ আসে। ভুয়ো অ্যাপ ব্যবহার করেই যে তাঁকে ওইসব মেসেজ পাঠানো হয়েছে, তা বুঝতে পারেননি দোকানের মালিক। এমনকী নিজের অ্যাকাউন্টও চেক করে দেখেননি তিনি। ওইদিনই সেনা অফিসার সাজা সঞ্জয় সিং ফোন করে বলে, ওই টাকা ভুল করে চলে গিয়েছে। টাকা ফেরত দিতে কয়েকটি অ্যাকাউন্ট নম্বর দেয় অভিযুক্ত। তার কথামতো নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে এক লক্ষ টাকা পাঠিয়ে দেন মিষ্টি দোকানের মালিক। এরপর ১ অক্টোবর মিষ্টি ডেলিভারি করতে গিয়ে জানতে পারেন, ফোর্ট উইলিয়ামের তরফে কোনও অর্ডার করা হয়নি। নিজের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট পরীক্ষা করতে গিয়ে মিষ্টি দোকানের মালিক দেখেন, কোনও টাকা তো আসেইনি, উল্টে তিনি এক লক্ষ টাকা দিয়ে বসে আছেন। এরপরই বড়তলা থানায় অভিযোগ করেন। তদন্তে নেমে পুলিশ জেনেছে ভুয়ো মেসেজিং অ্যাপ ব্যবহার করে টাকা জমা করার মেসেজ পাঠিয়েছে জালিয়াতরা। যে মোবাইল নম্বর ও অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করা হয়েছে, সেটিও অন্যের নামে নেওয়া। মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে অভিযুক্তদের হদিশ করার চেষ্টা চলছে।