ফিরদৌস হাসান, শ্রীনগর; বেশ কয়েক মাস কেটে গিয়েছে। এখনও পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার ক্ষত দগদগে। ফলে আতঙ্ক কাটিয়ে সেভাবে কাশ্মীরমুখী হচ্ছেন না পর্যটকেরা। তাই মন ভালো নেই স্থানীয়দের। ব্যতিক্রম বাঙালিরা। দুর্গাপুজোর মাধ্যমে উপত্যকায় আলো ছড়ালেন বঙ্গ-সন্তানরাই। শুক্রবার শ্রীনগরের লাল চক থেকে বিসর্জনের বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বেরিয়েছিল। অন্যান্যবারের থেকে ভিড় কম হলেও ঢাক, কাসরে মুখরিত হয়ে উঠেছিল গোটা চত্বর। আয়োজকদের বক্তব্য, কাশ্মীর মানে শুধু অশান্তি নয়, সংস্কৃতি, ভালোবাসা ও ভাতৃত্ববোধের পীঠস্থানও। সেই বার্তা তুলে ধরতেই এবার ছোট করে হলেও আমরা উৎসবে মেতেছি। শোভাযাত্রা বেরিয়েছে। স্থানীয়রাও তাতে যোগ দিয়েছেন। স্থানীয় সূত্রে খবর, উপত্যকায় প্রচুর বাঙালি থাকেন। তাঁদের একটা অংশ সোনার কাজ করেন। ফি বছর বাঙালিদের উদ্যোগেই ধুমধাম করে দুর্গাপুজোর আয়োজন করা হয়। তাতে অংশ নেন স্থানীয় কাশ্মীরি ও পর্যটকেরাও। সবমিলিয়ে শারদোৎসবকে কেন্দ্র করে একটুকরো বাংলা উঠে আসে শ্রীনগরে।
বিগত দু’দশক ধরে এখানেই রয়েছেন রাকেশ দত্ত। পেশায় স্বর্ণকার। বলছিলেন, ‘আমাদের কাছে দুর্গাপুজো আস্থা, বিশ্বাস ও উৎসবের উদযাপন। এবার ভিড় কম হলেও যথাসম্ভব ঐতিহ্যকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।’ পুজোয় কলকাতাকে থেকে কাশ্মীর বেড়াতে এসেছিলেন মধুমিতা রায়। বাংলার বাইরে শারদোৎসবে যুক্ত হতে পেরে তিনি বেজায় খুশি। তাঁর কথায়, ‘জঙ্গি হামলার পর আতঙ্ক রয়েছে। তারপরও আমরা এসেছি। কাশ্মীরে পুজো উদযাপনের আলাদা অনুভূতি রয়েছে। এখানে সমাজের বিভিন্ন প্রান্ত ও সম্প্রদায়ের মানুষ একত্র হয়ে মাতৃ আরাধনায় ব্রতী হন। আজকের এই শোভাযাত্রা দেখিয়ে দিল, উৎসব কীভাবে মানুষকে একজোট করে।’ লাল চকের শোভাযাত্রায় অংশ নিয়েছিলেন শ্রীনগরের দোকানি মহম্মদ ইউসুফ। তাঁরাও এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। ইউসুফের কথায়, পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, আমরা একসঙ্গে রয়েছি। সেই বার্তা পৌঁছে দিতেই শোভাযাত্রায় পা মিলিয়েছি।
কাশ্মীরের পুজোয় মাকে বরণ করে বাঙালি মহিলারাও সিঁদুর খেলায় মেতেছিলেন। পরে শোভাযাত্রায় ঢাকের তালে তাঁদের নাচতেও দেখা গিয়েছে। রাস্তার দু’ধারে সারি দিয়ে স্থানীয়রা দেখেছেন বাঙালিয়ানার উদযাপন। অতিথি পরায়ণ উপত্যকাবাসীর প্রার্থনা, মায়ের আশীর্বাদে সব অন্ধকার কেটে যাক। ফের পর্যটকেরা দলে দলে আসা শুরু করুক। হাসি ফুটুক সকলের মুখে।