• প্রাচীন রীতি মেনে গলসির রামগোপালপুরে কার্নিভালের আদলে প্রতিমা নিয়ে শোভাযাত্রা
    বর্তমান | ০৫ অক্টোবর ২০২৫
  • সংবাদদাতা, মানকর: বছরের পর বছর ধরে দুর্গাপুজোর শেষে কার্নিভালের আদলে শোভাযাত্রা হয়ে আসছে গলসির রামগোপালপুরে। গ্রামের সমস্ত দুর্গা প্রতিমা শোভাযাত্রা সহযোগে এখানে আনা হয়। এক জায়গায় পরপর প্রতিমাগুলিকে রাখা হয়। সেই দৃশ্য দেখতে রামগোপালপুরের পাশাপাশি আশেপাশের গ্রামের বাসিন্দারা ভিড় করেন। শুক্রবার রাতে বৃষ্টির মধ্যেও কয়েক হাজার মানুষ সেখানে জড়ো হয়েছিলেন।

    স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, কলকাতার মতোই বিসর্জনের রাতে স্থানীয় দুর্গাপুজো কমিটিগুলি প্রতিমা নিয়ে শোভাযাত্রায় যোগ দেয়। রাত ১১টা নাগাদ শুরু হয় সেই অনুষ্ঠান। প্রতি বছরের মতো এবারও আটটি প্রতিমা যোগ দিয়েছিল। রামগোপালপুর বাজারে প্রদর্শনী করা হয়। যা দেখতে বহু মানুষ ভিড় জমান। সেই সঙ্গে ‘কাঁথা পোড়ানো’ রীতি পালন করা হয়। অর্থাৎ প্রতিমাগুলির সামনে মশালের মতো করে কাঁথা সাজিয়ে পোড়ানো হয়। অনুষ্ঠানের আর একটি বিশেষত্ব হল, প্রতিমা মাটিতে নামানো হয় না। অর্থাৎ কাহারেরাই তা কাঁধে নিয়েই থাকেন। প্রায় ঘণ্টা চারেক ধরে চলে অনুষ্ঠান। একবারের জন্যও দেবীকে মাটি স্পর্শ করানো হয় না। বিশ্বাস করা হয় কাঁধ থেকে দেবীকে নামালে গ্রামে অমঙ্গল হবে। অনুষ্ঠান শেষে এক-এক করে প্রতিমা গ্রামের পুকুরেই বিসর্জন হয়।  

    কথিত রয়েছে, দামোদরের তীরে বর্ধিষ্ণু এই গ্রামে গোপালশ্বর শিবের নাম অনুসারে একদা নাম ছিল গোপালপুর। গ্রামে রামকুমার দত্ত নামে এক জমিদার বাস করতেন। তাঁকে স্মরণ করার জন্য নাম হয়ে যায় রামগোপালপুর। প্রতি বছর গ্রামে আটটি মন্দিরে আনা হয় দুর্গা প্রতিমা। একটি মন্দিরে শিব-দুর্গার পুজো হয়। পারিবারিক পুজোর উদ্যোক্তা তুষারকান্তি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, রামগোপালপুর বাজারে রাত ১১টা নাগাদ এক এক করে গ্রামের মণ্ডপ থেকে প্রতিমা নিয়ে আসা হয়। পুজো উদ্যোক্তা সুভাষ পাল বলেন, অনেক যুগ আগে থেকে আমাদের এখানে এই নিয়ম চলে আসছে। কীভাবে এই অনুষ্ঠান শুরু হয়েছিল, তা অজানা। গ্রামের বাসিন্দারা জানান, এখানেও দীর্ঘদিন ধরে পুজো শেষে শোভাযাত্রা হয়ে আসছে। কলকাতার মতো জাঁকজমক না হলেও শিল্ল্যা, মল্লসারুল সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে বহু মানুষ আসেন। শুক্রবার ব্যাপক বৃষ্টি হলেও দেবীকে নিয়ে কাহাররা ওখানেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। পরে কড়া পুলিশি নিরাপত্তায় প্রতিমাগুলির বিসর্জন সম্পন্ন হয়।

    এছাড়া দশমীর দিন বৃষ্টির মধ্যেই উপরশিল্ল্যা গ্রামের পাশাপাশি অবস্থিত দু’টি মন্দিরের প্রতিমা নিরঞ্জন ঘিরেও উন্মাদনা দেখা যায়। এখানে অবশ্য মন্দির থেকে প্রতিমা বের করে মাকে বরণ করে নেওয়ার পর ট্রাক্টরে তোলা হয়। তারপর ঢাকের তালে দেবী প্রতিমা দামোদর নদে বিসর্জন দেওয়া হয়।
  • Link to this news (বর্তমান)