• কেতুগ্রামের ঝামটপুরে শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত গ্রন্থের রচয়িতার তিরোভাব দিবসে মেলা শুরু
    বর্তমান | ০৫ অক্টোবর ২০২৫
  • সংবাদদাতা, কাটোয়া: শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত গ্রন্থের রচয়িতা কৃষ্ণদাস কবিরাজ গোস্বামীর তিরোভাব তিথি উপলক্ষ্যে উৎসবে মেতেছে কেতুগ্রামের ঝামটপুর। কৃষ্ণদাস কবিরাজ গোস্বামীর লেখা শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত গ্রন্থের পাণ্ডুলিপি সহ তাঁর অন্যান্য পুঁথিগুলি সংরক্ষণের দাবিতে সরব হয়েছেন বাসিন্দারা। শারদ শুক্লা দ্বাদশী তিথিতে শনিবার থেকেই ঝামটপুর গ্রামে মহোৎসব শুরু হয়েছে।

    জানা গিয়েছে, কৃষ্ণদাস কবিরাজ মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যের একনিষ্ঠ সহচর ছিলেন। কেতুগ্রামের ঝামটপুর গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। পরে তিনি ঝামটপুর ছেড়ে মহাতীর্থ বৃন্দাবনে চলে যান। জনশ্রুতি রয়েছে, কিশোর বয়সে প্রভু নিত্যানন্দের স্বপ্নাদেশে বৃন্দাবনে যান তিনি। ৮২বছর বয়সেই বাংলা ভাষায় চৈতন্যচরিতামৃতম গ্রন্থ রচনা শুরু করেন। বছর দশেকের চেষ্টায় তা শেষ করেন। বৃন্দাবন থেকে কৃষ্ণদাসের পুজো করা গোপাল, তাঁর ব্যবহৃত একটি খড়ম ও চরিতামৃতের পাণ্ডুলিপি উদ্ধার করে আনেন শিষ্য মুকুন্দ দাস। কৃষ্ণদাস কবিরাজ ১৫৮৫সালের পর বৃন্দাবনে বসেই সেখানকার বৈষ্ণব গোস্বামীদের অনুরোধে বাংলা ও সংস্কৃত ভাষা মিশ্রণে প্রায় ২৪হাজার চরণ বিশিষ্ট শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত গ্রন্থটি রচনা করেন। এটি বাংলা সাহিত্য তথা ভারতবর্ষের বৈষ্ণব সংস্কৃতির একটি মহাগ্রন্থ বলা চলে।  

    কৃষ্ণদাসের তিরোভাব দিবস উপলক্ষ্যে বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, নদীয়া সহ বিভিন্ন জেলা থেকে বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বী মানুষের সমাগম হয়েছে ঝামটপুরে। বিভিন্ন এলাকার কীর্তনীয়ারা এই কয়েকদিন ধরেই ঝামটপুর গ্রামে এসে ভিড় করেন। অনেক বৈষ্ণব সাধক আবার কৃষ্ণদাস কবিরাজের বাড়ির মাটি পর্যন্ত নিয়ে যান। সেবাইত গিরিধারী দাস মহান্ত বলেন, বাবা ত্রিভঙ্গদাস মহন্তের মৃত্যুর পর কৃষ্ণদাস কবিরাজ গোস্বামীর খড়ম, পাণ্ডুলিপি ও গোপালের রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। তবে আমরা চাই পাণ্ডুলিপিগুলি যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হোক। পাশাপাশি প্রশাসন জন্মভিটা সংরক্ষণ করলে খুব ভালো হয়। কিন্তু প্রশাসনকে বারবার জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। তাছাড়া বৃন্দাবন থেকে কৃষ্ণদাস কবিরাজের হাতে লেখা শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত গ্রন্থের পাণ্ডুলিপি, খড়ম সহ অন্যান্য ব্যাবহৃত জিনিস এনে কেতুগ্রামের তাঁর বাড়িতে রাখা হয়েছে। সেগুলি যাতে সংরক্ষণ করা হয় তার জন্য প্রশাসন কোনও উদ্যোগ নেয়নি।

    ঝামটপুর গ্রামে মেলায় ভিনজেলা থেকেও বহু ভক্ত এসেছেন। বীরভূমের বাসিন্দা তুফান দাস বৈরাগ্য, নীলোৎপল মোদক বলেন, কৃষ্ণদাস কবিরাজ গোস্বামীকে নিয়ে আমাদের আবেগ রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা অসীমকুমার মণ্ডল বলেন, তিরোভাব তিথিতে তাঁর জন্মভিটেতে না এলে মনে হয় সব অপূর্ণ থেকে যাবে। অনন্তপুরের পাটবাড়িতেও শুরু হয়েছে পালাকীর্তন। বহু মানুষের ঢল নেমেছে। উৎসব ঘিরে পুলিসি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
  • Link to this news (বর্তমান)