• আইএনটিটিইউসি অফিস ভাঙা পড়লেও হোর্ডিং ঝুলিয়ে বাস থেকে তোলা অব্যাহত
    বর্তমান | ০৫ অক্টোবর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, নন্দকুমার: কোলাঘাট থেকে হলদিয়া ও দীঘা যাওয়ার পথে নন্দকুমার হাইরোড অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মোড়। সম্প্রতি পানীয় জল প্রকল্পের জন্য ওই হাইরোড মোড়ে নিমতৌড়িমুখী লেনের ধারে অধিকাংশ স্টল ও দোকানঘর ভাঙা হয়েছে। তাতে সেখানে থাকা আইএনটিটিইউসি অফিসও ভাঙা পড়েছে। এই অফিস থেকেই সংগঠনের চাঁদার নামে যাত্রীবাহী বাস থেকে টাকা আদায় করা হতো। অফিস ভাঙা পড়লেও টাকা আদায় থেমে নেই। ভাঙা অফিসের সামনে শাসকদলের শ্রমিক সংগঠনের একটি বড় হোর্ডিং লাগিয়ে দেদার টাকা তোলা চলছে। বৃষ্টির রাতে হোর্ডিংটি খুলে নেওয়া হচ্ছে। সকালে আবার সেটি ভাঙা অফিসের সামনে রেখে দেদার টাকা আদায় চলছে। দৈনিক চারশোর বেশি বাস নন্দকুমার হাইরোড মোড় ছুঁয়ে যাতায়াত করে। প্রতিদিন ২০-২৫হাজার টাকা ইউনিয়ন ফি আদায় হয়।

    কোলাঘাট-হলদিয়া ১১৬নম্বর এবং নন্দকুমার-দীঘা ১১৬বি জাতীয় সড়কের সংযোগস্থল নন্দকুমার হাইরোড মোড়। এই মোড় দিয়ে দৈনিক প্রায় ৪০০টি বাস চলাচল করে। বাম জমানায় হলদিয়ার এক বেতাজ বাদশার মদতে এখানে সিটু সংগঠন অফিস খুলে যাত্রীবাহী বাস থেকে ইউনিয়ন ফি-র নামে টাকা তুলত। ২০১১সালে রাজ্যে পালাবদলের পর হাইরোড মোড়ে সিটুর পাশাপাশি আইএনটিটিইউসির পক্ষ থেকেও অফিস খুলে ইউনিয়ন ফি আদায় শুরু হয়। বেশকিছু সিটু নেতা-কর্মী জার্সি বদল করে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনে নাম লিখিয়ে টাকা আদায়ে নেমে পড়েন। নন্দকুমার হাইরোড মোড় দিয়ে যাওয়া প্রতিটি বাস থেকে সংগঠনের চাঁদার নামে ৫০টাকা করে আদায় করা হয়। দূরপাল্লার বাস এবং রাত্রিকালীন বাস থেকে অবশ্য ডাবল টাকা আদায় করা হয়। নন্দকুমার হাইরোড মোড়ে দীঘা, নিমতৌড়ি এবং হলদিয়ামুখী তিনটি আলাদা বাসস্টপ থেকে আলাদাভাবে টাকা তোলা হয়। তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন নিমতৌড়িমুখী এবং পথসাথীর সামনে কাঁথিগামী বাসের কন্ডাক্টরদের থেকে টাকা তুলছে। হলদিয়াগামী বাস থেকে টাকা তুলছে সিটু। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ইউনিয়ন ফির নামে টাকা তোলা চলছেই। শনিবার নন্দকুমার হাইরোড মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, একের পর এক বাস থামতেই কন্ডাক্টররা নীচে নেমে আসছেন। মুহূর্তের মধ্যে তাঁর কাছে পৌঁছে যাচ্ছেন শাসকদলের শ্রমিক সংগঠনের কর্মীরা। হাতে ৫০টাকা নিয়ে ফের আর একটি বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকছেন। নন্দকুমার পথসাথীর সামনে চার-পাঁচজন মিলে টাকা তুলছেন। নিমতৌড়িমুখী বাসস্টপের সামনে টাকা তুলছেন আরও দু’জন। স্থানীয় আইএনটিটিইউসি নেতা শেখ ইশাক আলির নেতৃত্বে ইউনিয়ন ফি আদায় হয় বলে অভিযোগ। সংগঠনের কার্যালয় থাকার সময় সেখানে ইশাক বসতেন। এখন অবশ্য ইউনিয়ন ফি ঠিকঠাক আদায় হচ্ছে কিনা পরিদর্শনে আসেন। কর্মীদের নির্দেশ দিয়ে ফিরে যান। পূর্ব মেদিনীপুর ডিস্ট্রিক্ট বাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সুকুমার বেরা বলেন, সংগঠনের অফিস ভাঙা পড়লেও টাকা আদায় বন্ধ হয়নি। এসব বন্ধ করার জন্য প্রশাসনের নানাস্তরে জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। আইএনটিটিইউসি নেতা শেখ ইশাক আলি বলেন, আমরা বাসপিছু তিন টাকা করে নিই। বাসের টাইম টেবিল দেখা সহ সংগঠনের কর্মীরা আরও অন্যান্য কাজ করেন। তাই পারিশ্রমিক বাবদ ওই টাকা নেওয়া হয়।  তিনি বাসপিছু তিন টাকার কথা বললেও বাস মালিক ও কন্ডাক্টররা বলছেন, প্রতিটি বাস থেকে ২০, ৩০ এমনকী ৫০টাকা করেও নেওয়া হয়। দূরপাল্লার বাস থেকে আরও বেশি টাকা আদায় করা হয়।  নন্দকুমারে বাস কন্ডাক্টরের থেকে ফি আদায়।-নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)