একই দিনে আবির্ভাব তিথি ও লক্ষ্মীপুজো, কাল ভক্ত সমাগমে ভাসবে তারাপীঠ
বর্তমান | ০৫ অক্টোবর ২০২৫
সংবাদদাতা, রামপুরহাট: আগামীকাল সোমবার তারামায়ের আবির্ভাব তিথি। আবার ওইদিনে কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো। দেবী দুর্গার বিদায়ে আকাশ বাতাস যখন ভারাক্রান্ত, ঠিক সেই সময় একই দিনে দুই বিশেষ তিথি উপলক্ষ্যে ভক্ত সমাগমে ভাসতে চলেছে তারাপীঠ। শনিবার থেকেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের ভিড় জমতে শুরু করেছে এই সিদ্ধপীঠে। গর্ভগৃহ নয়, সেদিন মা তারা সারাদিন নিজ বিশ্রাম মন্দিরে বিরাজ করবেন। ভক্তরা মাকে স্পর্শ করে পুজো নিবেদন করতে পারেন। সন্ধ্যায় দেবীকে গর্ভগৃহে ফিরিয়ে এনে লক্ষ্মীরূপে পুজো নিবেদন করা হবে। বছরের একমাত্র এই দিনে দুপুরে মায়ের কোনও অন্নভোগ হয় না।
কথিত আছে, পাল রাজত্বের সময় শুক্লা চতুর্দশী তিথিতে জয়দত্ত সদাগর স্বপ্নাদেশ পেয়ে শ্মশানের শ্বেতশিমূল বৃক্ষের তলায় পঞ্চমুণ্ডির আসনের নীচে থেকে মায়ের শিলামূর্তি উদ্ধার করে মন্দির প্রতিষ্ঠা করে পুজোর সূচনা করেন। তখন থেকেই এই দিনটি তারা মায়ের আর্বিভাব তিথি হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। তাই সোমবার খুব সকালে শুক্লা চতুর্দশী তিথিতে সূর্যোদয়ের পর তারামাকে গর্ভগৃহ থেকে বের করে বিশ্রাম মন্দিরে আনা হবে। জীবিতকুণ্ড থেকে জল এনে মাকে স্নান করানোর পর রাজবেশে সাজানো হয়। এদিন দেবী তারাকে তাঁর ছোট বোন মুলুটির মা মৌলিক্ষার মন্দিরের দিকে মুখ করে বসানো হয়। কথিত আছে, বাংলা ১১০৮ ও ইংরেজি ১৭০১ সালে আর্বিভাব তিথিতে বিশ্রাম মন্দিরে তারামাকে পূর্বদিকে বসিয়ে পুজো শুরু করার তোড়জোড় করেছেন তদানীন্তন তান্ত্রিক, পুরোহিত ও পান্ডারা। এমন সময় মুলুটির নানকার রাজা রাখরচন্দ্র মায়ের সামনে আরাধনায় বসেন। যা দেখে তান্ত্রিক, পুরোহিত ও পান্ডারা হইহই করে উঠলেন এবং রাজাকে আসন থেকে তুলে পুজোপাঠ বন্ধ করে দেন। রাজা অভিমান করে চলে এসে দ্বারকা নদের পশ্চিম পাড়ে ঘট প্রতিষ্ঠা করে মায়ের পুজো করে মুলুটি গ্রাম ফিরে যান। ওই রাতেই প্রধান তান্ত্রিক প্রথম আনন্দনাথকে তারা মা স্বপ্ন দিয়ে বলেন, রাখরচন্দ্র আমার ভক্ত, ও অভিমান করে চলে গিয়েছে। এবার থেকে এই দিনটিতে যেন আমাকে মুলুটির কালীবাড়ির দিকে মুখ করে বসানো হয়। সেই থেকে বিশেষ এই তিথিতে বিরাম মঞ্চে মাকে পশ্চিমমুখে বসিয়ে পুজো হয়ে আসছে। ওইদিন সকালে মায়ের বিশেষ পুজো ও মঙ্গলারতির পর সর্বসাধারণের জন্য বিশ্রামাগার খুলে দেওয়া হবে। সকলে মাকে স্পর্শ করে পুজো দিতে পারবেন। সেদিন দুপুরে মায়ের কোনও অন্নভোগ হয় না। তাই সেবাইতরাও উপবাস থাকেন। দুপুরে লুচি, সুজি ও মিষ্টি সহকারে ভোগ নিবেদন করা হয়। এবার যেহেতু সোমবার সন্ধ্যা থেকে পঞ্চমী তিথি শুরু হচ্ছে। তাই সেই তিথি শুরুর আগে সন্ধ্যায় দেবীকে গর্ভগৃহে ফিরিয়ে এনে স্নান করিয়ে রাজবেশে সাজিয়ে দেবী তারাকে লক্ষ্মীরূপে পুজো ও আরতি নিবেদন করা হবে।
মন্দিরের সেবাইত তারাময় মুখোপাধ্যায় বলেন, একদিকে উৎসবের এই সময় সর্বত্র ছুটির আমেজ। তাই মায়ের আবির্ভাব তিথি ও তারাঅঙ্গে লক্ষ্মীপুজো দিতে এদিন থেকেই ভক্তরা ভিড় জমাতে শুরু করেছেন। মন্দির কমিটির সম্পাদক ধ্রুব চট্টোপাধ্যায় বলেন, যত দিন যাচ্ছে, ভক্তের সমাগম বেড়েই চলেছে। -নিজস্ব চিত্র