বরানগরে সোনার দোকানে ডাকাতি ও খুন লোকাল টিপারের সাহায্যেই, প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের সন্দেহ
বর্তমান | ০৫ অক্টোবর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, বরানগর: সোনাপট্টিতে ভয়াবহ খুন-ডাকাতি। সোনার গয়নার দোকানের মালিককে খুন করে কয়েক কেজি গয়না লুট করে চম্পট দিয়েছে দুষ্কৃতীরা। কিন্তু দুষ্কৃতীরা খোলা মুখে দোকানে ক্রেতা সেজে ঢুকে যেভাবে ২০-২৫ মিনিটের মধ্যে অপারেশন শেষ করেছে, তা তদন্তকারীদেরও হতবাক করেছে। প্রাথমিক অনুমান, দুষ্কৃতীরা পেশাদার কোনও গ্যাংয়ের সদস্য। শুধু তাই নয়, দোকান মালিক শংকর জানাকে (৬২) আগে থেকেই বিপুল অঙ্কের সোনা কেনার কোনও টোপও দেওয়া হতে পারে। যে কারণে, প্রত্যেক দিন দুপুরে দোকান বন্ধ করা হলেও এদিন করা হয়নি। নিহত শংকর জানার আদি বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুরে।
এরাজ্যের বিভিন্ন জেলে কয়েক মাস কাটিয়ে এখন ওড়িশার কারাগারে ‘জুয়েল থিফ’ সুবোধ সিং। সারা দেশের বিভিন্ন সোনার দোকানে ডাকাতি সুবোধ গ্যাংয়ের কাছে জলভাত। এই বরানগরের হোলসেল দোকানে সোনার গয়না লুটের পিছনে সুবোধ গ্যাং নাকি অন্য কোনও দল রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। খুন হওয়া স্বর্ণ ব্যবসায়ী শংকর জানার দোকানের উল্টো দিকেও সোনার চেনের হোলসেল দোকান রয়েছে। সারা রাস্তা সিসি ক্যামেরায় মোড়া। প্রতিটি দোকানে প্রতিদিন কয়েক কেজির সোনার বিস্কুট ও গয়নার লেনদেন হয়। শংকরবাবু আগে কারিগর রেখে গয়না তৈরি করতেন। এখন সেই কাজ ছেড়ে শুধু হোলসেল ও খুচরো বিক্রি করতেন। কলকাতা ছাড়াও উত্তর ২৪ পরগনার বহু স্বর্ণ বিপণিতে তাঁর দোকান থেকে গয়না যেত। ছেলে শান্তনু আগে দিল্লিতে থাকতেন। বছর পাঁচেক এই ব্যবসায় ঢোকেন। বাবার সঙ্গে তিনিও ব্যবসা চালাতেন। শংকরবাবুর এক মেয়ে কর্মসূত্রে সপরিবারে আমেরিকায় থাকেন। তাঁর স্ত্রী অনেক আগেই মারা গিয়েছেন।
সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গিয়েছে, পাঁচ দুষ্কৃতীর মধ্যে দু’জন হাতে হেলমেট নিয়ে শংকরবাবুর দোকানে ঢুকছে। মিনিট তিনেক পর বাকি তিনজন উল্টো দিক থেকে আসে। তাদের মধ্যে দু’জন দোকানে ঢোকে। বাইরে অপেক্ষা করছিল অপর একজন। ৩টে ২৫ মিনিট নাগাদ তারা সবাই বেশ কয়েকটি ব্যাগ হাতে দোকান থেকে বেরিয়ে যায়। স্থানীয় দোকানদার গৌতম দাস বলেন, একবারে দু’জন ক্রেতা ছাড়া আর কাউকে দোকানে ঢুকতে দিতেন না শংকরবাবু। এটা কি আগাম জেনেছিল দুষ্কৃতীরা? তা না হলে প্রথমে মাত্র দু’জন দোকানে ঢুকেছিল কেন? অন্যদিন বন্ধ থাকলেও, এদিন কেন দুপুরে খোলা রাখলেন? তদন্তকারীরা সমস্ত দিক খতিয়ে দেখছেন। দোকান ও আশপাশের এলাকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজও সংগ্রহ করা হয়েছে। তবে তদন্তকারীরা নিশ্চিত, পুজোর মধ্যে দুষ্কৃতীরা বেশ কয়েকবার জনবহুল এই এলাকা রেকি করে গিয়েছিল। ঢোকা ও বের হওয়ার রাস্তাও নির্দিষ্ট করেছিল। স্থানীয় কোনও ইনফরমারও থাকার সম্ভাবনা প্রবল। যাদের মাধ্যমে তারা জেনে নিয়েছিল, দুপুর তিনটা নাগাদ এই রাস্তার একমাত্র ফার্মেসি ছাড়া সিংহভাগ সোনার দোকান বন্ধ থাকে। বড় আবাসনের বাসিন্দারাও ওই সময় ঘরে থাকেন।
সেকারণে তারা এই সময়টা বেছে নিয়েছিল। সোনার দোকানে ঢুকে কয়েক মিনিটের মধ্যে দোকানের ভেতরের সমস্ত আলো বন্ধ করে দিয়েছিল। ফলে কাঁচের দরজার অপরপ্রান্তে কী হচ্ছে, তা সাধারণ পথচারীরা টের পাননি। এমনকি বাইরে থেকে কেউ আসছে কি না, তা দেখার জন্য বাইরে লোক রেখেছিল দুষ্কৃতীরা।