অস্ত্র কেন্দ্রের অর্ডিন্যান্স, টেট দিতে হবে না ৩ লক্ষ প্রাথমিক শিক্ষককে!
বর্তমান | ০৫ অক্টোবর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: প্রাথমিক থেকে উচ্চ প্রাথমিক স্তর পর্যন্ত নিযুক্ত শিক্ষকদের জন্য টেট উত্তীর্ণ হওয়া আবশ্যিক। ১ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্ট এই রায় দেওয়ার পর থেকে দেশজুড়ে শিক্ষকদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। শিক্ষার অধিকার আইনের ‘রেট্রোস্পেকটিভ এফেক্ট’ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। যার অর্থ, ২০১০ সালে সংশ্লিষ্ট আইন কার্যকর হওয়ার আগে নিযুক্ত শিক্ষকরাও এই নির্দেশের আওতায় পড়বেন। তবে এ রাজ্যের এমন প্রায় তিন লক্ষ শিক্ষককে শেষ পর্যন্ত টেট দিতে হবে না বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় অর্ডিন্যান্সই তাঁদের রক্ষাকবচ হতে চলেছে। কারণ, ২০০৯ সালে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক এবং এনসিটিই (কেন্দ্রীয় শিক্ষক শিক্ষণ নিয়ামক সংস্থা) এ রাজ্যের শিক্ষকদের ২০১৪ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত অন্যান্য কিছু যোগ্যতামানের সঙ্গে আবশ্যিক টেটের ক্ষেত্রেও ছাড় দিয়েছিল।
ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, এই বিশেষ ছাড়ের বিষয়টি রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টের কাছে রিভিউ পিটিশনে তুলে ধরলেই কাজ হবে। কারণ, মূল মামলায় এই বিষয়টি আদালতের নজরে আনাই হয়নি। এক সময়ের পিটিটিআই আন্দোলনের নেতা, বর্তমানে বিজেপির শিক্ষক সেলের রাজ্য কো-অর্ডিনেটর এবং ওয়েস্ট বেঙ্গল প্রাইমারি ট্রেইনড টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য সভাপতি পিন্টু পাড়ুই কেন্দ্রের দেওয়া ওই ছাড়কেই রক্ষাকবচ হিসেবে দেখছেন। তাঁর কথায়, ‘তৎকালীন বিদেশমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের উদ্যোগে মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী কপিল সিবাল আমাদের এই ছাড়ের বিষয়ে চিঠি পাঠিয়েছিলেন। পরে সেটি অর্ডিন্যান্স হয়। পরে গেজেট বিজ্ঞপ্তি জারি করে কেন্দ্র।’ ইতিমধ্যে পিন্টুবাবু বিষয়টি জানিয়ে কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান, রাষ্ট্রমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদারকে চিঠি লিখছেন। তাঁর বক্তব্য, ওই ছাড় কার্যকর থাকলে কোনও শিক্ষককেই আর টেটে বসতে হবে না। কারণ এর পর আর কোনও শিক্ষক টেট ছাড়া নিযুক্ত হননি।
সূত্রের খবর, দক্ষিণ ও উত্তর ভারতের বেশ কিছু রাজ্য এই রায়ের প্রেক্ষিতে রিভিউ পিটিশন ফাইল করেছে। পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষকরাও চাইছেন, রাজ্যের তরফে এমন পিটিশন ফাইল করা হোক। বিজয়ার সৌজন্য সাক্ষাতে গিয়ে কালীঘাটের বাড়িতে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেই বিষয়টি উত্থাপন করেন তৃণমূলের প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি অশোক রুদ্র। তাঁর দাবি, মুখ্যমন্ত্রী আইনি দিক খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন।
ঘটনা হল, এই ছাড় সংক্রান্ত অর্ডিন্যান্সটি যখন আসে, তখন রাজ্যে ক্ষমতায় বামফ্রন্ট। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ দে। পিটিটিআই আন্দোলনের সেই টালমাটাল সময়ে আসা নথি আদৌ এই আমলে খুঁজে পাওয়া সম্ভব কি না, তা নিয়েও আশঙ্কায় রয়েছেন অনেকে। তবে রাজ্য চাইলে সেই নথির প্রতিলিপি দেওয়া সম্ভব বলেই মনে করছেন একাধিক শিক্ষক নেতা। এই অবস্থায় সরকার কোন পদ্ধতিতে সমস্যার মোকাবিলা করে, সেদিকেই তাকিয়ে রয়েছেন সমস্যায় পড়া শিক্ষকরা।