রাজ্যের নিজ উদ্যোগে মধ্যবিত্তের জন্য উপনগরী, বেসরকারি সংস্থার অংশীদারিত্ব থেকে বেরিয়ে আসছে নবান্ন
বর্তমান | ০৫ অক্টোবর ২০২৫
প্রীতেশ বসু, কলকাতা: দু’দশকেরও আগের কথা। সাধারণ মধ্যবিত্ত তখনও ফ্ল্যাট কেনার ব্যাপারে একদমই সড়গড় হয়নি। মাত্র একজন প্রোমোটার বা প্রোমোটারি সংস্থার কথায় পাকা ছাদের জন্য গোটা জীবনের সঞ্চয় দিয়ে দিতে কিছুটা হলেও দ্বিধাগ্রস্ত ছিল আম বাঙালি। তাই জনসাধারণকে ভরসা জোগাতে বিভিন্ন বেসরকারি নির্মাণ সংস্থার সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছিল রাজ্য সরকার। নির্মাণ শিল্প উন্নয়নের লক্ষ্যে তৈরি হয়েছিল ১৯টি জয়েন্ট ভেঞ্চার এবং অ্যাসিস্টেড সেক্টর কোম্পানি। সেই যুগ আর নেই। সময় বদলেছে। ওই ১৯টি কোম্পানির তৈরি অধিকাংশ ফ্ল্যাট বিক্রিও হয়ে গিয়েছে। ফলে কার্যত ফুরিয়ে এসেছে এই সমস্ত যৌথ উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তা। সূত্রের খবর, সেই কারণেই এবার বেসরকারি সংস্থাগুলির সঙ্গে অংশীদারিত্ব থেকে বেরিয়ে আসতে চলেছে নবান্ন। আনা হবে ‘এগজিট পলিসি’। বিষয়টি নিয়ে জোর পরিকল্পনা শুরু হয়েছে রাজ্যের অন্দরে। সেক্ষেত্রে যে যে বেসরকারি কোম্পানির সঙ্গে জয়েন্ট ভেঞ্চার হয়েছিল, তাদের কাছে চলে যাবে সরকারের অংশীদারিত্ব। পরিবর্তে এক-একটি ক্ষেত্রে ২০০ থেকে ২৫০ কোটি টাকা আসতে পারে রাজ্যের কোষাগারে। ১৯টি কোম্পানিই যদি এই নয়া নীতিতে সাড়া দেয়, তাহলে সরকারের ঘরে ৪ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত আসতে পারে বলেই মনে করছে প্রশাসনিক মহল। আর এই অর্থ ব্যবহার করে হবে নতুন প্রকল্প—একেবারে রাজ্যের নিজ উদ্যোগে মধ্যবিত্তের জন্য উপনগরী! এমনই পরিকল্পনা নবান্নের নীল নকশায় রয়েছে বলে খবর।
নির্মাণ শিল্পক্ষেত্রে বেঙ্গল পিয়ারলেস, বেঙ্গল অম্বুজা, বেঙ্গল ডিসিএল, বেঙ্গল ইমামী, বেঙ্গল শেল্টারের মতো ন’টি জয়েন্ট ভেঞ্চার সংস্থা রয়েছে রাজ্যে। এছাড়াও রয়েছে বেঙ্গল মার্লিন, বেঙ্গল সঞ্জীবনী, বেঙ্গল ফোরামের মতো ১০টি অ্যাসিস্টেড সেক্টর কোম্পানি। এদের সকলের সঙ্গেই রাজ্যের তরফে গাঁটছড়া বেঁধেছিল ওয়েস্ট বেঙ্গল হাউজিং বোর্ড। প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, জয়েন্ট ভেঞ্চার কোম্পানিগুলিতে ৪৯.৫ শতাংশ অংশীদারিত্ব রাজ্যের। অ্যাসিস্টেড সেক্টর কোম্পানির ক্ষেত্রে যা ১১ শতাংশ। এই হার অনুযায়ী নিজের প্রাপ্য টাকা বুঝে নেবে নবান্ন। কিন্তু ওই অর্থ ব্যবহার করে কোথায় কোথায় গড়ে উঠবে নয়া উপনগরী? জমি কি চিহ্নিত হয়ে গিয়েছে? এই প্রশ্নের উত্তরে রাজ্যের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, মধ্যবিত্তের বাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে রাজ্য হাউজিং বোর্ডের যথেষ্ট অভিজ্ঞতা আছে। ফলে নির্মাণ কাজ হাতে নিতে কোনও সমস্যাই হবে না। একযোগে সবক’টি কোম্পানির ‘এগজিট পলিসি’তে যাওয়া সম্ভব না বলেই মনে করছে রাজ্য প্রশাসনের একাংশ। সেই কারণেই পর্যায়ক্রমে একের অধিক জায়গায় মধ্যবিত্তের জন্য উপনগরী গড়ে তোলা হতে পারে। জমি পেতেও কোনও সমস্যা হবে না। প্রকল্প অনুযায়ী জায়গা চিহ্নিত হবে।
কয়েক মাস আগেই নিউ টাউন এলাকায় সাধারণ মধ্যবিত্তের জন্য ফ্ল্যাটবাড়ি উপহার দিয়েছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার রাজ্যের এই প্রস্তাবিত নীতি কার্যকর হলে কয়েক হাজার মানুষের ন্যায্য মূল্যে মাথায় ছাদ পাওয়ার স্বপ্নপূরণ হবে বলেই মনে করছে রাজ্য প্রশাসন। ফলে, করুণাময়ী, লাবণী, বিদ্যাসাগর হাউজিং বোর্ড, শকুন্তলা পার্ক এবং গল্ফগ্রিনের মতো আরও বেশ কয়েকটি উপনগরী গড়ে উঠবে রাজ্যে।