• কাশির সিরাপে মৃত্যুমিছিল! চিকিৎসক জেনে বুঝেই দিয়েছিলেন ওষুধ? প্রবল বিতর্কের মাঝেই গ্রেপ্তারি...
    আজকাল | ০৫ অক্টোবর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: চিকিৎসক কি জেনে বুঝেই দিয়েছিলেন ওষুধ? কাশির সিরাপ, তা থেকে মৃত্যু মিছিল। বিতর্কের জল বহুদূর গড়াতেই বড় পদক্ষেপ। সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যম সূত্রের খবর, রবিবার ভোরে এক চিকিৎসককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে মধ্যপ্রদেশে। অভিযোগ, তিনি ওই ওষুধ প্রেসক্রাইব করেছিলেন। তাঁর ক্লিনিকেই বেশিরভাগ শিশুর চিকিৎসা হয়েছিল। জানা গিয়েছে ওই চিকিৎসকের নাম প্রবীণ সোনি। 

    তথ্য, সোনি একজন সরকারি চিকিৎসক এবং তাঁর বেসরকারি ক্লিনিকে যেসব শিশুকে নিয়ে যাওয়া হত চিকিৎসার জন্য, তিনি তাদের জন্য ওই সিরাপটি লিখে দিতেন। সোনির গ্রেপ্তারির সঙ্গেই প্রাপ্ত তথ্য, মধ্যপ্রদেশ সরকার তামিলনাড়ুর কাঞ্চিপুরম জেলায় অবস্থিত কোল্ডরিফ কাশির সিরাপ তৈরির কোম্পানি শ্রীসান ফার্মাসিউটিক্যালসের বিরুদ্ধেও মামলা দায়ের করেছে।

    সরকার এর আগে কোল্ডরিফ বিক্রি নিষিদ্ধ করেছিল। সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, ওষুধের নমুনায় ৪৮.৬% ডাইথিলিন গ্লাইকল পাওয়া গেছে, যা অত্যন্ত বিষাক্ত পদার্থ। চেন্নাইয়ের ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরিতে সরকারি ড্রাগ বিশ্লেষক দ্বারা পরীক্ষা করা সিরাপের একটি নমুনাকে তামিলনাড়ু ড্রাগ কন্ট্রোল ডিরেক্টরেট 'মানসম্মত নয়' বলে ঘোষণা করে।

    এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, মূল ঘটনা। কী ঘটেছিল? কোন ঘটনা থেকে বিতর্ক এবং একের পর এক সিদ্ধান্ত?

    ঘটনার সূত্রপাত মধ্যপ্রদেশের ছিন্দওয়াড়ায়। অভিযোগ, সেখানে কিডনি বিকল হয়ে একাধিক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। পরিবারের দাবি, মৃত্যুর আগে ওই শিশুরা এই নির্দিষ্ট কাশির সিরাপ খেয়েছিল। পরিবারগুলির মতে, সেপ্টেম্বরের শুরুতে আবহাওয়ার অল্প বদলের সময় তাদের ঠান্ডা লাগে, হালকা জ্বর জ্বর হয়। এরপর তাদের নিয়মিত ওষুধ দেওয়া হয়েছিল, যার মধ্যে কাশির সিরাপও ছিল। প্রাথমিকভাবে শিশুরা সুস্থ হয়ে উঠলেও, সাময়িক সময়ের পর, ফের ফিরে আসে উপসর্গগুলি। প্রস্রাবের পরিমাণ হঠাৎ উদ্বেগজনকভাবে হ্রাস পায়। কিডনি বিকল হয়ে পড়ে এবং মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। কিডনি বায়োপসিতে ডাইথিলিন গ্লাইকলের উপস্থিতি জানা যায়। 

    সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যম সূত্রে তথ্য, মৃতদের মধ্যে, ১১ জন পারাসিয়ার, দু'জন ছিন্দওয়াড়া শহরের এবং একজন চৌরাইয়ের বাসিন্দা। একই ঘটনা ঘটেছে রাজস্থানেও। সেখানে সিকার জেলায় দুই শিশু এবং ভরতপুরে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।  আতঙ্কের আবহে তড়িঘড়ি পদক্ষেপ করে শুক্রবার তামিলনাড়ু সরকার রাজ্যে ওই সিরাপের বিক্রি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। মহকুমা প্রশাসনের তরফ থেকে কোল্ডরিফ এবং নেক্সট্রো ডি এস নামের দুটি কাফ সিরাপের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। 

    ঘটনা প্রসঙ্গে মুখ খুলেছেন মোহন যাদব। সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে, মোহন যাদব এই মৃত্যুগুলিকে 'অত্যন্ত দুঃখজনক' বলে অভিহিত করেছেন এবং বলেছেন যে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি জানিয়েছেন, 'কোল্ড্রিফ সিরাপের কারণে ছিন্দোয়ারায় শিশুদের মৃত্যু অত্যন্ত দুঃখজনক। মধ্যপ্রদেশ জুড়ে এই সিরাপের বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সিরাপ তৈরিকারী সংস্থার অন্যান্য পণ্য বিক্রির উপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হচ্ছে।' শনিবার সোশ্যাল মিডিয়ায় এই বার্তা দেন তিনি।

    এর মাঝেই সামনে এসেছে আরও একটি তথ্য। সূত্রের খবর, শিশুদের চিকিৎসায় নিরাপত্তা ও সঠিক ওষুধ ব্যবহারের উপর জোর দিয়ে নতুন পরামর্শ জারি করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক। নির্দেশিকায় স্পষ্ট বলা হয়েছে, শিশুদের ক্ষেত্রে কাশি ও সর্দির ওষুধ অযথা ব্যবহার না করার জন্য চিকিৎসক ও অভিভাবক উভয়কেই সতর্ক হতে হবে। 

    কী কী বলা হয়েছে নির্দেশিকায়? তথ্য-

    .দুই বছরের কম বয়সী শিশুদের একেবারেই কাশি ও সর্দির ওষুধ দেওয়া যাবে না।

    .সাধারণভাবে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রেও এসব ওষুধ ব্যবহারে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। 

    .পাঁচ বছরের বেশি বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় হলে, সতর্ক ডাক্তারি মূল্যায়নের পর, সঠিক মাত্রা ও সীমিত সময়ের জন্যই ওষুধ ব্যবহার করা যাবে।

    .একাধিক ওষুধ একসঙ্গে ব্যবহার না করারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

    .ওষুধ নয়, প্রাথমিক যত্নই মূল ভরসা। 
  • Link to this news (আজকাল)