এক রাতের অতি ভারী বৃষ্টিতে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে দার্জিলিংয়ে। পাহাড়ি ধস, নদীর জলস্ফীতির জেরে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ১৩ জনের। ভেঙে পড়েছে একাধিক সেতু, বন্ধ হয়ে গিয়েছে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলি। সিকিম ও কালিম্পংয়ের সঙ্গে যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।
শনিবার রাত থেকে টানা বৃষ্টির জেরে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মিরিক, দুধিয়া এবং সুখিয়া এলাকার বিস্তীর্ণ অঞ্চল। মিরিকে লোহার সেতু ভেঙে অন্তত ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। সুখিয়ায় প্রাণ হারিয়েছেন আরও ৪ জন। উদ্ধারকাজ এখনও চলছে। প্রশাসন জানিয়েছে, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
মিরিক থেকে কার্শিয়াংয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, ‘আমরা ইতিমধ্যে পাঁচটি মৃতদেহ উদ্ধার করেছি। আরও বেশ কয়েক জন নিখোঁজ রয়েছেন। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে উদ্ধারকাজে সমস্যা হচ্ছে। রোহিণী ও দিলারাম, দুই দিক থেকেই যোগাযোগ বন্ধ।’
তিস্তার জল বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। তিস্তাবাজারের কাছে ২৯ মাইল ভালুখোলায় জল উঠে বন্ধ হয়ে গিয়েছে ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক। এই সড়কেই শিলিগুড়ির সঙ্গে সিকিম ও কালিম্পংয়ের সংযোগ রক্ষা হয়। রাস্তা ভেঙে পড়ায় যোগাযোগ সম্পূর্ণ থমকে গিয়েছে। শিলিগুড়ি থেকেও দার্জিলিং শহরের যোগাযোগ ব্যাহত হয়েছে, যা একাধিক পরিকাঠামোগত সমস্যার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
জিটিএ সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্যোগের কারণে পর্যটকদের জন্য জনপ্রিয় স্থান রক গার্ডেন ও টাইগার হিল সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। পর্যটকদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। বহু পর্যটক এখন পাহাড়ে আটকে পড়েছেন। স্থানীয় প্রশাসন ও উদ্ধারকারী দল তাঁদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যেতে চেষ্টা চালাচ্ছে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগে শুধু মানুষই নয়, বন্যপ্রাণীরাও বিপর্যস্ত। জঙ্গল ছেড়ে হরিণ সহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণী নেমে আসছে জনবসতিতে। প্রশাসন জানিয়েছে, দুটি হরিণকে ইতিমধ্যেই উদ্ধার করা হয়েছে।
আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর আগেই উত্তরবঙ্গে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছিল। দার্জিলিংয়ে অতি ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি থাকলেও এক রাতের মধ্যে এমন ভয়াবহ ধস ও ক্ষয়ক্ষতি প্রশাসনকে হতচকিত করে দিয়েছে।
পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে প্রশাসন। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী ও রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। স্থানীয়দের আপাতত ঘর থেকে না বেরনোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে জিটিএ এবং জেলা প্রশাসন যৌথভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।