কলকাতা ‘নিরাপদতম’ শহর— ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড্স ব্যুরো’র (এনসিআরবি) এই তথ্য সামনে রেখে প্রচারে নামল তৃণমূল কংগ্রেস। কেন্দ্রীয় সরকারের এই শংসাপত্র পেয়ে দলের তরফে বলা হয়েছে, ‘এ শহর যত্ন আর সহানুভূতিতে বিশ্বাসী। তার নেতৃত্বে সেবায় বিশ্বাসী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।’ বিরোধীরা অবশ্য শাসক দল ও সরকারকে কটাক্ষ করে দাবি করছে, অপরাধ আড়াল করেই রাজ্য সরকার এই স্বীকৃতি আদায় করে।
আর জি কর হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় সরাসরি এই শহরে নারীর নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েছিল তৃণমূল সরকার। শুধু তা-ই নয়, তার পরপর কয়েকটি ঘটনায় সেই অপরাধ চাপা দেওয়ার অভিযোগও উঠেছিল পুলিশ তথা প্রশাসনের বিরুদ্ধে। ওই ঘটনায় তৈরি জনরোষের চাপে ‘কোণঠাসা’ সরকার ফের ধাক্কা খেয়েছে দক্ষিণ কলকাতা আইন কলেজের মধ্যে ছাত্রীর গণধর্ষণের ঘটনায়। সেই চাপ থেকে মুক্ত হতে এ বার কেন্দ্রীয় সংস্থার এই তথ্যই দেখাচ্ছে শাসক শিবির। কলকাতার মেয়র তথা রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম শনিবার সমাজমাধ্যমে লিখেছেন, ‘২০ লক্ষের বেশি জনসংখ্যা, এমন শহরের মধ্যে কলকাতায় প্রতি লক্ষে অপরাধের সংখ্যা ৮৩.৩। বড় শহরের মধ্যে কোচিতে ( কেরল) অপরাধ সর্বাধিক। তার পরে দিল্লি এবং সুরাত’। রাজ্যের দুই মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য ও শশী পাঁজাও পুলিশ-প্রশাসনের সাফল্য হিসেবে এনসিআরবি’র তথ্য তুলে ধরে সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেছেন।
তৃণমূলের এই প্রচারের জবাবে এনসিআরবি’র এই প্রক্রিয়ার কথা টেনেছে বিজেপি। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সংস্থা এই রিপোর্ট তৈরি করে রাজ্য সরকারের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে। এখানে রাজ্য সরকার তথ্য তো দেয়ই না, বরং, এফআইআর দায়ের করে না। ফলে, এ রাজ্যের তথ্যে কলকাতার পরিস্থিতির প্রকৃত ছবিটা কখনই ধরা পড়ে না।’’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীরও বক্তব্য, “কলকাতা নিরাপদতম শহর, এটা জেনে খুশি। কিন্তু আর জি করের ঘটনা-সহ যা চলছে, তার পরেও কলকাতা নিরাপদতম শহর হলে দেশের বাকি শহরগুলির হাল কী? রাজ্যের তথ্যের ভিত্তিতে এনসিআরবি-র রিপোর্ট হয়। রাজ্য ঘটনার তথ্য বিকৃত করে, গোপন করে সব ‘শূন্য’ বলে পাঠাচ্ছে, না কি তথ্যই পাঠাচ্ছে না?” পাশাপাশি, প্রদেশ কংগ্রেস মুখপাত্র সৌম্য আইচ রায়ও বলেছেন, “আর জি কর-কাণ্ড, আইন কলেজের ঘটনা দেখিয়ে দিচ্ছে, শহর একেবারেই নিরাপদ নয়। থানাগুলি এনসিআরবি-তে রিপোর্ট দেয় না। আর এনসিআরবি রিপোর্টে এটাও আছে যে, এই রাজ্য থেকে সব চেয়ে বেশি পাচার হয়।”
অন্য দিকে, কেন্দ্রীয় সংস্থার রিপোর্ট হাতে পেয়ে বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলির অবস্থার কথা টেনেছেন ফিরহাদ। তিনি লিখেছেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে কলকাতা পুলিশের সক্রিয় ও আধুনিক ব্যবস্থা এবং নাগরিকদের সহযোগিতায় শহরের আইনশৃঙ্খলার বিষয়টি এই হিসেবেই স্পষ্ট। বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলি মুখে অনেক কথা বলে। কলকাতার মানুষ অভিজ্ঞতায় বদল বুঝছেন’।