• কেন চিকিৎসকদের হাতের লেখা খারাপ এবং কখনই ঠিক হওয়ার নয়
    আজকাল | ০৫ অক্টোবর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: গত সপ্তাহে পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাই কোর্টে এক জামিন শুনানিতে অদ্ভুত এক ঘটনা ঘটে। যৌন নির্যাতনের মামলায় দাখিল হওয়া মেডিকো-লিগ্যাল রিপোর্ট পড়তে গিয়ে বিচারপতি নিজেই হতবাক হয়ে যান—ডাক্তারের হাতের লেখা এতটাই খারাপ ছিল যে এক শব্দও বোঝা যায়নি। আদালত মন্তব্য করে, “এমন লেখা আদালতের বিবেক নাড়া দিয়েছে।” এরপর আদালত সুপারিশ করে, চিকিৎসা শিক্ষায় হাতের লেখা শেখানোর ব্যবস্থা করতে হবে এবং দুই বছরের মধ্যে প্রেসক্রিপশন ডিজিটালাইজ করার নির্দেশ দেয়।

    ডাক্তাররা জীবন বাঁচান, সান্ত্বনা দেন, কিন্তু তাদের হাতের লেখার দুর্ভোগ বহু পুরনো। প্রায় সবাই কোনও না কোনও সময় ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন বুঝতে হিমশিম খেয়েছেন। অনেক সময় ফার্মাসিস্ট কিংবা অন্য ডাক্তাররাও সেই লেখা পড়তে কষ্ট পান। এর ফলে ভুল ওষুধ, ভুল মাত্রা, এমনকি প্রাণঘাতী ভুলও হতে পারে।

    তাহলে কেন ডাক্তারের হাতের লেখা এত খারাপ হয়? এটা কি মেডিক্যাল শিক্ষার দোষ, নাকি কাজের চাপে হাতের লেখা খারাপ হয়ে যায়?অসমের তিনসুকিয়া মেডিক্যাল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক গবিল থাপা বলেন, “তিনটি প্রধান কারণ রয়েছে। প্রথমত, মেডিক্যাল ছাত্ররা সীমিত সময়ে দীর্ঘ উত্তর লিখতে গিয়ে তাড়াহুড়ো করে লেখে, ফলে লেখার স্পষ্টতা নষ্ট হয়। দ্বিতীয়ত, চাকরিজীবনে, বিশেষ করে সরকারি হাসপাতালে, এক শিফটে শতাধিক রোগী দেখতে হয়, তাই প্রেসক্রিপশন লিখতে হয় দ্রুত। তৃতীয়ত, ডাক্তাররা ধরে নেন স্থানীয় ফার্মাসিস্টরা তাদের লেখা চিনে নেবে, তাই ওষুধের নামগুলো আরও অস্পষ্ট হয়ে পড়ে।” তিনি আরও বলেন, চিকিৎসা শিক্ষার শুরুতে ছাত্রদের হাতের লেখা মোটামুটি ভালো থাকে, কিন্তু চর্চা ও চাপে পড়ে তা খারাপ হয়ে যায়।

    ভারতের মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের জাতীয় সভাপতি ডাঃ দিলীপ ভানুশালী জানান, “প্রায় ১০% উত্তরপত্র এমন হয় যা পড়া কঠিন। দীর্ঘ উত্তর লেখার চাপ ও ক্রমাগত নোট নেওয়া হাতের লেখাকে প্রভাবিত করে।”

    তবে সকল ডাক্তারই একমত নন। মহারাষ্ট্রের অ্যানাস্থেটিস্ট ডাঃ ঐশ্বর্যা সিং সোলাঙ্কি থমাস বলেন, “এটা সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত অভ্যাসের ব্যাপার। অনেক ডাক্তার আছেন যাদের হাতের লেখা খুব পরিষ্কার। এখন অনেকেই iPad বা ট্যাবলেট ব্যবহার করেন নোট নেওয়ার জন্য।”

    ফার্মাসিস্টদের মতে, প্রেসক্রিপশন পড়া অনেক সময় অনুমানের ওপর নির্ভর করে। মুম্বাইয়ের এক ফার্মাসিস্ট বলেন, “আমরা আমাদের এলাকার ডাক্তারদের লেখার ধরণ চিনে ফেলেছি। বুঝতে না পারলে সরাসরি ডাক্তারকে ফোন করি বা রোগীকে জিজ্ঞাসা করি।” দিল্লির এক ফার্মাসিস্ট জানান, “ডাক্তাররা প্রায়ই নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের ওষুধ লেখেন, তাই চেনা প্রেসক্রিপশনগুলো সহজেই বোঝা যায়।”

    ডাক্তারের খারাপ হাতের লেখা নিয়ে সমালোচনা নতুন নয়। মূলত প্রেসক্রিপশনই জনসমক্ষে আসে বলে তাদের লেখা নিয়ে এমন নজরদারি। অন্য পেশাতেও খারাপ হাতের লেখা থাকতে পারে, কিন্তু তা প্রকাশ্যে আসে না।

    আজ ডিজিটাল যুগে যেখানে সবকিছু টাইপ করা যায়, সেখানে ডাক্তারদের হাতে লেখা প্রেসক্রিপশন এখনও জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই তাদের হাতের লেখার সমস্যা শুধু রসিকতার বিষয় নয়, এটি স্বাস্থ্য নিরাপত্তার প্রশ্ন।

    সমাধানও একদিনে সম্ভব নয়। ডিজিটাল প্রেসক্রিপশন ও ই-হেলথ রেকর্ড চালুর পাশাপাশি ডাক্তারদের কাজের চাপ কমানো, এবং চিকিৎসা শিক্ষায় পরিষ্কার লেখার অভ্যাস গড়ে তোলাই হতে পারে প্রথম পদক্ষেপ।
  • Link to this news (আজকাল)