আজকাল ওয়েবডেস্ক: চলন্ত ট্রেনে আচমকাই প্রসব যন্ত্রণা। স্বামী ছাড়া সঙ্গে আর কেউ নেই। রেল স্টেশনে ট্রেন থামতেই খবর পৌঁছয় রেল পুলিশের কাছে। তড়িঘড়ি করে রেল পুলিশ, চিকিৎসক ছুটে আসেন। অবশেষে সেই রেল স্টেশনেই ফুটফুটে কন্যাসন্তানের জন্ম দিলেন ওই তরুণী।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাটি ঘটেছে আম্বালা রেল স্টেশনে। ওই তরুণী জম্মু তাওয়াই থেকে কানপুরের ট্রেনে উঠেছিলেন। শুক্রবার রাতে ট্রেনের মধ্যে প্রসব যন্ত্রণা শুরু হয় তাঁর। এরপর চলন্ত ট্রেনের মধ্যেই সন্তান প্রসবের চেষ্টা করেন। অবশেষে এক রেল স্টেশনে ফুটফুটে এক কন্যাসন্তানের জন্ম দিয়েছেন তিনি।
আম্বালা রেল স্টেশনে ট্রেনটি থামতেই রেল পুলিশ ও চিকিৎসকের টিম এসেই ওই তরুণী এবং সদ্যোজাতকে উদ্ধার করে নিয়ে যান। জানা গেছে, জম্মু থেকে স্বামীর সঙ্গেই ট্রেনে উঠেছিলেন ওই তরুণী। তাঁরা একসঙ্গে উত্তরপ্রদেশে যাচ্ছিলেন। রেল পুলিশ আধিকারিক হংসরাজ জানিয়েছেন, সেই সময় তিনিই ডিউটিতে ছিলেন। হঠাৎ ট্রেনের যাত্রীরা তাঁকে জানান, জম্মু - কানপুর এক্সপ্রেসের জেনারেল কামরায় এই তরুণী প্রসব যন্ত্রণায় ছটফট করছেন।
ট্রেনটি আম্বালা রেল স্টেশনে থামতেই ওই কামরায় উঠে পড়েন রেল পুলিশ আধিকারিক ও এক মহিলা পুলিশ। প্রসব যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে তরুণীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছিল। তড়িঘড়ি করে চিকিৎসকের টিমকে ডাকা হয়। এরপর সেই তরুণীকে সেই ট্রেন থেকে উদ্ধার করে রেল স্টেশনের একটি ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়। দুই মহিলা পুলিশ, চিকিৎসক ও স্বামী ছিলেন সেই সময়। সেই ঘরেই সন্তান প্রসব করেন তরুণী।
এরপর তড়িঘড়ি করে তরুণী ও সদ্যোজাতকে আম্বালা সিভিল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বর্তমানে মা ও সদ্যোজাত সন্তান সুস্থ ও স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছেন।
প্রসঙ্গত, গত জুলাই মাসেই বেহাল রাস্তার জেরে হাসপাতালে পৌঁছনোর আগেই অ্যাম্বুল্যান্সে সন্তান প্রসব করেছিলেন এক তরুণী। সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাটি ঘটেছিল মধ্যপ্রদেশের সিধি জেলায়। জানা গেছে, সিধি জেলায় বারিগওয়ান গ্রামে ঘটনাটি ঘটেছিল। এই গ্রামে মূলত আদিবাসীদের বসবাস। সবমিলিয়ে ৭০টি পরিবার থাকে। আদিবাসী তরুণীর নাম, প্রীতি রাওয়াত।
প্রতি বছর বর্ষায় চরম ভোগান্তির শিকার হন বারিগওয়ান গ্রামের বাসিন্দা। মূল সড়ক থেকে গ্রাম পর্যন্ত কোনও পাকা রাস্তা নেই। প্রবল বৃষ্টির জেরে নদীর জলে জলমগ্ন হয়ে পড়ে গ্রামটি। কাদায় ভরে যায় গ্রামের সব পথ। স্কুল, কলেজ, বাজার, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পৌঁছতে ব্যাপক কসরৎ করতে হয় এই গ্রামের বাসিন্দাদের। এমনকী পড়ুয়ারাও নিত্যদিন জীবন বাজি রেখে, পরিশ্রম করেই স্কুলে পৌঁছয়। বিশেষত, গুরুতর কেউ অসুস্থ হলে, সন্তান প্রসবের মতো ঘটনার ক্ষেত্রে পরিস্থিতি আরও শোচনীয় হয়ে ওঠে।
দিন কয়েক আগে বাড়িতেই প্রসব যন্ত্রণায় ছটফট করতে শুরু করেন প্রীতি। দ্রুত খবর দেওয়া হয় অ্যাম্বুল্যান্সে। সময় মতো অ্যাম্বুল্যান্স পৌঁছেও যায় গ্রামের কাছে। কিন্তু মূল সড়ক থেকে গ্রামের মধ্যে অ্যাম্বুল্যান্সটি ঢুকবে না বলে জানিয়ে দেন চালক। কাদায় একবার গাড়ির চাকা বসে গেলে, বিপত্তি বাড়বে। এই পরিস্থিতিতে গ্রামে অ্যাম্বুল্যান্স চলাচল করতে পারবে না বলে জানান চালক।
এরপর প্রীতিকে 'ডোলি'তে নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা দেন পরিবারের সদস্যরা। একটি বাঁশের লাঠিতে দড়ি দিয়ে নিচে একটি কাপড় ঝোলানো হয়। সেই কাপড়ের মধ্যে ঝুলতে ঝুলতে দুই কিলোমিটার পথ পেরিয়ে মূল সড়কে অ্যাম্বুল্যান্সে গিয়ে ওঠেন প্রীতি। হাসপাতালে যাওয়ার আগে অ্যাম্বুল্যান্সেই সন্তান প্রসব করেন। পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, মা ও সন্তান দু'জনেই সুস্থ রয়েছে। বর্তমানে সেমরিয়া হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
চিফ মেডিক্যাল অ্যান্ড হেল্থ অফিসার ড. ববিতা খারে জানিয়েছেন, অ্যাম্বুল্যান্স সময় মতো পৌঁছেও গ্রামের মধ্যে ঢুকতে পারেনি। পাকা রাস্তা না থাকার জন্যেই সমস্যা হয়। মূল সড়কে অ্যাম্বুল্যান্সটি অপেক্ষা করছিল। ঘটনাটি ঘিরে সমালোচনায় মুখর হয়েছেন সমাজকর্মীরা। তাঁদের দাবি, পরিবারের সদস্যরা সময়মতো তরুণীকে নিয়ে রওনা না দিলে, মা ও সন্তানের মৃত্যু হতে পারত। রাজ্য সরকারের গাফিলতিতে অন্তঃসত্ত্বাদের জীবন এখন বিপন্ন।