আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভয়াবহ পরিস্থিতি পাহাড়ে। টানা কয়েকঘণ্টার বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গের একাধিক জেলা। নদীর জল বইছে বিপদ সীমার উপরে। রাস্তাঘাট, রেললাইন জলের তলায়। জায়গায় জায়গায় পাহাড়ি রাস্তায় ধস। বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। এর মাঝেই রবিবার জানা গেল, পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে সোমবারেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি যাচ্ছেন উত্তরবঙ্গে।
উত্তরবঙ্গ সফরে মমতা-
রবিবার মুখ্যমন্ত্রী নিজে জানিয়েছেন, সোমবার শিলিগুড়ি যাচ্ছেন তিনি। উত্তরবঙ্গ সফরে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে যাচ্ছেন রাজ্যের মুখ্যসচিবও। রবিবার তিনি নবান্ন থেকে উত্তরবঙ্গের পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছেন। এদিন মমতা ব্যানার্জি বলেন, 'আমি এবং মুখ্যসচিব আগামিকাল যাচ্ছি। শিলিগুড়ি থেকে পরিস্থিতির দিকে নজর রাখব। ইতিমধ্যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী পাঠানো হয়েছে অন্য রাস্তা দিয়ে।' একইসঙ্গে সূত্রের খবর, উত্তরবঙ্গের পাঁচ জেলার সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী এবং মুখ্যসচিব।
রবিবার উত্তরবঙ্গের পরিস্থিতি প্রসঙ্গে সংবাদ মাধ্যমে উদ্বেগ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি পরিস্থিতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানানও। বলেন, 'মিরিক, দার্জিলিং, কালিম্পংয়ে প্রায় সাতটার বেশি ভূমি ধস হয়েছে প্রবল বর্ষণে। দার্জিলিং, মিরিকের লোহার ব্রিজ ভেঙেছে। কালিম্পংয়ের রাস্তা বন্ধ। অনেক পর্যটক আটকে রয়েছেন।'
পর্যটকদের জন্য বার্তা-
পর্যটকদের নিয়েও এদিন বড় বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, 'আমি বলেছি, পর্যটকরা যে যেখানে রয়েছেন, সেখানেই থাকবেন এখন। তার জন্য যেন অতিরিক্ত হোটেল ভাড়া না দিতে হয়। হোটেল মালিক যেন অতিরিক্ত চাপ না দেন এই বিষয়ে, প্রশাসন নজর রাখবে সেদিকে। তাঁরা যেন তাড়াহুড়ো না করেন, আমরা সুরক্ষিতভাবে ফিরিয়ে আনব। এটা আমাদের দায়িত্ব। আমরা সবাইকে ঠিকমতো পৌঁছে দেব।'
প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত জানা গিয়েছে, উত্তরবঙ্গের একাধিক জায়গায় বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সেই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বিস্তারিত তথ্য চাওয়া হয়েছে। ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে মিরিকে। জাতীয় সড়কে ধস নেমেছে, সেতু নষ্ট হয়েছে। একাধিক জায়গা জলমগ্ন বলেও জানান মুখ্যমন্ত্রী। পরিস্থিতির তুলনা করেন পুজোর মুখে কলকাতার রাতভরের বৃষ্টি পরিস্থিতির সঙ্গে।
উত্তরের পরিস্থিতির কথা বলার সঙ্গেই ডিভিসির জল ছাড়ার কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, 'দক্ষিণবঙ্গে ডিভিসি আবার জল ছেড়েছে। ঘাটাল ভাসছে, হাওড়া-হুগলি-বাঁকুড়ায় জল আসছে। ব্যাপক ফোর্সে জল ছাড়ছে। আমি তো বলেইছি বাংলা অনেকটা নৌকার মতো।'
রাত থেকে সকাল, টানা বৃষ্টি। কলকাতার এক রাতের জলযন্ত্রণার ছবি যেন আরও ভয়াবহ হয়ে ফিরল উত্তরবঙ্গে। ভারী বৃষ্টির জেরেই উত্তরবঙ্গ একপ্রকার বিপর্যস্ত। জানা গিয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় ১৯০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে উত্তরের জেলাগুলিতে। ১২ ঘণ্টায় বৃষ্টি হয়েছে ৩০০ মিমি-র বেশি। তথ্য তেমনটাই। একাধিক জায়গায় ধস, ভেঙে পড়েছে সেতু, কোথাও মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত যোগাযোগের একমাত্র পথ। আটকে পর্যটকরা। আতঙ্ক ব্যাপক। তার মাঝেই জানা গিয়েছে, একাধিক জায়গায় রেললাইনও জলের তলায়। পরিস্থিতি বিচারে, ওই পথের একাধিক ট্রেনের পথ ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে, বাতিল আরও একাধিক ট্রেন।
একাধিক সংবাদ মাধ্যম সূত্রে খবর, মিরিকে ভেঙে পড়েছে লোহার ব্রিজ। মৃত্যু হয়েছে একাধিক মানুষের। মিরিকের জসবির বস্তিতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে ধসের কারণে, জানা গিয়েছে তেমনটাও। তবে প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা নিশ্চিত করা যায়নি। তবে প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত জানা গিয়েছে, মিরিকে ধসে চাপা পড়ে প্রাণ গিয়েছে দুই শিশুর। ভয়াবহ পরিস্থিতি তাবাকোশির।
প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য, ১০ জনের বেশি সংখ্যক মানুষের মৃত্যুর খবর মিলেছে পাহাড়ে। এর মধ্যে শুধু মিরিকেই মৃত্যু হয়েছে ৯ জনের। একাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে সুখিয়াপোখরিতে। বিজনবাড়িতে মৃত্যু হয়েছে একজনের, স্থানীয় সূত্রের খবর তেমনটাই। ধসের নীচে এখনও অনেকে চাপা পড়ে আছেন বলে আশঙ্কা। এখনও ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে পাহাড়ে। পরিস্থিতি বিচারে পর্যটকদের আপাতত হোটেল ছেড়ে না বেরোনোর পরামর্শ দিয়েছেন দার্জিলিংয়ের পুলিশ সুপার প্রবীণ প্রকাশ।