• ত্রয়োদশীতে বীরভূমের কঙ্কালীতলায় ৫১ কুমারী পুজো, ভক্তসমাগমে উপচে পড়ল পীঠক্ষেত্র...
    আজকাল | ০৫ অক্টোবর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: একান্নটি সতীপীঠের অন্যতম বীরভূমের কঙ্কালীতলা আজও পূণ্যার্থীদের কাছে সমান আকর্ষণের। বিশেষ দিনে ভিড় বাড়ে ব্যাপক হারে। প্রতিবছরের মতো ত্রয়োদশী তিথিতে এদিন অনুষ্ঠিত হল বিখ্যাত ৫১ কুমারী পুজো। সকাল থেকেই ভক্তদের ঢল নামে শান্তিনিকেতনের অদূরের এই পীঠক্ষেত্রে। কালীমন্দির সংলগ্ন পঞ্চবটী গাছের নিচে এই পুজো অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে জেলার নানা প্রান্ত থেকে কয়েক হাজার ভক্ত উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গিয়েছে।

    স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৪৮ বছর আগে কাপাসটিকুড়ি গ্রামের চট্টোপাধ্যায় পরিবারের সদস্য বুদ্ধদেব চট্টোপাধ্যায় স্বপ্নাদেশ পেয়ে শুরু করেন এই কুমারী পুজো। এরপর থেকে প্রতিবছর ত্রয়োদশীতে ৫-৯ বছর বয়সী ৫১ জন কুমারীকে নির্বাচিত করে লালপেড়ে শাড়ি পরিয়ে দেবীর রূপে পুজো করা হয়। সতীর দেহের ৫১ খণ্ডের সংকল্প করে ঘটে স্থাপন করা হয়, এবং মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমে সতীর পূর্ণাঙ্গ রূপে পুজো সম্পন্ন হয়।

    এই বিশেষ পুজো উপলক্ষে কঙ্কালীতলায় মেলা বসে, এলাকার বাতাস ভরে ওঠে ঘণ্টা, শঙ্খ আর ধূপের গন্ধে। ভোগ শেষে কুমারীদের হাতে দেওয়া খাদ্য প্রসাদ হিসেবে বিতরণ করা হয় ভক্তদের মধ্যে।

    কথিত আছে, সতীর দেহের একটি অংশ এই কঙ্কালীতলাতেই পড়েছিল। তাই এখানকার কুমারী পুজো শুধুমাত্র এক প্রাচীন ঐতিহ্য নয়, ভক্তির এক গভীর প্রতীক— যেখানে দেবী ও কুমারীত্বের মহিমা একত্রে উদযাপিত হয়।

    কঙ্কালীতলা বলতেই উঠে আসে, অদূরের একটি দুর্গাপুজোর প্রসঙ্গও। স্বাধীনতার আগেকার কথা। বোলপুর শহরে তখন হাতে গোনা কয়েকটি দুর্গাপুজো হত। ভুবনডাঙার মানুষদের নিজেদের এলাকায় কোনও সর্বজনীন দুর্গাপুজো না থাকায় এলাকার কচিকাঁচা ও গৃহবধূদের ভিন্ন এলাকায় গিয়ে পুজো দেখতে হত। এই অভাব ঘোচাতে এলাকার একদল তরুণ এগিয়ে এসে প্রতিষ্ঠা করেন ভুবনডাঙা আদি সর্বজনীন দুর্গাপুজো কমিটি। তাঁদের হাতে গড়া সেই উদ্যোগই আজ বোলপুরের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী দুর্গাপুজোর আসর।

    ১৯৪৫ সালে ভুবনডাঙায় প্রথম দুর্গাপুজোর সূচনা হয় মাটির চালাঘরে। প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের মধ্যে ছিলেন দিবাকর হাজরা, নিশাপতি মাঝি, দ্বিজপদ হাজরা, অভয়পদ রায়, শ্যামাপদ হাজরা প্রমুখ। তবে এই ইতিহাসে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য একটি ঘটনা রয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পুত্র রথীন্দ্রনাথের পত্নী প্রতিমাদেবী সেই সময় ভুবনডাঙার দুর্গাপুজো কমিটিকে উৎসাহ দিতে ১০০ টাকা দান করেছিলেন। স্বাধীনতার পূর্ববর্তী সময়ে একশো টাকা ছিল এক বিরাট অঙ্কের অর্থ। কিন্তু কেবল টাকার পরিমাণেই এই দানের তাৎপর্য সীমাবদ্ধ নয়। কারণ, তৎকালীন সময়ে বিশ্বভারতীর অধিকাংশ শিক্ষক-শিক্ষার্থী ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষিত থাকায় শান্তিনিকেতনের অভ্যন্তরে মূর্তি পুজো প্রচলিত ছিল না। ফলে আশ্রমিকরা ও ঠাকুর পরিবারের বহু সদস্য ভুবনডাঙার এই দুর্গাপুজোতে এসে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করতেন। প্রতিমা দেবীর সেই আর্থিক সহায়তা তাই ছিল এক ঐতিহাসিক প্রেরণা। যা আশ্রমিকদের কাছে এই পুজোকে গ্রহণযোগ্য করে তোলে এবং গ্রামবাসীর উৎসাহকে বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। সেই থেকেই ভুবনডাঙার দুর্গাপুজো ধীরে ধীরে হয়ে ওঠে এক সর্বজনীন মিলনমেলা।

    সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই কমিটি শুধুই পুজোয় সীমাবদ্ধ থাকেনি। ২০০১ সালে নাটমন্দির প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে পুজোর আয়োজনকে আরও গৌরবান্বিত করা হয়। পাশাপাশি সারাবছর ধরে নানা সমাজসেবামূলক কাজে সক্রিয় থেকেছে কমিটি। দুঃস্থদের বস্ত্রদান, শীতবস্ত্র বিতরণ, বৃক্ষরোপণ, রক্তদান শিবির, স্বাস্থ্যশিবির থেকে শুরু করে গ্রামের ছেলে-মেয়েদের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত করার মতো নানা উদ্যোগ আজও এই কমিটির প্রধান কাজ।

     
  • Link to this news (আজকাল)