পুজোয় পরিবারকে নতুন জামা কিনে দেওয়ার জন্য যুবকের হাড়হিম করা কান্ড ...
আজকাল | ০৫ অক্টোবর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: পুজোয় পরিবারকে নতুন জামা কাপড় কিনে দেওয়ার জন্য এক টোটো চালককে খুন করার অভিযোগে গ্রেপ্তার হলেন চার ব্যক্তি। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ঘটেছে মুর্শিদাবাদের বহরমপুর থানার কুদবাপুকুর এলাকায়। খুনের ঘটনায় ধৃতদের পাঁচ দিনের পুলিশ হেফাজতের আবেদন করে রবিবার বহরমপুর আদালতে পেশ করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দৌলতাবাদ থানার অন্তর্গত দেবীদাসপুর গ্রামের বাসিন্দা আলহামিন শেখ (৩০) নামে এক টোটোচালক প্রায় প্রতিদিনই নিজের গাড়ি নিয়ে বহরমপুর শহরে ভাড়া খাটতে আসতেন। দুর্গাপুজোর পঞ্চমীর দিন বিকেল বেলা ওই যুবক নিজের টোটো নিয়ে বহরমপুর শহরে এসেছিলেন। সেই দিন বহরমপুর শহরের চুঁয়াপুর এলাকার বাসিন্দা সুজন হাজরা নামে বছর ৩৫-এর এক যুবক মোহনা বাসস্ট্যান্ডের কাছ থেকে ৬০০ টাকা দিয়ে আলহামিনের টোটো ভাড়া করেন এবং চালক আলহামিন শেখকে বলেন কুদবাপুকুর এলাকায় তাকে একটি বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য।
মুর্শিদাবাদ পুলিশ জেলার ডিএসপি সুশান্ত রাজবংশী বলেন,'রাত প্রায় সাড়ে এগারোটা নাগাদ কুতবাপুকুর এলাকায় পৌঁছানোর পর ওই টোটোর যাত্রী সুজন হাজরা প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়ার জন্য একটি নির্জন স্থানে টোটো চালককে গাড়িটি দাঁড় করাতে বলেন।' পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, টোটো চালক আলহামিন শেখ রাস্তার ধারে টোটোটি দাঁড় করানোর কিছুক্ষণের মধ্যে হঠাৎ করেই সুজন হাজরা তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং প্রচন্ড মারধর করতে শুরু করে।আলহামিন সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়লে সুজন তাকে পাশেই থাকা একটি পুকুরে শ্বাসরোধ করে ফেলে দিয়ে টোটোটি নিয়ে ওই এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। অন্যদিকে আলহামিনের পরিবার তার কোনও খোঁজ না পেয়ে পরের দিন দৌলতাবাদ থানায় থানায় একটি নিখোঁজ ডাইরি করে। এই ঘটনার দু'দিন পর বহরমপুর থানার পুলিশ কুদবাপুকুর এলাকায় তখনও পর্যন্ত অজ্ঞাত পরিচয় আলহামিনের দেহ একটি পুকুর থেকে উদ্ধার করে।
সুশান্ত রাজবংশী বলেন,' ওই যুবকের মৃতদেহের ময়নাতদন্তে জানা যায় এটি স্বাভাবিক মৃত্যু নয় ,তাকে খুন করা হয়েছে। এরপরই আমরা তদন্ত শুরু করে বিভিন্ন এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা শুরু করি। তখন জানা যায় সুজন হাজরা নামে এক যুবক ওই টোটোটি ভাড়া করেছিলেন। দুর্গাপুজোর সময় ওই যুবক প্রচন্ড আর্থিক সঙ্কটে ভুগছিলেন এবং তার টাকার দরকার ছিল। সেই কারণে আলহামিনকে খুন করার পর ওই যুবক টোটোটি জগন্নাথ ঘাটের কাছে নিয়ে আসে এবং তারই এক প্রতিবেশী উকিল চৌধুরীর সাহায্য নিয়ে টোটোতে থাকা ব্যাটারিগুলো খুলে নিয়ে বহরমপুর থানার অন্তর্গত গজধরপাড়া এলাকার বাসিন্দা তথা ওই এলাকার একটি দোকানের মালিক মনিরুজ্জামানকে ১০ হাজার টাকার বিনিময় বিক্রি করে দেয়।' পুলিশ সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, সুজনকে অনলাইনে ১০ হাজার টাকা দেওয়ার পর মনিরুজ্জামান চুরি করা ওই ব্যাটারি জামাল শেখ নামে অপর এক ব্যক্তিকে বিক্রি করে দেন। পুজোর সময় সুজন তার পরিবারের সদস্যদেরকে নতুন জামাকাপড় কিনে দিতে পারেনি। সেই কারণে তার টাকার দরকার ছিল। টোটো চালক আলহামিনের সঙ্গে তার পূর্ব কোনও শত্রুতা ছিল না । টাকার প্রয়োজন থাকায় হঠাৎ করেই সুজন ওই টোটো চালককে খুন করার পরিকল্পনা করে। পুলিশ ইতিমধ্যে চুরি যাওয়া টোটো এবং খোয়া যাওয়া ব্যাটারিগুলোও উদ্ধার করেছে।
জেলা পুলিশের ডিএসপি বলেন,' এই খুনের ঘটনার সঙ্গে সুজন হাজরা একাই জড়িত, বাকি তিনজন ওই টোটোর ব্যাটারি চুরি এবং সেই চোরাই মাল বিক্রির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ধৃতদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধারায় মামলা রুজু করে রবিবারই তাদের আদালতে পেশ করা হচ্ছে।'