আজকাল ওয়েবডেস্ক: উৎসবের মরশুমে বিহারের মুঙ্গের থেকে মুর্শিদাবাদ জেলায় বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র এবং গুলি পাচার করতে গিয়ে রবিবার সকালে মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুর থানার পুলিশ এবং জেলা পুলিশের স্পেশাল অপারেশন গ্রুপের যৌথ অভিযানে ধরা পড়লেন তিনজন অস্ত্রপাচারকারী।
রবিবার সকালে বহরমপুর থানার পুলিশ এবং জেলা পুলিশের এসওজি-র অফিসাররা বহরমপুর মোহনা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অভিযান চালিয়ে দু'জন আগ্নেয়াস্ত্র পাচারকারীকে হাতেনাতে ধরে। এরপর তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এই চক্রের মূল পান্ডাকে ধরা হয়।
মুর্শিদাবাদ পুলিশ জেলার অতিরিক্ত সুপার (হেডকোয়ার্টার) মাজিদ ইকবাল খান বলেন,"ধৃত ব্যক্তিদের নাম জাহাবুল মন্ডল (৩২) এবং মুকুল মন্ডল (৩২)। তাদের দু'জনেরই বাড়ি মুর্শিদাবাদ থানার রঞ্জিতপাড়া গ্রামে। এই দুই ব্যক্তিকে হকদার শেখ (৪৯) নামে মুর্শিদাবাদ থানার অন্তর্গত গুধিয়া গ্রামের এক বাসিন্দা মুঙ্গের থেকে অস্ত্র আনার বরাত দিয়েছিল বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে।"
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন," ধৃতদের হেফাজত থেকে ৮ টি অত্যন্ত উন্নত মানের ৭.৬৫ এমএম পিস্তল ১৬ টি খালি ম্যাগাজিন এবং ৮ টি তাজা কার্তুজ উদ্ধার হয়েছে। এর পাশাপাশি তাদের কাছ থেকে ১২ টি জাল ৫০০ টাকার ভারতীয় নোট উদ্ধার হয়েছে।"
ধৃতদের দশ দিনের পুলিশে হেফাজতের আবেদন জানিয়ে আদালতে পেশ করা হচ্ছে।
জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন ," গোপন সূত্রে খবর পেয়ে রবিবার সকালে বহরমপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অভিযান চালিয়ে ওই তিন ব্যক্তিকে ধরা হয়েছে।" প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে কয়েকদিন আগে জাহাবুল এবং মুকুল মুঙ্গের গিয়েছিল। সেখানকার আগ্নেয়াস্ত্র কারবারিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তারা বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র ,ম্যাগাজিন ও গুলি জোগাড় করে। এরপর সেগুলো মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন দুষ্কৃতীদের কাছে বিক্রি করার জন্য তারা রবিবার সকালে রামপুরহাট থেকে বহরমপুরে ফিরে আসছিল।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে ,গতকাল ওই দুই যুবক ট্রেনে করে মুঙ্গের থেকে জামালপুরে আসে। এরপর সেখান থেকে বাসে করে রামপুরহাটে এসে পৌঁছায়।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান," প্রাথমিক তদন্ত চালিয়ে আমরা জানতে পেরেছি জাহাবুল এবং মুকুলকে অস্ত্র আনার জন্য হকদার শেখ নামে ধৃত অপর ব্যক্তি বরাত দিয়েছিল। অভিযুক্ত হকদারের বিরুদ্ধে এর আগেও অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের হয়েছে এবং সে গ্রেপ্তারও হয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসের ১৭ তারিখ সে আদালত থেকে জামিন পেয়ে বাইরে এসেছিল। তারপর ফের অস্ত্র কারবারের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে।" পুলিশ সূত্রের খবর ওই ব্যক্তি এর আগে মুর্শিদাবাদের ইসলামপুর থানার হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিল।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান ," প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হকদার জানিয়েছে বাজারে তার বড় অঙ্কের দেনা রয়েছে। তা শোধ করার জন্যই অস্ত্র বিক্রির ব্যবসা শুরু করেছিল সে।"
জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, রাজ্যে আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচন । তার আগেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আশ্রিত দুষ্কৃতীরা গোপনে আগ্নেয়াস্ত্র এবং গুলি মজুত করা শুরু করেছে। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে এই চক্রের তিন অপরাধী ভিন রাজ্য থেকে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে এসে জেলার দুষ্কৃতীদের বিক্রি করার পরিকল্পনা করেছিল।
ওই আধিকারিক আরও বলেন, " উৎসবের মরশুমে পুলিশের নজরদারি সাধারণ মানুষের নিরাপত্তায় বেশি থাকবে , এই আশা করে দুষ্কৃতীরা বাসে-ট্রেনে সাধারণ মানুষের ভিড়ে মিশে গিয়ে ভিন রাজ্য থেকে এই জেলায় আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে এসেছিলো।"