টানা বর্ষণে বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গের জনজীবন। তিস্তা, মহানন্দা, জলঢাকা সহ একাধিক নদীর জল বিপদসীমার অনেক উপরে দিয়ে বইছে। পাহাড় থেকে সমতল সর্বত্রই বন্যার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, একাধিক জেলায় দেখা দিয়েছে ধস, নদীভাঙন ও প্লাবনের মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয়। বিপদের মুখে বহু মানুষ। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে সোমবারই মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে সঙ্গে নিয়ে উত্তরবঙ্গ রওনা হচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
রবিবার সকালে এক সংবাদমাধ্যমকে মুখ্যমন্ত্রী জানান, সোমবার বিকেলের মধ্যেই তিনি পৌঁছে যাবেন শিলিগুড়িতে। সেখান থেকেই উত্তরবঙ্গের বন্যা পরিস্থিতি, ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যক্রমের উপর সরাসরি নজর রাখবেন। সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী শিলিগুড়িতে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন। ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলগুলি পরিদর্শন করারও পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর। প্রশাসনের তরফে ইতিমধ্যেই ত্রাণ ও উদ্ধারকার্যে গতি আনা হয়েছে। নবান্নে খোলা হয়েছে ২৪ ঘণ্টার কন্ট্রোল রুম। প্রতিটি জেলা প্রশাসনকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তিস্তাবাজার সংলগ্ন তিস্তার পাড় থেকে প্রায় দেড়শো পরিবারকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে নিরাপদ স্থানে। পাহাড়ে নিরবচ্ছিন্ন বৃষ্টির জেরে বিভিন্ন নদীর জলস্তর বিপজ্জনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। কামারঘাটে জলবন্দি হয়ে পড়েছে একদল হাতি। কালীবাড়িতে দেখা গিয়েছে একটি গণ্ডার। কাশিয়ারবাড়িতে উদ্ধার হয়েছে একটি বাইসনের শাবক। কার্শিয়াংয়ের গ্রামে ঢুকে পড়েছে হরিণের পাল। বন দপ্তরের কর্মীরা প্রাণী উদ্ধারে নিযুক্ত। পুলিশ প্রশাসন জানিয়েছে, দার্জিলিংয়ের একাধিক জায়গায় ধসের খবর এসেছে। পর্যটকদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে হোটেলেই অবস্থান করতে বলা হয়েছে। কালিম্পংয়ের জেলাশাসক জানিয়েছেন, তিস্তার জল বিপদসীমা ছাড়িয়েছে, সরানো হয়েছে একাধিক পরিবারকে।
দুর্যোগের জেরে রেল পরিষেবাতেও প্রভাব পড়েছে। বাতিল করা হয়েছে এনজেপি-আলিপুরদুয়ার ট্যুরিস্ট স্পেশাল, ধুবরি-শিলিগুড়ি ডেমু স্পেশাল, শিলিগুড়ি-বক্সিরহাট এক্সপ্রেস সহ একাধিক ট্রেন। কিছু ট্রেন ঘুরপথে চালানো হচ্ছে। তিস্তার জল উপচে পড়ায় ২৯ মাইল ভালুখোলায় ১০ নম্বর জাতীয় সড়কে যান চলাচল বন্ধ। ধসের কারণে বন্ধ রয়েছে রেশিখোলার কাছেও। মিরিক ও দুধিয়ার মাঝে লোহার সেতু ভেঙে পড়ায় বিচ্ছিন্ন শিলিগুড়ির সঙ্গে মিরিক ও দার্জিলিংয়ের যোগাযোগ। ছোট গাড়িগুলিকে ঘুরপথে চলাচলের নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন, বড় গাড়ির উপর আপাতত নিষেধাজ্ঞা।
শিলিগুড়ির পোড়াঝাড়ে বাঁধ ভেঙে প্লাবিত আশপাশের এলাকা। মহানন্দা ক্যানেল ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। হাসিমারায় রেকর্ড ১৫৩ মিমি বৃষ্টি হয়েছে, জলপাইগুড়িতে ১৭২ মিমি এবং দার্জিলিংয়ে একরাতে বৃষ্টি হয়েছে ২৬৮ মিমি। তোর্সা নদীর জল ১১৮ মিটার ছাড়িয়ে যাওয়ায় জারি হয়েছে লাল সতর্কতা। উত্তরবঙ্গের পাহাড়ি ও তরাই অঞ্চলজুড়ে নদীভাঙন, ধস ও প্লাবনের ত্রিমুখী আঘাতে সাধারণ মানুষের জীবনে চরম দুর্ভোগ। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক তৎপরতায় ত্রাণ ও উদ্ধার কাজ চালানো হচ্ছে।