রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় ও ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: একটানা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গ। শনিবার রাতভর প্রবল বৃষ্টিতে একাধিক জায়গায় ধস নেমেছে উত্তরবঙ্গে। মৃত একাধিক। বন্ধ বহু রাস্তা। জলমগ্ন বিস্তীর্ণ এলাকা। হোটেলগুলিতে আটকে রয়েছেন পর্যটকরা।
পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছেন মুখ্যমন্ত্রী। এই অবস্থায় ‘রাজনীতি’ দূরে সরিয়ে একসঙ্গে কাজ করার বার্তা দিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার। একইভাবে এই দুর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য।
এক বিবৃতিতে কংগ্রেস সভাপতি বলেন, ‘উত্তরবঙ্গের বিধ্বংসী প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। বহু জীবনহানি এবং আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আমরা উত্তরবঙ্গের সমস্ত জেলা কংগ্রেস কমিটির সভাপতিদের ইতিমধ্যে নির্দেশ পাঠিয়েছি যে, আমাদের সাধ্য অনুযায়ী দুর্গতদের পাশে গিয়ে দাঁড়াতে হবে।’ পাশাপাশি তিনি প্রশাসনকে হুঁশিয়ারি দিয়ে জানিয়েছে, ‘প্রশাসনের কাছে আমাদের বক্তব্য, ত্রাণ বন্টনের ক্ষেত্রে কোনোরকম দলবাজি যেন না হয়, সে বিষয় নিশ্চিত করতে হবে। আমরা স্থানীয় কংগ্রেস নেতৃত্বকেও বলছি, প্রশাসনের সঙ্গে সর্বক্ষণ যোগাযোগ স্থাপন করে চলুন।’ যদিও এই সময়ে ‘রাজনীতি’র ঊর্ধ্বে উঠে মানুষের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন তিনি। শুভঙ্কর জানিয়েছে, ‘এই দুর্যোগের সময় রাজনীতি করতে চাইনা আমরা। কিন্তু যদি মানুষের প্রতি বঞ্চনা হয়, ত্রাণ নিয়ে দলবাজি হয় তবে আমরা রাজনৈতিক ভাবেই তার মোকাবিলা করব।’
অন্যদিকে, এক্স হ্যান্ডেলের একটি পোস্টে বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, ‘শনিবার সন্ধ্যা থেকে টানা বৃষ্টিতে দার্জিলিং ও কালিম্পংয়ের পাহাড় বিধ্বস্ত। একের পর এক ধস নেমে বহু রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে, তিস্তার জল উঠে এসেছে জাতীয় সড়ক পর্যন্ত। এখনও পর্যন্ত অন্তত ১৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।’ প্রধানমন্ত্রীর বার্তার কথা উল্লেখ করে শমিক বলেন, ‘উত্তরবঙ্গের এই ভয়াবহ পরিস্থিতি নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীজি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং আশ্বাস দিয়েছেন ? কেন্দ্রীয় সরকার সর্বতোভাবে রাজ্যের মানুষের পাশে রয়েছে।’ মানুষের পাশে থাকার বার্তা দিয়ে শমিকের বক্তব্য, ‘এই কঠিন সময়ে আমরা উত্তরবঙ্গবাসীর সঙ্গে একাত্ম। ভূটানে প্রবল বর্ষণের জেরে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার নিয়েছে। এই দুর্যোগ আমাদের সকলের, এই শোক আমাদের সবার। কিন্তু আমরা হার মানব না।’ দলের কর্মীদের মানুষের পাশে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, ‘দলের প্রতিটি কর্মী ও শুভানুধ্যায়ীর কাছে আহ্বান ? মানুষের পাশে দাঁড়ান, সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন।’
একই সুর শোনা গিয়েছে সিপিআইএম নেতা মহম্মদ সেলিমের গলায়। কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারকে একযোগে এই দুর্যোগ মোকাবিলা করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। উত্তরবঙ্গের বন্যায় প্রাণ হারানো সকলের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন এক্স হ্যান্ডেলের পোস্টে। পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেন, এই দুর্যোগের সময়ে ত্রাণের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছে রেড ভলেন্টিয়ার। সবাইকে উত্তরবঙ্গের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
সোমবার উত্তরবঙ্গ যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে যাবেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। দুপুর তিনটের মধ্যে উত্তরবঙ্গে পৌঁছে যাবেন তিনি। এক সংবাদমাধ্যমে এমনটাই জানিয়েছেন তিনি নিজে। ইতিমধ্যেই উত্তরবঙ্গের ডিএমদের সঙ্গে ভারচুয়াল বৈঠক করেছেন। দিয়েছেন প্রয়োজনীয় নির্দেশ। পর্যটকদের হোটেল থেকে বেরতে বারণ করেছেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান। তিনি জানিয়েছেন, উদ্ধারকারী দল পাঠানো হয়েছে। যাঁদের বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত, মৃতদের পরিবারকে আর্থিক সহয়তা ও চাকরি দেওয়ার কথা বলেছেন তিনি। শনিবার একটি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “এটি একটি দুর্যোগ। দুর্যোগে সবার পাশে থাকা উচিত। আগামিকাল আমি আর সিএস (মুখ্যসচিব) উত্তরবঙ্গ যাচ্ছি। আশা করছি দুপুর তিনটের মধ্যে ওখানে পৌঁছে যাব।”