দার্জিলিঙে এক রাতে কতটা বৃষ্টি হল? উত্তরের বাকি জেলাতেই বা কত বর্ষণ? কলকাতার সেই রাতকেও ছাপিয়ে গেল পাহাড়!
আনন্দবাজার | ০৫ অক্টোবর ২০২৫
এক রাতের টানা বৃষ্টিতে দার্জিলিং বিপর্যস্ত। বহু জায়গায় ধস নেমেছে। বিচ্ছিন্ন যোগাযোগ। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের পরিসংখ্যান বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় মোট ২৬১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে শুধু দার্জিলিঙেই। এ ছা়ড়া, শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি এবং কোচবিহারেও প্রবল বৃষ্টি হয়েছে। কলকাতায় পুজোর আগে এক রাতের টানা যে বৃষ্টিতে বিপর্যয় নেমে এসেছিল, উত্তরবঙ্গে শনিবার বৃষ্টির পরিমাণ তার চেয়েও বেশি।
উত্তরবঙ্গে বৃষ্টি হবে, আগেই জানিয়েছিল আবহাওয়া দফতর। জলপাইগুড়ি এবং আলিপুরদুয়ারে অতি প্রবল বর্ষণের লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছিল। দার্জিলিং, কালিম্পং, কোচবিহারেও ছিল অতি ভারী বর্ষণের কমলা সতর্কতা। কিন্তু এতটা বৃষ্টি হবে, অনেকেই ভাবতে পারেননি। হাওয়া অফিসের পরিসংখ্যান বলছে, শনিবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে রবিবার সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত দার্জিলিঙে মোট ২৬১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে খবর, সকালের দিকে তেমন বৃষ্টি ছিল না। মূলত বৃষ্টি হয়েছে সন্ধ্যার পর থেকেই। এ ছাড়া, গত ২৪ ঘণ্টায় কোচবিহারে ১৯০.২ মিলিমিটার, জলপাইগুড়িতে ১৭২ মিলিমিটার এবং বাগডোগরা-শিলিগুড়িতে ১৩৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। জাতীয় এবং রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী উদ্ধারকাজে নেমেছে। এনডিআরএফ-এর তথ্য বলছে, শুধু কার্শিয়াঙে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৯৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আলিপুর এই তথ্য নিশ্চিত করেনি।
মহালয়ার ঠিক পরে গত ২৩ সেপ্টেম্বর এক রাতের বৃষ্টিতে অচল হয়ে পড়েছিল কলকাতা। সে দিন ২৪ ঘণ্টায় শহরে বৃষ্টি হয়েছিল ২৫১ মিলিমিটার। তাতেই প্রায় সর্বত্র জল জমে গিয়েছিল। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় অন্তত ১০ জনের। এক বারে এতটা বৃষ্টি কলকাতায় গত ৩৯ বছরেও হয়নি। শনিবার রাতের দার্জিলিঙের বৃষ্টিকে অনেকে কলকাতার সেই বৃষ্টির সঙ্গে তুলনা করছেন। কিন্তু হাওয়া অফিসের পূর্বাভাস বলছে, পাহাড়ে আরও বেশি বৃষ্টি হয়েছে।
টানা বৃষ্টিতে দার্জিলিঙের ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রোহিণী রোডের একাংশ ধসে নেমে গিয়েছে নদীর দিকে। তিস্তা, জলঢাকার মতো নদীগুলির জল বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। রাস্তার উপর উঠে এসেছে তিস্তার জল। মিরিক এবং দুধিয়ার মাঝে লোহার সেতু ভেঙে অনেকের মৃত্যু হয়েছে। সুখিয়াতেও বেশ কয়েক জনের মৃত্যু হয়েছে। এখনও পর্যন্ত উত্তরবঙ্গ থেকে অন্তত ১৭ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা।
উত্তরবঙ্গের দুর্যোগে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি রবিবার সকাল থেকে পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছেন। নবান্নের কন্ট্রোলরুম থেকে পাঁচ জেলা প্রশাসনের সঙ্গে ভার্চুয়াল মাধ্যমে বৈঠক করেছেন মমতা। সোমবারই তিনি এবং মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ উত্তরবঙ্গের উদ্দেশে রওনা হবেন। শিলিগুড়ি থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করবেন। মমতা বলেন, ‘‘১২ ঘণ্টায় টানা ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে দার্জিলিঙে। সাত জায়গায় ধস নেমেছে। সারা পৃথিবী জুড়ে দুর্যোগ চলছে। প্রকৃতিকে অবহেলা করার জন্যেই হয়তো এমনটা হচ্ছে।’’ ভূটানে বৃষ্টির কারণে উত্তরবঙ্গে এই বিপর্যয় বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।