• মণিপুরে প্রেসিডেন্টস রুল প্রত্যাহারের দাবিতে দিল্লি গেলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এন. বীরেন সিংহ...
    আজকাল | ০৬ অক্টোবর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: মণিপুরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এন. বীরেন সিংহ শনিবার (৪ অক্টোবর) ইম্ফল বিমানবন্দর থেকে দিল্লির উদ্দেশে রওনা হওয়ার আগে জানান, তিনি কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করবেন রাজ্যে “অতি দ্রুত জনপ্রতিনিধিত্বমূলক সরকার গঠনের” দাবিতে। বর্তমানে মণিপুর প্রেসিডেন্টস রুল-এর অধীনে রয়েছে।

    বীরেন সিংহের সঙ্গে ছিলেন ইম্ফল ভ্যালির তিন বিধায়ক – টি. রবীন্দ্র, সপম রঞ্জন এবং এইচ. ডিঙ্গো সিংহ। তাঁরা বিজেপির উত্তর-পূর্ব দায়িত্বপ্রাপ্ত সম্বিত পাত্রর সঙ্গে বৈঠক করবেন। একইসঙ্গে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গেও সাক্ষাতের চেষ্টা চলছে বলে তিনি জানান।

    গত ১৩ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মণিপুর সফরের পর এই প্রথম রাজ্যের শীর্ষ বিজেপি নেতৃত্ব দিল্লি যাচ্ছে। ইম্ফলে ক্রমবর্ধমান জনমতের চাপে বিজেপি নেতৃত্ব এই পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছে। আসন্ন নিঙোল চাকৌবা উৎসবকে সামনে রেখে প্রেসিডেন্টস রুল প্রত্যাহারের দাবি আরও জোরালো হয়েছে।

    মণিপুর বিধানসভার স্পিকার শতব্রত সিংহ-সহ আরও কয়েকজন বিজেপি বিধায়ক রবিবার দিল্লি পৌঁছবেন বলে জানা গিয়েছে। উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৩ মে শুরু হওয়া জাতিগত হিংসার  ৬৪৯ দিন পর, চলতি বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেন বীরেন সিংহ। তিন দিন পর, ১৩ ফেব্রুয়ারি রাজ্যে প্রেসিডেন্টস রুল জারি হয়। তবে বিধানসভা ভেঙে দেওয়া হয়নি, বরং স্থগিত অবস্থায় রাখা হয়েছে।

    ইম্ফলের প্রধানত মেইতেই অধ্যুষিত ভ্যালি অঞ্চলে প্রেসিডেন্টস রুল প্রত্যাহারের দাবি প্রবল হলেও কুকি অধ্যুষিত পার্বত্য জেলাগুলিতে অনেকে এর অব্যাহত থাকার পক্ষপাতী। তাঁদের মতে, আলাদা প্রশাসনিক কাঠামো গঠনের আগে নির্বাচিত সরকারে ফেরা নিরাপদ নয়।রাজ্যে বিজেপির রাজনৈতিক শক্তি দ্রুত ক্ষয়ে যাচ্ছে। একসময় ৪৪ বিধায়কের সমর্থন দাবি করা দলটি এখন ভাঙনের মুখে। ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি মণিপুরের দুটি আসনই কংগ্রেসের কাছে হেরে যায়। হিংসায়  পর সাতজন কুকি বিজেপি বিধায়ক সমর্থন প্রত্যাহার করেছেন। সম্প্রতি বিজেপির দুই প্রাক্তন বিধায়ক এল. রাধাকিশোর সিংহ ও ওয়াই. সূরচন্দ্র সিংহ কংগ্রেসে যোগ দেন।

    তিনবারের বিধায়ক সূরচন্দ্র সিংহ বিজেপির বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ করে বলেন, দলটি “মণিপুরের মানুষকে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে” এবং রাজ্য প্রশাসন কার্যত “কেন্দ্রের হাতের পুতুল”। তাঁর কথায়: ''ক্রমশ মনে হচ্ছে মোদী নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার মণিপুরকে ভারতের অংশ বলেই মনে করে না।” প্রায় ২৬০ জনের বেশি মানুষ এই হিংসায়  প্রাণ হারিয়েছেন। এখনও পর্যন্ত হাজার হাজার মানুষ ত্রাণ শিবিরে জীবনযাপন করছেন। প্রধানমন্ত্রী মোদীর সফরের পরও বাস্তবে পরিস্থিতির কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়নি।

    মেইতেই ও কুকি সম্প্রদায় কার্যত বিভক্ত, তাদের মাঝে ‘বাফার জোন’ তৈরি হয়েছে, যা নিরাপত্তা বাহিনী পাহারা দিচ্ছে। ফলে সামাজিক বিভাজন আরও গভীর হচ্ছে। এখন দেখার বিষয়, দিল্লি সফরে বীরেন সিংহ কতটা সফল হন এবং কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্ব মণিপুরের জনমত ও রাজনৈতিক সংকটের প্রতি কীভাবে সাড়া দেয়। প্রেসিডেন্টস রুল অব্যাহত থাকবে নাকি নির্বাচিত সরকার ফের ক্ষমতায় আসবে—এই প্রশ্নে রাজ্যের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে।
  • Link to this news (আজকাল)