আজকাল ওয়েবডেস্ক: মহারাষ্ট্রের জলগাঁও জেলার জামনার শহরে এক মুসলিম যুবকের নির্মম হত্যাকাণ্ডের তদন্তে চাঞ্চল্যকর মোড় নিয়েছে। এই ঘটনায় তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তাদেরই দেখা গেছে হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ‘শিব প্রতিস্থান হিন্দুস্থান’-এর এক মিছিলে অংশ নিতে—যে সংগঠনের সদস্যদের বিরুদ্ধেই ওই মুসলিম যুবক সুলেমান পাঠানকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে।
ঘটনাটি ঘটেছে আগস্ট মাসে। ২০ বছর বয়সি সুলেমান পাঠান এক হিন্দু মেয়ের সঙ্গে ক্যাফেতে বসে কথা বলছিলেন। সেই সময় স্থানীয় কয়েকজন হিন্দু যুবক তাঁকে টেনে বাইরে বের করে নিয়ে যায়, মারধর করে, তারপর গাড়িতে তুলে তাঁর গ্রামে নিয়ে গিয়ে ফের আক্রমণ চালায়। এমনকি তাঁর পরিবারের উপরও হামলা হয়। অভিযোগ, এই হামলাকারীদের অনেকেই ‘শিব প্রতিস্থান হিন্দুস্থান’-এর সঙ্গে যুক্ত।
এই ঘটনার তদন্ত করছিলেন জামনার থানার পুলিশ পরিদর্শক মুরলিধর কাসার। পরে একটি বিশেষ তদন্ত দল (SIT) গঠিত হয়। কিন্তু দুর্গাপূজার দশমীতে দেখা যায়, ওই কাসারসহ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা ‘শিব প্রতিস্থান’-এর বিশাল শোভাযাত্রায় অংশ নিয়েছেন। তাঁদের মাথায় গেরুয়া পাগড়ি, হাতে গেরুয়া পতাকা, এবং মিছিলে সামনের সারিতে থেকে অন্য সদস্যদের অভ্যর্থনা করছেন। এমনকি তাঁরা মিছিলে তিলক ও ফুল ছড়িয়ে স্বাগত জানিয়েছেন।
মিছিলটিতে হাজার হাজার মানুষ, নারী-পুরুষ ও শিশু, হাতে তলোয়ার, ত্রিশূল, লাঠি নিয়ে হাঁটছিলেন। অনেকেই স্লোগান দিচ্ছিল, “দুর্গা বন, কালী বন, কখনো বুরখাওয়ালি বনো না”—যা স্পষ্টভাবে মুসলিমবিরোধী। মিছিলে বহন করা পতাকায় ভারতের পাশাপাশি দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অংশবিশেষকে গেরুয়া রঙে দেখানো হয়—‘অখণ্ড ভারত’-এর হিন্দুত্ববাদী স্বপ্নের প্রতীক হিসেবে।
এই ঘটনায় স্থানীয় অধিকারকর্মী আশফাক আহমেদ পটেল মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডনবিশ ও জলগাঁও জেলার পুলিশ সুপার মহেশ্বর রেড্ডিকে চিঠি লিখে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, শিব প্রতিস্থান হিন্দুস্থান একটি “সংবিধান বিরোধী ও সাম্প্রদায়িক সংগঠন”, যারা ভারতের তিরঙ্গা পতাকাকে জাতীয় পতাকা হিসেবে মানতে অস্বীকার করেছে এবং হিন্দু রাষ্ট্রের দাবি তুলছে। পটেল জানিয়েছেন, এই সংগঠন এর আগেও রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা উস্কে দিয়েছে।
সুলেমান পাঠানের পরিবার এই ঘটনাকে দেখে গভীরভাবে মর্মাহত। তাঁদের অভিযোগ, পুলিশ শুরু থেকেই পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য নেওয়া হয়নি, অনেক অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। পাঠানের আত্মীয় মেহবুব খান বলেছেন, “আমরা যখন থানায় গিয়ে কিছু নাম জানিয়েছিলাম, পুলিশ বলেছিল প্রমাণ আনুন—এটা কি ভুক্তভোগী পরিবারের কাজ?”
এখনও পর্যন্ত এই মামলায় চার্জশিট দাখিল হয়নি। পুলিশের এই মিছিলে অংশগ্রহণ দেখে পাঠান পরিবার নিশ্চিত হয়েছে যে ন্যায়বিচার পাওয়া কঠিন হবে। তাঁরা এখন আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, যাতে তদন্ত আদালতের তত্ত্বাবধানে হয়।
এদিকে রাজ্য সরকার ও মহারাষ্ট্র পুলিশের পক্ষ থেকে এই ঘটনার উপর কোনও সরকারি প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে ঘটনাটি প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা ও আইনের শাসনের প্রতি নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে, বিশেষত যখন ন্যায়বিচারের আশায় এক মুসলিম পরিবার ক্রমশ আশা হারাচ্ছে।