• অবিরাম বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গ, মৃত্যু হয়েছে ১৫ জনের, উদ্ধারকার্যে নামল সেনা...
    আজকাল | ০৬ অক্টোবর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: শনিবার থেকে দার্জিলিং সহ উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে অবিরাম বৃষ্টিতে পার্বত্য অঞ্চলে নেমেছে ভয়াবহ বিপর্যয়। শনিবার রাতভর ভারী বর্ষণ ও ধসের ফলে ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের বিভিন্ন অংশে রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ফলে, সিকিম ও উত্তরবঙ্গের সঙ্গে যোগাযোগ প্রায় সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

    জানা গিয়েছে, মিরিক ও দুধিয়া সংযোগকারী লোহার সেতুও ভেঙে পড়েছে। এই সেতু দার্জিলিং বিভাগের রাজ্য সড়কের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সেনা নিয়ন্ত্রিত সেতু ভেঙে যাওয়ার ফলে শিলিগুড়ি শহর থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে ওপারে থাকা প্রায় ৩০টি গ্রাম। ফলে মিরিক থেকে শিলিগুড়ির মধ্যে কোনও সরাসরি যোগাযোগ সম্ভব হচ্ছে না। 

    একইসঙ্গে দার্জিলিং-শিলিগুড়ি রোডের হিলকার্ট রোড, দিলারাম ও হুইটসেল খোলা (কার্শিয়াং) এলাকায় বড় ধস নেমেছে। রোহিনী রোডেও একাধিক স্থানে গাড়ি চলাচল বন্ধ। দুধিয়া সেতুতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কারণে আশেপাশের একাধিক গ্রাম যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। পাশাপাশি, পুলবাজার সেতুও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত, যার ফলে থানালাইন ও বিজনবাড়ি এলাকার সঙ্গে যোগাযোগ স্থগিত।

    এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত প্রায় ১৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। দার্জিলিংয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত মিরিকে ৯ জন, সুখিয়াতে ৪ জন, ও অন্যান্য অঞ্চল মিলিয়ে মোট ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছেন অনেকে। অন্যদিকে ভূমি ধসের কারণে মাটি চাপা রয়েছেন একাধিক। উদ্ধার কাজে নামানো হয়েছে সেনাবাহিনী। 

    পাশাপাশি বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের কর্মীরাও কাজ চালাচ্ছে। জলপাইগুড়ি, কলকাতা, এবং মালদা থেকে সিভিল ডিফেন্স ও এনডিআরএফের অতিরিক্ত দলকে ডাকা হয়েছে। দুধিয়াতে সেতু ভেঙে পড়ার কারণে এসএসবির ( SSB) ইঞ্জিনিয়ারেরা ড্রোনের মাধ্যমে পরিস্থিতি যাচাই করছেন। যাতায়াত স্বাভাবিক করতে ইতিমধ্যেই PWB আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে। একাধিক গুরুত্বপুর্ন তথ্য আদান প্রদান হয়েছে বলে খবর মিলেছে সূত্র মারফত।

    প্রশাসন উদ্ধারকাজ শুরু করলেও, অবিরাম বৃষ্টিপাতের কারণে উদ্ধার কাজ ব্যাহত হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, তিস্তা নদীর জলস্তর দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা অতীতের ভয়াবহ বন্যার স্মৃতি ফিরিয়ে আনছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। জরুরি পরিষেবা, পর্যটক এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের ঘরের ভিতরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পাহাড়ে বৃষ্টির তীব্রতা অব্যাহত থাকতে পারে।

    অন্যদিকে, এই পরিস্থিতিতে পুজোর ছুটিতে পাহাড়ে আটকে পরা পর্যটকদের ফেরার জন্য বিশেষ বাসের ব্যবস্থা করেছে উত্তরবঙ্গ পরিবহন সংস্থা। রাজ্যের পরিবহন মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী নিজে সেকথা জানিয়েছেন। সোমবার উত্তরবঙ্গের পরিস্থিতি পরিদর্শনে আসার কথা রয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির। মুখ্যমন্ত্রী রবিবার দুপুরে একটি পোস্ট করেন সোশ্যাল মিডিয়ায়।

    সেখানে তিনি লেখেন, উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা বন্যাপ্লাবিত হওয়ায় আমি গভীর ভাবে উদ্বিগ্ন। কাল রাত্রে উত্তরবঙ্গে কয়েক ঘন্টার বিপুল বৃষ্টি হওয়ায় এবং বাইরে থেকে নদীর জল আমাদের রাজ্যে বিপুল পরিমাণ এসে পড়ায়  বিশেষত উত্তরবঙ্গে উদ্বেগজনক বন্যা পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে। অকস্মাৎ  এই বিপুল বৃষ্টিতে এবং নদীর বন্যায় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আমাদের কয়েকজন ভাই-বোন আমরা হারিয়েছি বলে খবর এসেছে।  এই দু:সংবাদে আমি বিপুলভাবে মর্মাহত। প্রত্যেক মৃত ব্যক্তির পরিবারবর্গকে আমি আমার আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি।

    প্রত্যেক পরিবারের  কাছে আমাদের সহায়তা অবিলম্বে পৌঁছে যাবে। জলের ভয়ংকর তোড়ে দুটি লোহার সেতু ভেঙ্গে গেছে,  প্রচুর রাস্তার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে, বিশেষত মিরিক, দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি, মাটিগাড়া এবং আলিপুরদুয়ার  থেকে  আমাদের কাছে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতির খবর আসছে। আমি গতকাল রাত থেকেই পরিস্থিতির উপরে টানা নজর রেখেছি। ইতিমধ্যেই মুখ্য সচিব, পুলিশের ডিজি, উত্তরবঙ্গের জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারদের সঙ্গে ভার্চুয়াল মিটিং করেছি।

    আমি সর্বক্ষণ সকলের সঙ্গে যোগাযোগে আছি এবং এই সূত্রে আগামীকাল নিজেই মুখ্যসচিব-কে নিয়ে উত্তরবঙ্গ যাচ্ছি। ইতিমধ্যে উত্তরবঙ্গে পর্যটকদের প্রতি আমাদের পরামর্শ, যে যেখানে আছেন সেখানেই থাকুন। আমাদের পুলিশ আপনাদের উদ্ধার করে নেবে। এই উদ্ধার সংক্রান্ত খরচ আমাদের এবং পর্যটকদের এই বাবদ উদ্বিগ্ন না হবার জন্য অনুরোধ করছি। প্রাকৃতিক অবস্থানের জন্য মিরিকের মতো কিছু কিছু জায়গা বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যদিও আরো অনেক এলাকা আমাদের  নজরে আছে।

    আমি ব্যক্তিগতভাবে সব খবর রাখছি, প্রয়োজনমতো নির্দেশ দিচ্ছি এবং পরিস্থিতি  মোকাবিলার ব্যবস্থা করছি। আমাদের অফিসার ও পুলিশ সর্বত্র ও সকল ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের কাছে সকল সহায়তা নিয়ে  পৌঁছে যাবে। রাজ্য সদর দপ্তর এবং জেলাগুলি ২৪ ঘন্টা কন্ট্রোল রুম খুলে রাখছে। যে কোন প্রয়োজনে আমাদের নবান্নে বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করুন। 

    যোগাযোগের ফোন নম্বর: ০০৯১- ২২১৪-৩৫২৬/ ০০৯১- ২২৫৩-৫১৮৫

    টোল ফ্রি নম্বর: ৯১-৮৬৯৭৯-৮১০৭০
  • Link to this news (আজকাল)