• হ্যাম রেডিওই দেখাল ‘কামাল’, শ্রীরামপুরের হাসপাতাল থেকে উত্তরপ্রদেশে পরিবারের কাছে ফিরলেন মহিলা...
    আজকাল | ০৬ অক্টোবর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: পুজোর আগে ঘরে ফিরল ‘ঘরের লক্ষী’। দেবীপক্ষের এই সময়টায় যেন অলৌকিকভাবেই নিজের বাড়ি ফিরে গেলেন লক্ষী নামের এক মানসিক ভারসাম্যহীন মহিলা। শ্রীরামপুরের ওয়ালস হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ থাকায় এবং নিজের নাম-ঠিকানা বলতে না পারায় ফিরে যেতে পারছিলেন না বাড়ি।

    হাসপাতালের অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার বাসুদেব জোরদার জানান, গত মাসের ২ তারিখে শ্রীরামপুর থানার অন্তর্গত বম্বে রোডের ধারে এক পুত্রসন্তানের জন্ম দেন ওই মহিলা। স্থানীয় পুলিশ তাঁকে ও নবজাতককে অজ্ঞাত পরিচয় হিসেবে হাসপাতালে ভর্তি করায়। তারপর থেকেই চিকিৎসক, নার্স ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সকলে মিলে চেষ্টা করছিলেন, কীভাবে মা ও সন্তানকে তাঁদের পরিবারে ফেরানো যায়।

    শেষমেশ বিষয়টি জানানো হয় ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিও ক্লাবকে। চ্যালেঞ্জ ছিল বড় — লক্ষীপুজোর আগেই ‘লক্ষী’কে বাড়ি ফেরাতে হবে। আর সেই মিরাকলই ঘটল। হ্যাম রেডিও ক্লাবের সদস্যদের উদ্যোগে যোগাযোগ সম্ভব হয় উত্তরপ্রদেশের মুজাফরপুর জেলার পূরণেবানা গ্রামের সঙ্গে। জানা যায়, সেখানেই রয়েছে মহিলার বাড়ি। তাঁর পরিবারে রয়েছে স্বামী ও তিন পুত্রের পরিবার।

    জানা যায়, প্রায় চার মাস আগে গর্ভবতী অবস্থায় নিখোঁজ হয়েছিলেন তিনি। গর্ভধারণের পর মানসিক আঘাত ও লজ্জা থেকেই ভারসাম্য হারান বলে পরিবার জানিয়েছে। অবশেষে পুত্রসন্তানসহ বাড়ি ফেরার পথ সুগম হয়েছে তাঁর। লক্ষীপুজোর আগে এই সুখবর যেন আরও একবার প্রমাণ করল— ‘মানুষের মধ্যে দেবত্বই বড়’। মানুষ লক্ষীকে লক্ষীপুজোর আগে ঘরে ফিরিয়ে দিতে পেরে খুশিতে আত্মহারা হাসপাতাল কর্মীরা।

    তবে হুগলিতে এই ধরনের ঘটনা প্রথম নয়। কিছুদিন আগে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন ব্যান্ডেলের কেওটা এলাকার বাসিন্দা বছর চল্লিশের রীতা দাস। তাঁদের নিকট আত্মীয় বলতে একমাত্র দিদি রীনা দাসের পরিবার। রীনার ছেলে বিকাশ চুঁচুড়া ব্রাঞ্চ স্কুলের শিক্ষিকা শুভ্রা ভট্টাচার্যের ছাত্র। ছাত্রের কাছে শুভ্রা দেবী জানতে পারেন তার মাসি হারিয়ে গেছেন। শুরু হয় খোঁজ। এরমধ্যে রাজস্থানের ঝুনঝুন থেকে একটি ফোন আসে রীতার দিদির কাছে।

    সেই সূত্র ধরে খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায় রাজস্থানের এক আশ্রমে রয়েছেন রীতা দাস। কিন্তু তাঁকে উদ্ধারের উপায় কি? হুগলি জেলা প্রশাসনের কাছে সহায়তা চাওয়া হয়। নির্বাচনের কাজে সবাই ব্যস্ত থাকায় কোনও পথ হয়নি। এক পুলিশকর্মী সুকুমার উপাধ্যায় এধরনের কাজে এগিয়ে আসেন সব সময়। তিনিও জানতে পেরে চেষ্টা করতে থাকেন।

    শ্রীরামপুরের বিজেপি প্রার্থীর মনোনয়নে চুঁচুড়ায় অতিরিক্ত জেলা শাসকের দপ্তরে আসেন রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী ভজনলাল শর্মা। ভজনলালের নিরাপত্তা রক্ষীদের বিষয়টি জানিয়ে সাহায্য চান সুকুমার। ফোন নম্বর দিয়ে যোগাযোগ করতে বলেন মুখ্যমন্ত্রীর পিএ। এদিকে শিক্ষিকা জেলা শাসক থেকে ওয়েলফেয়ার অফিসার সবার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কিন্তু মহিলাকে ফিরিয়ে আনতে বাধ সাধে নির্বাচনের ব্যস্ততা। অবশেষে চন্দননগর পুলিশ কমিশনার অমিত পি জাভালগির সঙ্গে দেখা করে বিষয়টি জানান শিক্ষিকা।

    কমিশনার আশ্বাস দেন এবং চুঁচুড়া থানার আইসিকে নির্দেশ দেন পুলিশ টিম পাঠাতে। আইসি রামেশ্বর ওঝার উদ্যোগে ১০ মে দুজন মহিলা পুলিশ কর্মী ও একজন কনস্টেবলকে রাজস্থানে পাঠানো হয়। বুধবার সকালে মানসিক ভারসাম্যহীন ওই মহিলাকে নিয়ে তারা ফিরে আসেন চুঁচুড়ায়। রাজস্থানে গিয়ে পুলিশের যাতে কোনও অসুবিধা না হয় তার জন্য লিলুয়ার এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। সকলের প্রচেষ্টায় হারিয়ে যাওয়া মহিলাকে বাড়ি ফিরে আসেন। 
  • Link to this news (আজকাল)