প্রকাশ মণ্ডল: শনিবার রাতের প্রবল বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত আলিপুরদুয়ার জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা। ভুটান পাহাড়ে অতি বৃষ্টির ফলে ফুলে ফেঁপে উঠেছে তোর্ষা নদী। রবিবার সকালে তোর্ষা নদীতে লাল সংকেত জারি করে সেচ দপ্তর। এদিন ভোর নাগাদ কালচিনি ব্লকের সুভাষিনী চা বাগানের তোর্ষা নদীর বাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হয় চা বাগানের বিস্তীর্ণ এলাকা। বাগানের নদী লাইন এলাকায় বাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হয়েছে ৩০টি বাড়ি। আতঙ্কে ঘর ছেড়ে পাশের এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা। এছাড়াও ক্ষতি হয়েছে জলদাপাড়া অভয়ারণ্যের বনাঞ্চল। জানা গিয়েছে এদিন জলদাপাড়া টুরিস্ট লজের সামনের হলং নদীর ওপর কাঠের সেতু ভেঙ্গে যায়। ফলে বনাঞ্চলের ভেতরে লজেই আটকে পড়েন প্রচুর পর্যটক। দিনভর নদীতে জলস্রোত না কমায়, রবিবার বিকেল নাগাদ জলদাপাড়া অভয়ারণ্যের কুনকি হাতির সাহায্যে পর্যটকদের উদ্ধারের কাজ শুরু করা হয়। এই কাজে দুটি কুনকি হাতিকে কাজে লাগানো হয়। এই পর্যটকরা সকলেই কলকাতার বাসিন্দা।
এদিন উদ্ধারের পর পর্যটক ডা: সিদ্ধার্থ এবং তানিয়া সেন বলেন, 'আমরা পুজোর ছুটিতে ডুয়ার্সের বনাঞ্চল ঘুরতে এসেছিলাম। বেশ আনন্দ করলাম। গতকাল থেকে বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। এদিন সকালে লজের সামনে থাকা কাঠের সেতু ভেঙে যাওয়ায় আমরা আটকে পড়ি। আজ আমাদের ফেরার কথা। কিন্তু নদী পারাপার না করতে পারায় খুব চিন্তিত ছিলাম। অবশেষে বনদপ্তর ও পুলিশ উদ্যোগ নিয়ে আমাদের উদ্ধার করেছে। হলং ব্রিজ ভেঙ্গে যাওয়ায় এই সমস্যা হয়েছে।'
এদিন জলদাপাড়া অভয়ারণ্য সিনিয়র ওয়াইল্ড লাইফ ওয়ার্ডেন রবিকান্ত ঝা বলেন, 'গতকাল রাতের প্রবল বৃষ্টিতে জলদাপাড়া অভয়ারণ্য সংলগ্ন এলাকা প্লাবিত হয়ে যায়। এখনো পর্যন্ত সকাল থেকে ৩টি এক শৃঙ্গ গণ্ডার তোর্ষা নদীতে ভেসে যাওয়ার খবর মিলেছে। এছাড়াও বেশ কয়েকটি সম্বর হরিন নদীতে ভেসে গিয়েছে।' এদিন জলে ভেসে বন্যপ্রাণের মৃত্যুর খবর শোনা গেলেও বনদপ্তরের তরফে জানানো হয়েছে তাদের কাছে মৃত্যুর খবর নেই। যে সমস্ত বন্যপ্রাণ নদীতে ভেসে গিয়েছে তাদের খোঁজ করা ছাড়াও বিষয়টির উপর নজর রাখা হচ্ছে বলে বনদপ্তরের আধিকারিকরা জানিয়েছেন। ধীরে ধীরে গন্ডার গুলিকে জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের জঙ্গলে ফিরিয়ে আনা হবে বলে তাঁরা জানান।
জানা গিয়েছে, ভুটান সরকারের পক্ষ থেকে টালা জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের তরফে একটি সতর্কবার্তা পাঠানো হয়েছে। সেখানে জানানো হয়েছে টালা জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বাঁধে অতিরিক্ত জল জমে গিয়েছে। ইতিমধ্যেই তাঁরা দুটো লকগেট খুলে দিয়েছেন। যার ফলে ২ নং রায়ডাক নদীতে জলস্রোত বেড়ে গিয়েছে। কুমারগ্রামের আরও কিছু এলাকায় নদীর জল ঢুকে পড়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জলমগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের ত্রাণ শিবিরে নিয়ে আসা হয়েছে। সেইসঙ্গে জানা গিয়েছে, জেলার শালকুমার, জলদাপাড়া এলাকায় বেশ কিছু পর্যটক আটকে রয়েছেন। ইতিমধ্যেই জেলা প্রশাসনিক তরফ থেকে তাঁদের উদ্ধার করার ব্যবস্থা করা হয়েছে।