বর্ণাঢ্য কার্নিভালে সেজে উঠল রেড রোড, বৃষ্টি মাথায় নিয়ে চলল নাচ, গান এবং পুজোর ট্যাবলো
দৈনিক স্টেটসম্যান | ০৬ অক্টোবর ২০২৫
রবিবার অনুষ্ঠিত হল বহু প্রতীক্ষিত পুজো কার্নিভাল। উৎসবের শেষ বেলায় আরও এক উৎসবের আয়োজন। এ বছর নবম বর্ষে পা দিল রেড রোডের পুজো কার্নিভাল। বৃষ্টি মাথায় নিয়েই অনুষ্ঠিত হয় পুজো কার্নিভাল। প্রায় ১১৩টি পুজো কমিটি এ বছর কার্নিভালে অংশ নিয়েছিল। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এদিন বিকেল ৪টের খানিক পরেই রেড রোডে উপস্থিত হন মুখ্যমন্ত্রী। সে সময় রেড রোড মুখরিত হয়ে ওঠে তাঁরই সৃষ্টি করা গান ‘পুজো এল’ দিয়ে। পুজো কমিটিগুলো তাদের ট্যাবলো নিয়ে হাজির হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও টলিউড থেকে রাজনীতি, খেলা থেকে সংস্কৃতি সকল জগতের মানুষ উপস্থিত ছিলেন কার্নিভালে। নৃত্যশিল্পী ডোনা গাঙ্গুলি এবং তাঁর দীক্ষামঞ্জরি ড্যান্স গ্রুপ উদ্বোধনী নৃত্য পরিবেশন করেন।
কড়া নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলা হয় রেড রোড এবং তার সংলগ্ন এলাকা। নামানো হয়েছিল অতিরিক্ত পুলিশ। উচ্চপদস্থ আধিকারিকরাও হাজির ছিলেন। প্রতিটি প্রতিমার সঙ্গে একজন করে কর্তব্যরত পুলিশ দায়িত্বে ছিলেন। প্রতিটি প্রতিমা নির্দিষ্ট দূরত্বে রাখা হয়েছিল। এদিন নাচ-গান, বাজনায় মুখরিত হয়ে ওঠে রেড রোড। আট থেকে আশির ভিড়ে দুর্গোৎসব শেষে আনন্দে মেতে ওঠে সকলে।
হাতিবাগান সর্বজনীন, শ্রীভূমি স্পোর্টিং, অজয় সংহতি, প্রতাপাদিত্য ত্রিকোণ পার্ক, ভবানীপুর ৭৫ পল্লি, দমদম তরুণ দলে পুজো কমিটির ট্যাবলো নজর কাড়ে। দক্ষিণ কলকাতা সর্বজনীনের পুজো কার্নিভালে নৃত্য পরিবেশন করেন অভিনেত্রী অপরাজিতা আঢ্য। আলিপুর বডিগার্ড লাইনস পুজোর ট্যাবলোর সঙ্গে নৃত্য করেন অভিনত্রী শ্রাবন্তী চট্টোপাদ্যায়। শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবের নৃত্যশিল্পীদের সঙ্গ দিয়েছেন টলিউড অভিনেতা অঙ্কুশ হাজরা, ঐন্দ্রিলা সেন এবং সোহম চক্রবর্তী।
মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন বলিউড অভিনেত্রী মিনাক্ষী শেষাদ্রী। রামমোহন সম্মিলনী, অজয় সংহতির মতো অসংখ্য পুজো কমিটি এদিন ট্যাবলো প্রদর্শন করেছে মুখ্যমন্ত্রীর গানে। বহু ট্যাবলোয় ফুটিয়ে তোলা হয় বাংলার কৃতিত্ব থেকে বাংলা ভাষার সম্মান। এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়, মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন, ফিরহাদ হাকিম,অরূপ বিশ্বাস, বাবুল সুপ্রিয়, সাংসদ জুন মালিয়া, বিধায়ক সায়ন্তিকা বন্দোপাধ্যায়, মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ, স্বরাষ্ট্রসচিব নন্দিনী চক্রবর্তী, কলকাতা পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা।
হাজির ছিলেন অভিনেতা অঙ্কুশ হাজরা, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, অভিনেত্রী শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়, যিশু সেনগুপ্ত, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়-সহ একাধিক টলি তারকা। পুজো কমিটিগুলিকে ২ মিনিট করে সময় দেওয়া হয়। প্রতিমা প্রদর্শন ও তাঁদের বার্তা প্রদর্শনের জন্যই প্রদান করা হয় এই সময়। বৃষ্টির ভ্রুকুটি উপেক্ষা করে পুজো উদ্যোক্তরা প্রতিমা ও ট্যাবলো সাজিয়ে হাজির হন। বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতকে এই কার্নিভালে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তাঁরাও কার্নিভালে উপস্থিত ছিলেন।
একাধিক ক্লাবের তরফে পারফরম্যান্স করেছেন সুদীপ্তা বন্দ্যোপাধ্যায়, তৃণা সাহা, ঐন্দ্রিলা সেন, অঙ্কুশ হাজরা, সোহম চক্রবর্তী সহ একাধিক টলি ও টেলি তারকারা। তাদের মঞ্চ থেকে উৎসাহ দিয়েছেন অরিন্দম শীল, হরনাথ চক্রবর্তী সহ একাধিক তারকারা। তবে এবারের কার্নিভালে সব থেকে আকর্ষণীয় ছিল রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের নৃত্য। তিনি গড়িযাহাট হিন্দুস্থান পার্ক পুজো কমিটির তরফ থেকে ‘আ মরি বাংলা ভাষা’-র তালে নৃত্য পরিবেশন করেছেন। সকলের নাচই মঞ্চ থেকে তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সঙ্গে তারকাদের সঙ্গে পা মেলান তিনি।
মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বৃষ্টি মাথায় নিয়েই এগিয়ে চলেছে পুজো কার্নিভাল। শুরুতে বৃষ্টি না হলেও অনুষ্ঠান এগোনোর সঙ্গে সঙ্গে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামে। বৃষ্টির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলে কার্নিভাল। ট্যাবলোর সঙ্গে বৃষ্টিতে ভিজে পারফর্ম করে বিভিন্ন পুজো কমিটির সদস্যরা। এই বৃষ্টির মধ্যেই সামনে এসেছে মন ভালো করা ছবি। রেনকোট পরে মুখ্যমন্ত্রীর হাতে উপহার তুলে দিলেন এক খুদে। যা পেয়ে খুশি মুখ্যমন্ত্রী। তিনিও আদরে ভরিয়ে একরত্তিকে।
চলতি বছর বৃষ্টির কথা মাথায় রেখে খোলা আকাশের নীচে বসার ব্যবস্থা করা হয়নি। রেড রোডে প্রায় ২০ হাজার দর্শক আসন করা হয়েছিল।প্রতাপাদিত্য ত্রিকোণ পার্ক, ভবানীপুর ৭৫ পল্লির পুজো শোভাযাত্রা নিয়ে কার্নিভালে অংশ নেয়। কুণাল ঘোষের পুজো বলে পরিচিত রামমোহন সম্মিলনীর শোভাযাত্রায় মুখ্যমন্ত্রীর গানে নৃত্য পরিবেশন করা হয়। হরিদেবপুর অজয় সংহতির বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় মুখ্যমন্ত্রীর লেখা এবং ইন্দ্রনীল সেনের গাওয়া গানে নৃত্য পরিবেশন করা হয়।
২০১৬ সালে প্রথম দুর্গাপুজো কার্নিভালের আয়োজন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০২৫ সাল পর্যন্ত ধরলে সব থেকে বেশি সংখ্যক পুজো কমিটি এ বারের কার্নিভালে অংশ নিয়েছে প্রায় ১১৩টি। ২০২৪ সালে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ছিল ৮৯। ২০২২ এবং ২০২৩ সালে প্রায় ১০০টি পুজোকমিটি রেড রোডের বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় অংশ নিয়েছিল।
রবিবার দুপুর ১২টা থেকে কার্নিভালের অনুষ্ঠান শেষ হওয়া পর্যন্ত চৌরঙ্গি রোড, জওহরলাল নেহরু রোড, ক্যাথিড্রাল রোড, কুইনসওয়ে, মেয়ো রোড, স্ট্র্যান্ড রোড, আরএন মুখার্জি রোড, হেয়ার স্ট্রিট ইত্যাদিতে গাড়ি রাখা নিষিদ্ধ ছিল। প্রতি বছর রেড রোড সেজে ওঠে আলো, রঙ, সুর ও ঢাকের তালে। পুজো উদ্যোক্তারা রেড রোডের বুকে তাঁদের থিম ও দেবীর শিল্পসজ্জা নিয়ে হাজির হন। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি।