• মাছের পেটে ছোট বঁড়শি! খেতে গিয়ে অল্পের জন্য প্রাণরক্ষা যুবকের
    প্রতিদিন | ০৬ অক্টোবর ২০২৫
  • রমণী বিশ্বাস, তেহট্ট: পাড়াপড়শিকে দেখিয়ে বঁড়শিতে মাছ গাঁথার সেই বিখ্যাত গানের কথা ভোলেনি কেউই। কিন্তু বঁড়শি গাঁথা মাছের যে কী অসীম বিপদ, খেতে গিয়ে তা বেশ টের পেলেন তেহট্টের যুবক। রবিবার, ছুটির দিন বাজার থেকে মাছ কিনেছিলেন। তা রান্না করে খেতে গিয়েই প্রায় মৃত্যুমুখে পড়ছিলেন। মাছের শরীরে পাওয়া গেল বঁড়শির অংশ। না দেখে গিলে ফেললে ভয়াবহ বিপদ হতো। এ যাত্রা অল্পের জন্যই রক্ষা পেলেন ওই যুবক।

    জানা গিয়েছে, তেহট্টের বেতাই এলাকার কয়েকজন যুবক রবিবার অফিস ছুটি থাকায় সকলে মিলে বাজারে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে কাঠ মাছ, যা ল্যাটামাছ বলে বেশি পরিচিত, তা কিনে আনেন। মাছ কাটার পর রান্না করে বন্ধুরা মিলে যখন খেতে বসেন, তখন তাঁদের মধ্যে এক যুবকের নজরে পড়ে বিষয়টি। মাছের মাথা খাওয়ার সময় দাঁতে শক্ত একটা কিছু অনুভব করেন তিনি। তৎক্ষণাৎ সেটি মুখ থেকে বের করে দেখে বুঝতে পারেন, একটি বঁড়শি গাঁথা রয়েছে তাতে। পরবর্তীতে আরও কয়েকটি মাছের মাথা পরীক্ষা করে দেখা যায়, এভাবেই বঁড়শিগুলি মাছের শরীরে গেঁথে রয়েছে। মাছ কাটার সময় তা কোনওভাবেই নজরে পড়া সম্ভব নয়।

    পেশায় শিক্ষক ওই যুবক জানান, ”স্থানীয় বাজার থেকে বড় মাপের জ্যান্ত ল্যাটামাছ দেখে লোভ সামলাতে না পেরে ওগুলো কিনেছিলাম। এখন বর্ষার সময় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যাচ্ছে বাজারে। তা বেশ সুস্বাদু এবং প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা। এই মাছগুলি বাণিজ্যিকভাবে রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে চাষ করা নয়। এর সঙ্গে অন্যান্য কিছু প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা ল্যাটামাছ কিনেছিলাম। কিন্তু কাকতালীয়ভাবে ল্যাটা মাছগুলির মধ্যে বঁড়শি মিলেছে। আমার ধারণা, বঁড়শিতে আধার দিয়ে মাছগুলি ধরা হয়েছে। এবং বঁড়শিগুলি বের না করে তার গোড়া থেকে সুতো কেটে আরও সুন্দরভাবে মাছের মাংসের ভিতরে গেঁথে দেওয়া হয়েছে, যাতে এই মাছগুলি ক্রেতারা কিনতে এসে বুঝতে না পারেন যে বঁড়শি দিয়ে ধরা মাছ। এই মৎস্যজীবীদের সামান্য ভুলের জন্য আমাদের বড় বিপদ ঘটতে বসেছিল।”

    এক মৎস্যজীবী জানান, এবছর পর্যাপ্ত পরিমাণে বৃষ্টি হওয়ায় বিভিন্ন প্রজাতির যেমন ল্যাটা, জিওল, মাগুর, কইমাছ-সহ অন্যান্য বেশ কিছু প্রজাতির মাছ বঁড়শি দিয়ে ধরা হচ্ছে। এবং সেই মাছগুলি জ্যান্ত রাখতে বঁড়শি না খুলে সুতো কেটে নিয়ে তা মাছের মধ্যে এমনভাবে গেঁথে দেওয়া হচ্ছে যে মাছ কাটার সময় ধরা পড়ছে না। খাওয়ার সময় দাঁতে বাঁধছে। এই ধরনের মাছ খেতে গিয়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকছে।

    বেতাই মৎস্য সমবায় সমিতির সম্পাদক বিষ্ণু হালদার জানান, ”এলাকার এক শ্রেণির মানুষ ও মুষ্টিমেয় কয়েকজন মৎস্যজীবী বঁড়শি দিয়ে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ধরে মাছের মুখ থেকে বঁড়শি না খুলে বাজারের আড়তে বিক্রি করছেন। সেই মাছ ক্রেতারা বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন। রান্না করে খেতে গিয়ে সেই বঁড়শি উদ্ধার হচ্ছে। বাজারের মৎস্য ব্যবসায়ীদের বলব, এ ধরনের মাছ বিক্রি থেকে তাঁরা যেন বিরত থাকেন। পাশাপাশি সাধারণ ক্রেতাদের বলব, সতর্কতামূলক হিসাবে তাঁরা যেন মাছগুলি কাটার সময় ভালো করে দেখে পরিষ্কার করে নেবেন। দুর্ঘটনা বলে কয়ে আসে না। সম্পাদক হিসেবে আমিও বিষয়টির উপর নজর রাখছি।”
  • Link to this news (প্রতিদিন)